1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জঞ্জাল পুনর্ব্যবহারের উদ্যোগ

৪ জুলাই ২০১৮

প্লাস্টিকের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে গোটা বিশ্বে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে৷ ভারতে জঞ্জাল সাফাইয়ের এক অভিনব উদ্যোগের মাধ্যমে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার চেষ্টা চলছে৷

https://p.dw.com/p/30nYz
Indien Plastiksammler
ছবি: picture-alliance/AP/C. Anand

আবর্জনা পরিষ্কারের অভিনব কায়দা

ভারতের অর্থনীতি ফুলেফেঁপে উঠছে৷ সেই সঙ্গে জঞ্জালের পরিমাণও বাড়ছে৷ জার্মান শিল্পপতি ফ্রিটইয়ফ ডেৎসনার দিল্লি গেছেন৷ সেখানে শহরের মাঝেই প্রায় ৩০ বছর ধরে আবর্জনার পাহাড় তৈরি হচ্ছে এবং তা আকার-আয়তনে বেড়েই চলেছে৷ শহরে এখনো জঞ্জাল সাফাইয়ের কোনো কার্যকর প্রণালী নেই৷ তিনি বলেন, ‘‘আমার কাছে সমুদ্রই হলো সুখের জায়গা৷ সেখানেই আমি থাকতে সবচেয়ে ভালবাসি, সব ভুলে শুধু প্রকৃতি উপভোগ করতে পারি৷ তাই এমন সমুদ্রতটে আসতে খারাপ লাগে, যেখানে প্রকৃতির আর বিশেষ কিছু অবশিষ্ট নেই৷ সেখানে সর্বত্র দূষণের ছাপ এবং বিপুল পরিমাণ প্লাস্টিক আবর্জনা ছড়িয়ে রয়েছে৷''

তার বদলে ভারতে লক্ষ লক্ষ মানুষ বেআইনিভাবে জঞ্জালের স্তূপ ঘেঁটে মূল্যবান উপকরণ বেছে নেয়৷ ‘আই গট গার্বেজ' সংগঠনের শ্রীকৃষ্ণ বালাচন্দ্রন বলেন, ‘‘দিনে এক বা দুই ডলার উপার্জনের আশায় তারা জঞ্জাল ঘাঁটে৷ হাতে কী লাগছে, তা কখনো জানতে পারে না৷ তারা নিজেদের সুরক্ষার জন্য কোনো সরঞ্জাম পরে না৷ অর্থাৎ জীবনে সবকিছু হারালে, কোনো আশা অবশিষ্ট না থাকলেই ময়লা-কুড়ানি হওয়া যায়৷''

এই স্টার্টআপ কোম্পানি তাদের প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে ভারতের আবর্জনার সংকট সমাধান করতে চায়৷ ময়লা কুড়ানিরা সেই কাজে সাহায্য করছে৷ পথের বদলে আধুনিক রিসাইক্লিং কারখানায় তারা বিভিন্ন ধরনের জঞ্জাল আলাদা করছে৷ শ্রীকৃষ্ণ বালাচন্দ্রন বলেন, ‘‘প্রায় সাড়ে তিন কোটি কিলো জঞ্জাল আমাদের প্রণালীর মাধ্যমে পুনর্ব্যবহৃত হয়েছে৷ প্রায় ৮,০০০ ময়লা কুড়ানি সেই কাজে হাত লাগিয়েছেন৷ আমরা তাঁদের যতটা সম্ভব এক মর্যাদাপূর্ণ জীবিকা দেবার চেষ্টা করছি৷ তাঁদের নির্দিষ্ট মাসিক বেতন রয়েছে৷ কাজের সময় স্থির করা হয়েছে, সাপ্তাহিক ছুটি রয়েছে৷ এমনকি তাঁদের সন্তানরা স্কুলে যাচ্ছে৷''

জঞ্জালের পুনর্ব্যবহার আরও কার্যকর করে তুলতে এই কোম্পানি প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করে৷ রিসাইক্লিং কারখানা, ময়লা কুড়ানি, জঞ্জালের উৎস – সবকিছু এক নেটওয়ার্কের মাধ্যমে পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত৷ সেই তথ্য সবসময়ে ইন্টারনেটে পাওয়া যায়৷ ফ্রিটইয়ফ ডেৎসনার এই প্রসঙ্গে প্রশ্ন তোলেন, প্রযুক্তি এমন কী সম্ভব করেছে, যা আগে হতো না? উত্তরে শ্রীকৃষ্ণ বালাচন্দ্রন বলেন, ‘‘প্রথমত, সহজে চারিদিকে জঞ্জাল দেখা যেত না৷ জঞ্জাল বরাবর অদৃশ্য থাকতো৷ এমনকি আপনি কত জঞ্জাল সৃষ্টি করতেন, তা জানতেই পারতেন না৷ আপনি বলছেন, আবর্জনার জন্য আমি কেন পয়সা দেব? আমি তো বেশি জঞ্জাল সৃষ্টি করি না! এখন প্রতিদিন তার পরিমাণ মাপা যায়৷ মাসের শেষে দেখতে পারেন, আপনি ৫, ১০ বা ১৫ টন জঞ্জাল সৃষ্টি করেছেন৷ তখন বাস্তব মেনে নিতে হয়৷''

ফ্রিটইয়ফ ডেৎসনার মনে করেন, ‘‘অর্থাৎ সচেতনতা সৃষ্টি করা হচ্ছে৷ যেমনটা ফিটনেস ট্র্যাকার প্রতিদিন আমাদের পদক্ষেপ, হৃদস্পন্দনের মতো তথ্যের পরিমাপ করে৷ সেই তথ্যের ভিত্তিতে নিজের আচরণ বদলানো সম্ভব৷''

ভারতের আবর্জনা সংকটের মূলে রয়েছে প্লাস্টিকের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার৷ প্লাস্টিক ছাড়া দৈনন্দিন জীবন ভাবাই যায় না৷ সস্তায় উৎপাদন ও সহজে প্রক্রিয়াজাত করা যায়, প্রায় অনন্তকাল ধরে টিকে থাকে৷ কিন্তু সেটাই তো সমস্যা৷ ফ্রিটইয়ফ ডেৎসনার বলেন, ‘‘প্লাস্টিক ব্যবহার করে মোড়ক উৎপাদন করলে তা মাত্র একবার ব্যবহার করে ফেলে দেওয়া হয়৷ প্লাস্টিকের এই বৈশিষ্ট্য তাই অত্যন্ত খারাপ, কারণ তা কখনো নষ্ট হয় না৷''

এনভিগ্রিন সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা অশ্বথ হেগড়ে বলেন, ‘‘দুঃখের বিষয় হলো, মানুষ তাদের অভ্যাস বদলাতে প্রস্তুত নয়৷ তাদের নেশা হয়ে গেছে৷ তারা শুধু ইউজ অ্যান্ড থ্রো ব্যাগ ব্যবহার করতে চায়৷ আমরা কিছু বিকল্প চালু করেছি৷ প্লাস্টিকের বদলে আপনি সেটা ব্যবহার করতে পারেন, প্লাস্টিকের দাম বাঁচাতে পারেন৷''

সাধারণ প্লাস্টিক একশো বছর পরেও নষ্ট হয় না৷ এনভিগ্রিন কোম্পানির থলে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে পুরোপুরি পরিবেশের সঙ্গে মিশে যায়৷ উদ্ভিদজাত তেল ও শাকসবজির ফেলে দেওয়া অংশ থেকে সেগুলি তৈরি হয়৷ অশ্বথ হেগড়ে বলেন, ‘‘২০১৮ সালের মধ্যে কমপক্ষে ২০ থেকে ২৫টি দেশে পৌঁছনোই আমাদের লক্ষ্য৷ আমরা পুরোপুরি ভারতে তৈরি পণ্য পশ্চিমা দেশগুলিতে রপ্তানি করবো৷ একইসঙ্গে আমরা ইউরোপ বা পশ্চিমা দেশগুলির নতুন শিল্পপতিদের উৎসাহ দিচ্ছি৷ আমরাই তাদের কাঁচামাল সরবরাহ করবো, যা দিয়ে ইউরোপেই ব্যাগ তৈরি করা যাবে৷''

আমাদের প্লাস্টিক ব্যবহারের পরিণতি এখনো স্পষ্ট নয়৷ এই সমস্যা উপেক্ষা করা যায়, অথবা এই প্রবণতা রুখতে কিছু করা যায়৷

ক্রিস্টিয়ান রোমান/এসবি

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য