উত্তরপ্রদেশে মসজিদে সমীক্ষাকে ঘিরে হাঙ্গামা, মৃত পাঁচ
২৫ নভেম্বর ২০২৪আদালতের নির্দেশে সম্ভলে মুঘল আমলে তৈরি একটি মসজিদে সমীক্ষা করতে গেছিলেন কোর্ট নিযুক্ত সমীক্ষাক দল। তখনই এইঅ গোলমাল শুরু হয়।
গত মঙ্গলবার আদালত এই মসজিদে সমীক্ষা করার নির্দেশ দেয়। কারণ, স্থানীয় আদালতে বিষ্ণু শঙ্কর জৈন-সহ ছয়জন আবেদন জানিয়ে বলেছিলেন, ১৫২৯ সালে একটি হিন্দু মন্দির ভেঙে মসজিদটি তৈরি হয়েছিল। তারপরই আদালত ওই সমীক্ষার নির্দেশ দেয়।
কী হয়েছিল?
রোববার সমীক্ষা করার জন্য পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে আদালত নিযুক্ত অ্যাডভোকেট কমিশনার রমেশ রাঘব, জেলাশাসক রাজেন্দ্র পেনসিয়া, পুলিশ সুপার কৃষ্ণ কুমার বিষ্ণয়ানন্দ ও অন্যরা সমীক্ষা করার জন্য মসজিদে পৌঁছান।
তারা কাজ শুরু করার সঙ্গে সঙ্গে বাইরে প্রচুর মানুষ জড়ো হয়ে যান। তারা স্লোগান দিতে শুরু করেন। মোরাদাবাদের ডিভিশনাল কমিশনার এ কে সিং বলেছেন, ''উত্তেজিত জনতা পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথর ছুঁড়তে থাকে। তারপর বিক্ষোভকারীদের সরাতে পুলিশ মৃদু শক্তিপ্রয়োগ করে। কিন্তু কিছু মানুষ আগুন ধরানো ও সহিংসতা শুরু করে দেন। ফলে পরিস্থিতি খারাপ হয়।''
এ কে সিং জানিয়েছেন, ''দুই-তিন হাজার মানুষ মসজিদের সামনে জড়ো হয়েছিলেন। সমীক্ষা শেষ হওয়ার পর তারা আবার পাথর ছুঁড়তে শুরু করে। অন্য এক দল গাড়ি পোড়াতে শুরু করে। গুলি চলে।''
তার দাবি, ''দুষ্কৃতীরাই গুলি চালিয়েছে। একটি গুলি পুলিশের পিআরও-র পায়ে লেগেছে। কারা গুলি চালিয়েছিল, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।''
শাহি মসজিদ কমিটির প্রধান জাফর আলি জানিয়েছেন, ''বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষের সময় পুলিশ শূন্যে গুলি চালায়।''
তিনি বলেছেন, সমীক্ষার কাজ দুই ঘণ্টা ধরে শান্তিতেই চলেছে। ইতিমধ্যে একটা গুজবের কারণে মসজিদের বাইরে প্রচুর মানুষ চলে আসেন এবং পাথর ছুঁড়তে থাকেন। কিছু গাড়িতে আগুন ধরানো হয়। পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। পুলিশ লাঠি চালায়, কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটায় এবং শূন্যে গুলি চালায়।
মৃত পাঁচ
রোববারই গুলি লেগে তিনজনের মৃত্যু হয়েছিল। তাদের নাম নঈম, বিলাল ও নোমান। সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সোমবার আরো দুই জন মারা গেছেন।
সরকারি কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, পুলিশের গুলিতে মৃত্যু হয়নি। কিন্তু জমিয়ত উলেমা হিন্দ(মাহমুদ মাদানিঃ-র নেতা হাফিজ শাহিদ দাবি করেছেন, ''পুলিশ লাঠি চালাতে শুরু করলে পরিস্থিতি খারাপ হয়। বিক্ষোভরাও পাথর ছুড়তে থাকে। তারপর পুলিশ গুলি চালায়।''
এ কে সিং বলেছেন, ''পুলিশ গুলি চালায়নি। তারা রবার বুলেট ছুঁড়েছে। কারো কাছে পুলিশের গুলি চালানোর কোনো প্রমাণ থাকলে তিনি সেটা দিন।''
মসজিদটি পুরাতত্ত্ব বিভাগ রক্ষণাবেক্ষণ করে।
কী ব্যবস্থা নিয়েছে প্রশাসন
মোরাদাবাদ রেঞ্জের ডিআইজি মুনিরাজ জি বলেছেন, ২০ জনকে আটক করা হয়েছে।
পুলিশ সুপার কৃষ্ণ কুমার বলেছেন, ''পুরো এলাকায় প্রচুর অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। ভিডিও দেখে দাঙ্গাকারীদের চিহ্নিত করার কাজ চলছে। দাঙ্গাকারীদের বিরুদ্ধে জাতীয় সুরক্ষা আইন অনুসারে ব্যবস্থা নেয়া হবে।''
তিনি জানিয়েছেন, ''কোনোরকম গুজব ছড়ালেই কঠিন ব্যবস্থা নেয়া হবে। সম্ভলে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।''
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
সমাজাবদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদব বলেছেন, ''সাম্প্রতিক উপনির্বাচনে বিজেপি যে বেনিয়ম করেছে, তার থেকে মানুষের চোখ অন্যদিকে ফেরাতেই এই ধরনের ঘটনা ঘটানো হচ্ছে।''
তিনি লখনউতে একটি সাংবাদিক সম্মেলনে জানিয়েছেন, ''নির্বাচনের আলোচনা নিয়ে বানচাল করতেই রোববার সমীক্ষক দল পাঠানো হলো। সম্ভলে যা হয়েছে, তা বিজেপি-র পরিকল্পনামতো হয়েছে।''
কংগ্রেস নেতা পবন খেরা বলেছেন, ''যোগী আদিত্যনাথ বলেছেন, আবার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির প্রতি তাদের অশ্রদ্ধা স্পষ্ট করে দিলো। এখানে বিজেপি-র একমাত্র লক্ষ্য ছিলো, সম্প্রীতির পরিবেশ নষ্ট করা।''
বিজেপি এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। রাজ্যের মন্ত্রী যোগেন্দ্র উপাধ্যায় বলেছেন, ''আদালতের নির্দেশে এই সমীক্ষা হয়েছে। আদালতের নির্দেশ মানা উচিত ছিলো। আদালতের নির্দেশ ভাঙাটা বড় অপরাধ। সকলকেই আইন ও শৃঙ্খলা মানতে হয়।''
সমাজবাদী পার্টির সাংসদের বিরুদ্ধে অভিযোগ
পুলিশ তাদের এফআইআরে সমাজবাদী পার্টির সাংসদ জিয়াউর রহমান বুর্ক ও স্থানীয় বিধায়ক ইকবাল মেহমুদের ছেলে শোয়েব ইকবালের নাম উল্লেখ করেছে।
অখিলেশের নেতৃত্বে সমাজবাদী পার্টির প্রতিনিধিদল স্পিকারের সঙ্গে দেখা করে এই বিষয়ে নালিশ জানিয়েছেন।
সমাজবাদী পার্টি বিষয়টি সংসদে তুলতে চায়।
জিএইচ/এসজি(পিটিআই, এএনআই)