কতটা কার্যকর হবে রেলের প্লাস্টিক বন্ধের নির্দেশনা?
২৩ আগস্ট ২০১৯অনেক আগে থেকে পরিবেশবিদরা প্রকৃতির উপর প্লাস্টিকের কুপ্রভাব নিয়ে সতর্কবার্তা দিয়ে আসছেন৷ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ১৫ অগস্ট স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে প্লাস্টিকের ব্যাপক ব্যবহার সম্পর্কে দেশবাসীকে সতর্ক করেছিলেন৷ ভারতীয় রেল সেই লক্ষ্যে একটা বড় পদক্ষেপ নিল৷
রেল মন্ত্রকের পক্ষ থেকে তার অধীন সমস্ত বিভাগকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, ২ অক্টোবরের মধ্যে ৫০ মাইক্রনের কম ঘনত্ববিশিষ্ট একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ করে দিতে হবে৷ ওই তারিখে ভারতের জাতির জনক মহাত্মা গান্ধির জন্মদিন৷ সেই দিন থেকে ট্রেনের কামরা থেকে স্টেশন চত্বর, প্ল্যাটফর্ম থেকে রেলের দপ্তরে এ ধরনের প্লাস্টিকের ব্যবহার করা যাবে না৷ রেলের লক্ষ্য, প্লাস্টিকের ব্যবহারের ফলে তৈরি হওয়া বর্জ্যের পরিমাণ কমিয়ে আনা ও বর্জ্য নষ্ট করা৷
রেলের নির্দেশিকায় ঠিক কী বলা হয়েছে?
ট্রেনের কামরা বা প্ল্যাটফর্মের স্টলে যাঁরা বিভিন্ন খাদ্য বা অন্য সামগ্রী বিক্রি করেন, তাঁরা একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের ব্যবহার এড়িয়ে চলবেন৷ রেলের কর্মীরা প্লাস্টিক নির্মিত সামগ্রীর ব্যবহার কমিয়ে আনবেন, তা এড়িয়ে চলার চেষ্টা করবেন৷ যে ক্যারিব্যাগ ৫০ মাইক্রনের বেশি এবং একাধিকবার ব্যবহার করা যায়, সেই ব্যাগ ব্যবহার করতে হবে৷ এর ফলে ওই প্লাস্টিক থেকে কার্বন নির্গমন কমানো যাবে৷ রেলের সংস্থা আইআরসিটিসি প্লাস্টিকের বোতলের পুনর্ব্যবহার বাড়াবে৷ একইসঙ্গে রেল প্লাস্টিকের কুপ্রভাব সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করতে প্রচার চালাবে৷
জৈব বর্জ্যের মতো প্লাস্টিক প্রকৃতিতে মিশে যায় না৷ তা মাটি ও জলের মধ্যে থেকে দূষণ ছড়ায়৷ দূষণের পাশাপাশি কলকাতায় সাম্প্রতিক প্রবল বৃষ্টিতে প্লাস্টিকের আর এক বিপদ ফের সামনে এসেছে৷ পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ ও মোড়কে নিকাশি পরিকাঠামো ভেঙে পড়েছে৷ নালার মুখ বন্ধ করে দিচ্ছে প্লাস্টিক, এর ফলে জল বেরোনোর পথ পাচ্ছে না৷ এর ফলে বৃষ্টি থামার পরও বহু জায়গায় জল দাঁড়িয়ে থেকেছে দিনের পর দিন৷ সাধারণ মানুষ এর বিরুদ্ধে পথে নেমেছেন৷
গত বুধবার পুরসভার মাসিক অধিবেশনে বিরোধীরা এ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন৷ তার জবাবে মেয়র ফিরহাদ হাকিম জানান, এ বার ক্যারিব্যাগের ব্যবহার বন্ধে কঠোর আইন আনা হবে৷ এরইমধ্যে অনেক পুরসভা ৫০ মাইক্রনের কম ঘনত্ববিশিষ্ট ক্যারিব্যাগের ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে৷ তবুও এর ব্যবহার পুরোপুরি বন্ধ করা যায়নি৷ সাধারণ মানুষ এ ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন নয়৷ অধিকাংশ মানুষ বাজারের থলের বদলে ক্যারিব্যাগের উপর বেশি ভরসা করেন৷ এর ফলে নিয়মিত টন টন অব্যবহারযোগ্য বর্জ্য তৈরি হয়৷
এক বছরে ভারতে ৫৬ লাখ টন প্লাস্টিক বর্জ্য জমা হয়৷ এই বর্জ্যের একটা বড় অংশ পুনর্ব্যবহারযোগ্য নয়৷ তা নিয়েই মূল সমস্যা৷ এর ফলে জল ও মাটির দূষণ ক্রমশ বাড়ছে৷ বায়ু ও শব্দ দূষণকে ছাপিয়ে এখন বেশি মাথাব্যথা হয়ে দাঁড়িয়েছে প্লাস্টিক দূষণ৷
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিদ্যা বিভাগের অধিকর্তা অধ্যাপক তড়িৎ রায়চৌধুরী রেলের উদ্যোগের প্রশংসা করেন৷ যদিও তিনি বলেন, ‘‘এমন উদ্যোগ ইতিবাচক বটেই৷ কিন্তু, অতীতেও এ ধরনের ঘোষণা আমরা দেখেছি বিভিন্ন ক্ষেত্রে৷ যত দিন না তা বাস্তবে প্রয়োগ করা হচ্ছে, তত দিন চূড়ান্ত কিছু বলা যাবে না৷''
কলকাতায় ৫০ মাইক্রনের নীচে ক্যারিব্যাগ ব্যবহারের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও সেই আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ব্যবসায়ীরা সেগুলি ব্যবহার করছেন৷ ক্রেতাদের একাংশও তাতে আপত্তি করছেন না৷ অধ্যাপক রায়চৌধুরীর বক্তব্য, ‘‘নতুন আইন এলে ভালোই হয়৷ কিন্তু, আগের আইন কি যথাযথ ভাবে প্রয়োগ করা হয়েছে? তার থেকে বড় কথা, কম মাইক্রনের ক্যারিব্যাগের উৎপাদন কেন বন্ধ করা হচ্ছে না? সরকার উৎপাদন বন্ধের ব্যবস্থা করলে আর ব্যবহারের প্রশ্ন আসবে না৷ সেটাই সবচেয়ে কার্যকরী পদক্ষেপ হতে পারে৷''