কর্দোবার বাড়ির উঠানের বিশেষ আকর্ষণ
১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩বাসভবনের মাঝে সুন্দর করে সাজানো খোলা উঠান স্পেনের দক্ষিণে কর্দোবা শহরের গর্ব৷ ‘পাতিও' নামের সেই একচিলতে জায়গায় মানুষ জিরিয়ে নিতে পারেন৷ প্রতি বছর মে মাসে এক বিচারকমণ্ডলী শহরের সবচেয়ে সেরা পাতিও বাগান বেছে নেন৷
মার্চ মাসের শেষেই নাচো আলবারেস ও তাঁর পরিবার উঠান সাজানোর প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছিলেন৷ পাতিওর মালিক হিসেবে কার্মেন ইবানিয়েস বলেন, ‘‘আমরা গাছপালায় হাত না দেবার চেষ্টা করি৷ কিন্তু এবার সেগুলিতে একটু রংয়ের ছোঁয়া দিতে হবে৷ কয়েক দিন পর পর কিছু সার দেই, শুকনা পাতা সরিয়ে সঠিক জায়গায় গাছ রাখি৷ কয়েকটির বেশি সূর্যের আলো লাগে, কয়েকটি ছায়া পছন্দ করে৷ তখনই সঠিক আকার ও সুন্দর ফুলের বাহার পাওয়া যাবে৷ কোথায় কোন গাছ থাকা উচিত, সে বিষয়ে আমাদের ভালো ধারণা রয়েছে৷''
কর্দোবার প্রত্যেকটি উঠান আলো করে রাখে ‘গিতানিয়াস' বা ঝুলন্ত জেরানিয়াম গাছ৷ এই গাছের ফুল পাতিও সাজানো এবং প্রতিযোগিতা জয়ের ক্ষেত্রে চাবিকাঠি হিসেবে পরিচিত৷
প্রাচীরে ঘেরা শহরের পুরানো অংশের পাতিওর সংখ্যা তিন হাজারের বেশি৷ বছরের একটি দিন স্থানীয় মানুষ ‘পাতিও উৎসব' পালন করেন, যা বর্তমানে শহরের সবচেয়ে বড় উৎসব হয়ে উঠেছে৷ ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্য তালিকায়ও এই উৎসব স্থান পেয়েছে৷
অনেক পাতিওর মালিক প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে আগ্রহী বলেও সবার কাছে প্রয়োজনীয় গাছপালা থাকে না৷ ফ্লোরিস্ট হিসেবে রাফায়েল বারোন এক গার্ডেন সেন্টার থেকে সেগুলি সংগ্রহ করেন৷ সেখানে চিরায়ত গাছের বড় সংগ্রহ রয়েছে৷ প্রতিযোগিতা ছাড়াও এমন গাছের বাহার অত্যন্ত মনোরম৷ রাফায়েল মনে করেন, ‘‘কর্দোবার সমস্যা হলো, গ্রীষ্মে তাপমাত্রা খুব বেড়ে যায়৷ ফলে দুঃখের কারণ হলো, অনেক গাছ শুকিয়ে মরে যায়৷ গত কয়েক বছরে আমাদের অনেক কীটপতঙ্গের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হয়েছে৷''
তিনি নিজের উঠানে প্রায় এক হাজার ইউরো বিনিয়োগ করেছেন৷ কিন্তু পাতিও সবুজ গাছপালায় ভরিয়ে দেবার আগে রাফায়েলকে ফুলের টবে ঐতিহ্যবাহী ইন্ডিগো নীল রং লাগাতে হবে৷ রাফায়েল বারোন মনে করিয়ে দিলেন, ‘‘মুসলিমরা যথন স্পেনে এসেছিল, তখন তারা রোমান আমলের অ্যাট্রিয়াম বা অলিন্দগুলিকে সুন্দর বাগানভরা পাতিওতে রূপান্তরিত করেছিল৷ তারা পাম, কমলালেবু ও লেবু গাছও নতুন করে চালু করেছিল৷ মুসলিমরাই সেই সব গাছ এনেছিল৷ তারাই সাদা দেওয়ালে গাঢ় লাল রং দিয়ে পাতিওর নিজস্ব শৈলি চালু করেছিল৷ বাসায় পোকার উপদ্রব বন্ধ করতে তারা ইন্ডিগো নীল দিয়ে মূলত দরজা ও জানালার কাঠামো রং করতো৷''
অবশেষে সব অপেক্ষার অবসান হলো৷ জুরিমণ্ডলীর সদস্যরা পাতিও ঘুরে দেখতে বের হলেন৷ চলতি বছর ৫৫টি উঠান প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছে৷ কর্দোবার ‘ওল্ড টাউন' জুড়ে সেগুলি ছড়িয়ে রয়েছে৷ রাফায়েল বারোন বেশ কয়েকবার প্রথম পুরস্কার পেয়েছেন৷ কিন্তু এবারও কি ভাগ্য সদয় হবে? বিচারকরা প্রত্যেকটি খুঁটিনাটী বিষয় খতিয়ে দেখেন৷
বিচারকরা প্রত্যেকটি পাতিও পরিদর্শন করেছেন৷ এবার শুধু পয়েন্টের হিসাব করা বাকি৷ অবশেষে জল্পনাকল্পনার অবসান ঘটিয়ে তাঁদের সিদ্ধান্ত জানা গেল৷ রাফায়েল বারোনের পাতিওই আবার কর্দোবার সবচেয়ে সুন্দর উঠানের স্বীকৃতি পেলো৷ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে রাফায়েল বলেন, ‘‘আমি ফল নিয়ে সন্তুষ্ট ও খুশি৷ তারা সব পাতিও ঘুরে দেখে আমারটা বেছে নিয়েছেন৷ তাতে আমি গর্ব বোধ করছি৷ এবার আমরা কয়েক দিন ছুটি কাটাতে যাবো৷ কিন্তু সে সময়ে কাউকে গাছে পানি দিতে হবে৷''
প্রতিযোগিতার পর পাতিওগুলি আবার স্বাভাবিক ছন্দে ফিরে যাচ্ছে৷ মনোরম পরিবেশ উপভোগের পাশাপাশি কখনো সেখানে রাতভর পার্টি চলে৷
ডিট্রিশ ফন রিশটহোফেন/এসবি