আম্বানি, আদানি থেকে শুরু করে টাটা, ভারতের পরিচিত এবং আলোচিত অধিকাংশ সংস্থাই এখন সরাসরি রিটেল ব্যবসায় নেমে পড়েছে। অর্থাৎ, নিত্য ব্যবহার্য জিনিসপত্রের ব্যবসায় তারা যুক্ত হয়েছে। চাল-ডাল-আলু থেকে নুন-মরিচ সমস্ত ব্যবসাতেই দেখা যাচ্ছে এই সংস্থাগুলিকে। প্রায় প্রতিটি সংস্থারই আছে রিটেল চেন। যার মাধ্যমে কৃষকের কাছ থেকে পণ্য নিয়ে, ব্র্যান্ডের লোগো বসিয়ে বাজারে পৌঁছে দিচ্ছে এই সংস্থাগুলি। কোনো কোনো সংস্থা নিজস্ব রিটেল চেনের মাধ্যমে সরাসরি তা বাজারে বিক্রি করছে।
মজা হলো, এই প্রতিটি সংস্থার সঙ্গেই ভোটের সম্পর্ক আছে। শাসক-বিরোধী সব দলকেই কম-বেশি অর্থ সাহায্য করতে হয় এই সংস্থাগুলিকে। কোন বাণিজ্যিক সংস্থা কোন রাজনৈতিক দলের ঘনিষ্ঠ তা-ও এখন গোপন নয়। বছর বছর কোন সংস্থা কোন রাজনৈতিক দলকে কত টাকা সাহায্য করে, তা-ও একরকম স্পষ্ট। শোনা যায়, ভোটের সময় এই অর্থের পরিমাণ বহু গুণ বেড়ে যায়। এবং এই অর্থের পুরো অঙ্কটি জানাও যায় না। খাতায় কলমে যেটুকু জানা যায়, তাতে একটি বিষয় স্পষ্ট-- ভোটের বছরে বাণিজ্যিক সংস্থাগুলির উপর অর্থ-সাহায্যের চাপ বেশি থাকে।
কোনো কোনো বিশেষজ্ঞের বক্তব্য, অতিরিক্ত এই খরচ বাজার থেকে তুলে নেওয়ার চেষ্টা করে বাণিজ্যিক সংস্থাগুলি। যে কারণে, ভোটের আগে আচমকাই বাজারে জিনিসপত্রের দাম বাড়তে শুরু করে। এবছরের নির্বাচনের দিকেই তাকানো যাক। আর এক থেকে দেড়মাসের মধ্যে শুরু হবে নির্বাচন। তার ঠিক আগে, বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম ধীরে ধীরে বাড়তে শুরু করেছে। দুই সপ্তাহ আগেও আলুর দাম যেখানে প্রতি কেজি ২০ টাকা ছিল, আচমকাই তা এখন ৪০ টাকার আশপাশে পৌঁছে গেছে। পেঁয়াজের দামও এখন ৪০ টাকা প্রতি কেজির আশপাশে। শাক-সবজির দাম গত এক সপ্তাহে চোখে পড়ার মতো বেড়েছে। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, নির্বাচন যত এগিয়ে আসবে, এই দামও তত চড়তে থাকবে। কিন্তু তা এমন পর্যায়ে পৌঁছাবে না, যা নিয়ে হইচই হতে পারে। জিনিসের দাম সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছায় নির্বাচনের ঠিক পরে। উল্লেখ্য, অটলবিহারী বাজপেয়ী যে সময় প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, সে সময় ভোটের ঠিক পরে পেঁয়াজের দাম বাড়তে বাড়তে ১০০ টাকা ছাড়িয়ে গেছিল। পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছেছিল যে সরকার হস্তক্ষেপ করতে বাধ্য হয়েছিল।
ভারতের একটি চালু লব্জ-- 'ভোট পুজো'। কারণ, ভোটকে একরকম উৎসবের মতোই গণ্য করা হয় এই দেশে। ফলে ভোটের মতোই বিভিন্ন রাজ্যে বিভিন্ন পুজোর সময় বাজার 'আগুন' হতে শুরু করে। পশ্চিমবঙ্গে দুর্গাপুজোর মরশুমে জিনিসপত্রের দাম সবচেয়ে চড়া থাকে। এর সবচেয়ে বড় কারণ, দুর্গাপুজোর সময় ভালো-মন্দ খাওয়ার প্রবণতা বেশি থাকে। পুজোয় ব্যবহৃত কোনো কোনো জিনিস, যেমন ফল, ফুলের দাম দশ গুণ পর্যন্ত বেড়ে যায়। মুম্বইয়ে এই একই ঘটনা ঘটে গণেশ চতুর্থীর সময়। দিল্লিতে দেওয়ালির বাজারে দাম 'ছেঁকা' মারে। ওড়িশায় ঠিক সেভাবেই বাজার চড়ে জগন্নাথের রথের সময়।
ভারতীয় রিটেল বাজার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা করেছেন কার্ডিফ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইন্দ্রজিৎ রায়। ইন্দ্রজিৎ মনে করেন, ''ভোটের সময় জিনিসপত্রের দাম বাড়া একটি খুব ইউনিক বা মজার ঘটনা। পৃথিবীর সব দেশে এমনটা ঘটে না। আরো মজার বিষয় হলো, এ নিয়ে সব তথ্যও পাওয়া যায় না। বাণিজ্যিক সংস্থাগুলি রাজনৈতিক দলগুলিকে কত টাকা দিচ্ছে, তা স্পষ্ট করে জানাতে চায় না। প্রকাশ্যে যা আসে, তার চেয়ে অনেক বেশি টাকা তাদের দিতে হয়। ভারতের মতো বড় আয়তনের দেশে এই অর্থের মোট অঙ্ক বিপুল। এবং সে কারণেই এর সরাসরি প্রভাব বাজারের উপর এসে পড়ে।''