প্লাস্টিক বর্জন করে পর্যটক আকর্ষণ
১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯আবর্জনার সমস্যা আজ অনেক দেশের জন্যই হুমকি৷ ইন্দোনেশিয়াও তার ব্যতিক্রম নয়৷ বিশেষ করে বালি দ্বীপে এই সমস্যা প্রকট হয়ে উঠেছে৷ কুটা উপকূলের মতো বালির পর্যটন এলাকা প্রায়ই বিশেষ করে প্লাস্টিক জঞ্জালে ভরে যায়৷ কারণ এখনো অনেক স্থানীয় মানুষ ও পর্যটক ঠিকমতো জঞ্জাল ফেলেন না৷
প্লাস্টিক বর্জ্য যখন হুমকি
প্লাস্টিক বর্জ্য বিশেষ করে সামুদ্রিক পরিবেশের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক৷ একইসঙ্গে ‘ঈশ্বরের দ্বীপ' বলে পরিচিত এই এলাকায় স্বাচ্ছন্দ্যও কমে চলেছে৷ প্লাস্টিক বর্জ্য থেকে হুমকির বিষয়ে সাধারণ মানুষের ধারণা বদলানো শুরুতে কতটা কঠিন ছিল, ‘ট্র্যাশ স্টক' নামের আবর্জনা সাফাই সংগঠনের প্রধান হেন্দ্রা আরিমবাওয়া তা স্বীকার করেন৷
তিনি বলেন, ‘‘বেশি আলোচিত বিষয় না হওয়ায় মানুষকে শিক্ষা দেওয়াই ছিল আমাদের সামনে প্রথম বাধা৷ তখন মানুষ ভেবেছিল, ট্র্যাশ স্টক যা বলছে তা মোটেই গুরুত্বপূর্ণ নয়৷ তখন মানুষ আমাদের কথায় গুরুত্ব দেয় নি৷ বিশেষ করে ২০১০ সাল নাগাদ বালি দ্বীপে প্লাস্টিক-বিরোধী আন্দোলনের প্রথম পর্যায়ে এমন অবস্থা ছিল৷ তাই বাইরের যে সব মানুষ বালির অবস্থা নিয়ে চিন্তিত, তাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ৷ তাঁরা দল বেঁধে বালির সৈকত পরিষ্কার করেছেন৷ তবে সে সময়ে ঘনঘন সাফাই হতো না৷ যেমন ট্র্যাশ স্টকে আমরা বল প্রয়োগ করে শিক্ষা দেই না৷ আমরা মানুষের উপর জোর খাটাই না৷ বলি না, জঞ্জাল ছড়িও না, এটা করো, ওটা কোরো না৷ ট্র্যাশ স্টকে বরং আমরা একটা আন্দোলন সৃষ্টির চেষ্টা করি, যাতে মানুষ তাঁদের শৈল্পিক যুক্তিবোধ কাজে লাগিয়ে দেখা, শোনা ও অনুভব করতে পারে৷''
সমাজের বিভিন্ন স্তরের জন্য ওয়ার্কশপ, গানের শো, আলোচনার মতো নানা শৈল্পিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ট্র্যাশ স্টক দৈনন্দিন জীবনে প্লাস্টিকের ব্যবহার সম্পর্কে সমাজে মানসিকতা বদলাতে চায়৷
প্রশাসনের হস্তক্ষেপ
একাধিক প্লাস্টিক-বিরোধী অভিযান চালিয়ে কিছু ফল পাওয়া যাচ্ছে৷ বালির স্থানীয় সরকার অবশেষে ২০১৮ সালে এক অধ্যাদেশ জারি করে প্লাস্টিকের ব্যবহারের উপর নানা বিধিনিষেধ চাপিয়েছে৷
সাধারণ মানুষ প্লাস্টিক ব্যাগ, স্টাইরোফোম ও প্লাস্টিক স্ট্রয়ের ব্যবহার সীমিত রাখার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে৷ বাজারহাট ও সুপারমার্কেটে আর প্লাস্টিকের ব্যাগ দেখা যাচ্ছে না৷ তার বদলে মানুষ পরিবেশবান্ধব থলে ব্যবহার করছে৷ শুধু ক্রেতা নয়, বাজারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাই এই উদ্যোগকে সমর্থন জানাচ্ছে৷
যেমন বিন্টাং সুপারমার্কেটের ম্যানেজার কাসরিয়ান্টো বলেন, ‘‘আমরা সরবরাহকারীদের সুপারমার্কেট, বিশেষ করে বিন্টাং সুপারমার্কেটে পণ্যের ক্ষেত্রে বিষয়টির প্রতি নজর রাখার নির্দেশ দিয়েছি৷ পরিবেশবান্ধব উপায়ে পণ্য প্রস্তুত করার কায়দাও শিখিয়েছি৷ আমাদের মধ্যে কেউ কেউ মোড়ক হিসেবে কলাপাতা ব্যবহার করে৷ বিশেষ করে কিছু অরগ্যানিক বা হাইড্রোপোনিক পণ্যের ক্ষেত্রে আমাদের সমস্যা হচ্ছে৷ কারণ প্লাস্টিকের পাত্রের মধ্যেই সেই পণ্য বেড়ে ওঠে৷ ভবিষ্যতে আমরা পুরোপুরি প্লাস্টিক বর্জনের চেষ্টা করবো৷''
সমাজে পরিচ্ছন্নতা সম্পর্কে গভীর সচেতনতার পাশাপাশি প্লাস্টিক বর্জ্য কমাতে শিল্পজগত ও সরকারের সহায়তার ফলে বালি দ্বীপের সৌন্দর্য্য ফিরিয়ে আনা অসম্ভব নয়৷ বালি দ্বীপে মানুষের জীবন ও চারিপাশের পরিবেশের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ রয়েছে৷
সূর্য সঞ্জয় কাদেক/এসবি