রোজা নিয়ে ইনফ্লুয়েন্সারদের ভূমিকার ভালো-মন্দ
১৩ মার্চ ২০২৪তাদের এমন আচরণ ভোগবাদীতা ছড়াচ্ছে বলে মনে করছেন সমালোচকদের অনেকেই৷ আবার কেউ কেউ বিষয়টি ইতিবাচকভাবে দেখছেন৷ তারা মনে করছেন, সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তনের শক্তি হিসেবে কাজ করতে পারেন এই ইনফ্লুয়েন্সারেরা৷
সমাজ জীবনের সবক্ষেত্রেই লেগেছে নতুন প্রযুক্তির ছোঁয়া৷ মুসলমানদের মাসব্যাপী রোজার মাসও তার ব্যতিক্রম নয়৷ যেমন মোবাইল ফোনে ব্যবহারের জন্য নতুন নতুন অ্যাপ তৈরি হচ্ছে৷ এসব অ্যাপের মাধ্যমে নামাজের সময়ের জন্য অ্যালার্ম দেওয়া থেকে শুরু করে দানের কাজও করছেন অনেকে৷ তবে রমাজান মাসে প্রযুক্তির ব্যবহার নিয়ে তৈরি হয়েছে বিতর্ক৷ আর বিতর্কের কেন্দ্রে রয়েছে ইনফ্লুয়েন্সারেরা৷
বিষয়টি আরো বেশি আলোচনায় আসে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মানুষের ইন্টারনেট ব্যবহারের প্রবণতা দেখে৷ যেমন আরব আমিরাতের ৯৯ ভাগ মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করেন৷ জার্মানিতে এই সংখ্যা ৯৩ শতাংশ৷
পরিসংখ্যান বলছে, রোজার সময় মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ যেমন সৌদি আরব, আরব আমিরাত, কাতারে মোবাইল ফোনে সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারের হার বৃদ্ধি পায়৷
তাছাড়া রমজানে অনলাইনে শপিংয়ের পরিমাণও বাড়ে৷ এই মাসে উপহার দেওয়া-নেওয়া বাড়ে আর বাড়ে কাপড়চোপড় কেনাকাটা৷
রমজানে ইনফ্লুয়েন্সারদের ভুমিকা
ওয়েলস বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক গ্যারি বান্টের মতে, রমজান মাসে ইনফ্লুয়েন্সাররা যে ধরনের থিম তৈরি করে থাকেন তার মধ্যে ধর্মীয় বিষয়ের সাথে বিভিন্ন ধরনের পণ্য সামগ্রীর বিষয়ও দেখা যায়৷ তিনি জানান, অন্যান্য সেক্টরের ইনফ্লুয়েন্সারদের মতো মুসলিম ইনফ্লুয়েন্সাররা নিজেদের পণ্য বাজারজাতকরণে কিংবা অন্য প্রতিষ্ঠানের স্পন্সর হয়ে থিম তৈরি করছে৷
ডিজিটাল মিডিয়া ব্যবহারের ভালো দিকও দেখছেন তিনি৷ বলেন, ‘‘ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের বিকাশের ফলে মধ্যপ্রাচ্যে ইনফ্লুয়েন্সারদের কার্যক্রম বাড়ার কারণে সমাজে ডিজিটাল ডিভাইড কমে এসেছে৷’’
ইনফ্লুয়েন্সারেরা যেসব জনপ্রিয় বিষয় নিয়ে সরব তার মধ্যে রয়েছে রাজকীয় ইফতারের আয়োজন, কিংবা বিভিন্ন ধরনের সৌন্দর্যবর্ধক ও ফ্যাশনের প্রচারণা৷ আর খাবারের সাথে সংশ্লিষ্ট ইনফ্লুয়েন্সারেরা বিভিন্ন রেস্টুরেন্টের প্রচারণাও করে থাকেন৷
বড়দিন ক্রমেই ভোগবাদী হয়ে উঠছে বলে কোনো সমালোচক যেমন বলেন ঠিক একইভাবে অনেকের আশঙ্কা যে, রমজানও এমন বাণিজ্যিক হয়ে উঠছে৷
কাতারের হামাদ বিন খালিফা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক মার্ক এয়েন জোনস বলেন, ‘‘ইনফ্লুয়েন্সারদের মার্কেটিং ও রমজান এই দুইয়ের মাঝে এক ধরণের সম্পর্ক দেখা যাচ্ছে৷ যদিও রমজান মাস উপলক্ষ্য করে বাণিজ্যিক প্রসারের চেষ্টার বিষয়টি নতুন নয়৷ এখন যেটি হচ্ছে সেটি হলো নতুন এক ধরণ, আর এটি ক্রমেই বাড়ছে৷ আপনি যদি সামাজিক মাধ্যমের বিভিন্ন মন্তব্য পড়েন, দেখবেন অনেকেই এই বাণিজ্যিকীকরণের নিন্দা করছে৷''
সামাজিক পরিবর্তনের চেষ্টা
এতোসবের মাঝেও কোনো কোনো ইনফ্লুয়েন্সার রমজানে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে৷ এমনকি ধর্মীয় দিনগুলো কীভাবে পালন করতে হবে সেখানেও প্রভাব রাখছে তারা৷
যেমন, সামাজিক অনুষ্ঠানের জন্য আগে নারীরাই মূলত রান্না করতেন৷ কিন্তু এর পরিবর্তন ঘটছে৷ ‘‘আমরা দেখতে পাচ্ছি পরিবারের বাবা কিংবা পুরুষেরা শেফ ইনফ্লুয়েন্সারদের দেখে বাসায় রান্নাঘরে সাহায্য করছেন, যেটি কয়েক বছর আগেও দেখা যেত না,'' ২০২২ সালে এমন মন্তব্যই করেছিলেন দুবাইয়ের সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং এজেন্সির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলিদ স্মাইলি৷
এদিকে অনেক ইনফ্লুয়েন্সারই রমজানে যেন খাবার অপচয় না ঘটে সে বিষয়ে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন৷ উৎসবে খাবার অপচয় কমাতে লেবানিজ শেফ লেয়লা ফাথাল্লাহর সাথে কাজ করছে জাতিসংঘের পরিবেশ প্রোগ্রাম৷ মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ওমানে ‘বি মাইন্ডফুল' নামে একটি সামাজিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে ইনফ্লুয়েন্সারদের যুক্ত করা হয়েছে৷ কর্মসূচিটি মূলত রমজানে খাবার নিয়ে সচেতনতা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে৷
এদিকে বিশ্লেষকেরা বলছেন, বিভিন্ন ধর্মীয় ঐতিহ্যে তরুণদের যুক্ত করছেন ইনফ্লুয়েন্সারেরা৷ মুসলিম বিশ্বে সম্প্রতি নতুন প্রজন্মের ইনফ্লুয়েন্সার তৈরি হচ্ছে- এমনটাই বলছে ডিজিটাল ইসলাম অ্যান্ড মুসলিম মিলেনিয়ালস নামের এক গবেষণা৷ গবেষণাটি বলছে, এই তরুণেরা পশ্চিমা শিক্ষায় শিক্ষিত, ভালো গল্পকথক এবং ডিজিটাল মিডিয়ায় পারদর্শী৷
গবেষণায় এই প্রজন্মকে বলা হয় ‘গুমি'৷ প্রবন্ধটি বলছে, গুমি প্রজন্ম ধর্মীয় কার্যক্রম, যেমন কীভাবে নামাজ পড়তে হয়, রোজা রাখতে হয় এসব বিষয়েও আগ্রহী৷
গবেষণায় বলা হয়, ইনফ্লুয়েন্সারেরা শুধু রমজানের বাণিজ্যিকীকরণ করছে বা মানুষের অভ্যাসে পরিবর্তন আনছে তা নয়, তারা সাংস্কৃতিক পরিবর্তনেও এক ধরনের বড় ভূমিকা রাখছে৷
কাথরিন শায়ের/আরআর