বেঙ্গালুরুতে বাগান করতে সাহায্য করছেন কর্মহীন চাষি
৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪রমেশ ভারতের বেঙ্গালুরু শহরে প্রায় দশ বছর ধরে মালির কাজ করছেন৷ তিনি শহর থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে এক গ্রামের মানুষ৷ সেখানে তার আগের প্রজন্মের চাষের জমি ছিল৷ স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘‘আমাদের কুয়া শুকিয়ে গেল৷ তখন চাষের জন্য বৃষ্টির পানির উপর নির্ভর করতে হলো৷ আমার পরিবারের বাকি সদস্য এখনো গ্রামে থাকেন৷ আমি ভালো উপার্জনের জন্য এখানে চলে এসেছি৷''
এক বন্ধু তাকে ‘আর্বান মালি' নামের এক সামাজিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন৷ কাজ হারানো চাষি এবং শহরে থেকেও প্রকৃতি সম্পর্কে জ্ঞানী মানুষের মধ্যে মেলবন্ধন ঘটানো এই প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য৷ অনুরাধা ভরত নামে তার এক নিয়মিত গ্রাহক বেঙ্গালুরু শহরের উত্তরে গাছপালা ভরা এক এলাকায় বাস করেন৷ নিজের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘‘দিনে অনেক ঘণ্টা কাজ করতে হয়৷ আমার ছোট বাগানের প্রতি নজর দিতেই পারি না৷ চেয়েছিলাম অন্য কেউ সেটির যত্ন নিক, গাছপালা ভালোভাবে বেড়ে উঠুক৷ ইচ্ছামতো বাগান থেকে তাজা শাকসবজি তুলে আনতে পারি৷''
রমেশ নিজের মনে করেই তার বাগানের গাছপালার যত্ন নেন৷ ‘আর্বান মালি' স্বাস্থ্য ও পরিবেশের উপর প্রভাব যতটা সম্ভব কম রাখার চেষ্টা করে৷ যেমন শুধু প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে তৈরি সার ব্যবহার করা হয়৷ ‘আর্বান মালি'-র কর্মীরা শহরজুড়ে প্রায় এক হাজার বাগান গড়ে তুলে সেগুলির পরিচর্যা করেন৷ পথে অনেক বাধা এসেছে৷ প্রায়ই তাদের বাগান সম্পর্কে প্রচলিত ধারণা চ্যালেঞ্জ করতে হয়৷
বাসিন্দারা স্বাস্থ্য ও পরিবেশের তুলনায় নান্দনিকতাকেই বেশি গরুত্ব দেন৷ স্থানীয় গাছপালার বদলে বাইরে থেকে আনা চমকপ্রদ উদ্ভিদই তাদের বেশি পছন্দ৷ ‘আর্বান মালি'-র প্রতিষ্ঠাতা ড. বন্দনা কৃষ্ণমূর্তি দেশি বাগান আরো জনপ্রিয় করার জন্য এক অভিযান চালাচ্ছেন৷ তিনি মনে করেন, ‘‘আমাদের দাদি-নানীরা যে বাগান ব্যবহার করতেন, তাতে দেশজ উদ্ভিদের বৈচিত্র্য থাকতো৷ সর্দিকাশি, জ্বর কমানো থেকে শুরু করে চট করে সুস্বাদু ভাজার কোনো উপকরণ সেখানে পাওয়া যেত৷ এমন গাছপালা সেখানকার জলবায়ু ও পরিবেশে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে৷ তিন দিন ধরে এমন গাছে পানি না দিলেও সেগুলি দিব্যি বেঁচে থাকে ও বেড়ে ওঠে৷''
‘স্থানীয় স্বাস্থ্যগত ঐতিহ্যের পুনর্জীবনের ফাউন্ডেশন' স্থানীয় ভেষজ গাছপালার ব্যবহার আবার জনপ্রিয় করে তোলার উদ্যোগ নিচ্ছে৷ বন্দনা প্রায়ই তাদের নার্সারিতে গিয়ে নিজের গ্রাহকদের জন্য গাছপালা বেছে নেন৷
তিনি উদ্ভিদবিজ্ঞানী গণেশ বাবুর কাছ থেকে অনেক কিছু জানতে পারেন৷ গণেশ সেখানে ২০ বছর ধরে কাজ করছেন৷ ‘আর্বান মালি' হিসেবে রমেশ মনে করেন, ‘‘আমরা ডাক্তারের মতো বাগানের কাজ করি৷ কাজের অভাব হয় না, সহজেই আমার কাছে এসে যায়৷ কাজের সময়ও ভালো৷ আমি সত্যি আমার কাজ পছন্দ করি৷ শহরে আমি কারখানা ও বিভিন্ন কোম্পানিতে কাজ করে দেখেছি৷ মনে হয়, জীবনের এতগুলি বছর নষ্ট করে এত কম অর্জন করেছি৷ এখন আমি কঠিন পরিশ্রম করে নিজের পরিবারের জন্য উপার্জন করতে পারি৷’’
পরিবর্তনশীল জলবায়ুর কারণে ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের জন্য কাজ খোঁজা ন্যায্য পথ৷ এর ফলে গ্রামাঞ্চলের চাষি ও শহরের সমাজ দুই পক্ষেরই উপকার হচ্ছে৷
অনুশ্মিতা বসু/এসবি