অযোধ্যার পর এবার কি পালা জ্ঞানবাপীর?
১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪অযোধ্যায় রামলালার প্রাণ প্রতিষ্ঠার ১০ দিনের মাথায় নজরে জ্ঞানবাপী মসজিদ। এর একটি অংশে পুজোর অনুমতি নিয়ে দীর্ঘদিন আইনি লড়াই চলছিল। আদালতের সবুজ সংকেত ও পুজো অর্চনার পর প্রশ্ন উঠছে, ভোটের মুখে কি মন্দির আন্দোলনের নয়া পর্ব ফের চাঙা হয়ে উঠল?
জ্ঞানবাপীর অন্দরে
গতকাল বুধবার বারাণসীর নগর দায়রা আদালত নির্দেশ দেয়, জ্ঞানবাপী মসজিদের একটি অংশে পুজো করা যাবে। ধর্মস্থানের যে অংশটি 'সিল' করে রাখা হয়েছিল, সেখানে এক সপ্তাহের মধ্যে জেলা প্রশাসনকে পুজোর ব্যবস্থা করতে বলেন বিচারক।
২০২২ সাল থেকে মসজিদের ওজুখানা 'সিল' করে রাখা হয়েছিল আদালতের নির্দেশে। এই অংশে প্রাচীন শিবলিঙ্গ আছে বলে হিন্দুদের দাবি। এই বন্ধ থাকা অংশ খুলে দেয়ার পরপরই আজ ভোর থেকে পুজোপাঠ শুরু হয়ে গেছে।
এই অংশে দীর্ঘদিন ধরে বাস করছে একটি হিন্দু পরিবার। আজ দিনের আলো ফোটার আগেই, তিনটে নাগাদ পুজোর আয়োজন করা হয় সেখানে। প্রার্থনার সঙ্গে আরতি করা হয়। এই মসজিদের কাছেই কাশী বিশ্বনাথ মন্দির। সেই মন্দির ধামের কক্ষে বুধবার গভীর রাতে বৈঠকে বসেন পুলিশ ও প্রশাসনের কর্তারা।
গতকাল আদালত নির্দেশ দিয়েছে, পুজো, আরতি, ভোগ বিতরণ করা যাবে মসজিদের ওই অংশে। বেসমেন্টে যে মূর্তি রয়েছে, সেটা যথাযথ রাখতে হবে ও লোহার ব্যারিকেড দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। কাশী বিশ্বনাথ ট্রাস্ট বোর্ডের পুরোহিতরা এই বিষয়গুলি দেখাশোনা করতে পারেন বলে জানিয়েছে আদালত। মসজিদ পরিচালন কমিটি এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চতর আদালতে আবেদন জানাতে চলেছে।
আদালতে হিন্দু পক্ষের আইনজীবী দাবি করেছেন, বারাণসীতে জ্ঞানবাপী মসজিদ তৈরির আগে সেখানে হিন্দু মন্দির ছিল।আর্কিওলজিকাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া (এএসআই)-র রিপোর্ট দেখিয়ে এই দাবি করা হয়েছে। বারাণসীর আদালতের রায় আসার পরই গতকাল হিন্দু শিবির সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেছে। তাদের আর্জি, মসজিদে থাকা শিবলিঙ্গের বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা করতে হবে। পাশাপাশি এই ধর্মস্থানের একটি অংশে প্রত্নতাত্ত্বিক খননের অনুমতি চেয়েছে তারা।
অযোধ্যার দ্বিতীয় পর্ব?
রাম মন্দির তৈরির আন্দোলন ও ১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ঘটনা ভারতীয় রাজনীতির মোড় ঘুরিয়ে দেয়। সেই পর্ব কার্যত সমাপ্ত হয়েছে গত ২২ জানুয়ারি রামমন্দিরে বিগ্রহের প্রাণ প্রতিষ্ঠার অনুষ্ঠানের মাধ্যমে। ভোটের মুখে এবার সামনে আসছে জ্ঞানব্যাপী প্রসঙ্গ।
অযোধ্যায় রামমন্দির ভেঙে বাবরি মসজিদ তৈরি হয় বলে দাবি তুলেছিল হিন্দু শিবির। এই দাবি খতিয়ে দেখতে এএসআই-কে দায়িত্ব দেয় আদালত। মসজিদের ধ্বংসস্তূপের নীচ থেকে মন্দিরের নিদর্শন উদ্ধার করে এএসআই। ২০১৯ সালে সুপ্রিম কোর্ট অযোধ্যার বিতর্কিত জমিকে রামচন্দ্রের জন্মস্থান বলে স্বীকৃতি দেয়। সেখানে রামমন্দির নির্মাণের অনুমতিও দেয়।
বারাণসীর জ্ঞানবাপী আইনি লড়াই সেদিকে গড়াতে পারে বলে অনুমান করা হচ্ছে। এই সংক্রান্ত মামলা শীর্ষ আদালতে বিচারাধীন। সেই মামলায় কী নিষ্পত্তি হয়, তার উপর নির্ভর করছে জ্ঞানবাপী মসজিদের ভবিষ্যৎ। বৃহস্পতিবার সেখানে পুজোর সূচনা নির্বাচনের মুখে নয়া মন্দির আন্দোলনকে জোরদার করে তুলতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
অযোধ্যা যেমন রামের, তেমনই মথুরা শ্রীকৃষ্ণের জন্মস্থান বলে হিন্দুদের বিশ্বাস। এখানে ঈদগাহ নিয়ে দুই শিবিরের মধ্যে বিরোধ রয়েছে। বারাণসীর কাশী-বিশ্বনাথ মন্দিরের জমি পুনরুদ্ধারে একাধিক মামলাও আদালতে বিচারাধীন। যদি এসব মামলার রায় অযোধ্যার মতোই হয়, তা হলে ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্র আরো ক্ষুণ্ণ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে পর্যবেক্ষকদের মত।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক মইদুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, "ধর্মনিরপেক্ষতার ভবিষ্যৎ কী হবে, তা এখন বলা মুশকিল। তবে শাসকের ভাবনায় এই বিষয়গুলি রয়েছে। বাবরি মসজিদের পর এবার অন্যত্র সেটা দেখা যাচ্ছে।"
সাংবাদিক সুমন ভট্টাচার্য বলেন, "একটার পর একটা মসজিদের জায়গায় যদি মন্দির তৈরি পরিকল্পনা নিয়ে নরেন্দ্র মোদীর সরকার এগোয়, তাহলে শুধু ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্র ক্ষুণ্ণ হবে না, আমাদের সঙ্গে প্রতিবেশী দেশগুলির সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে গিয়ে তারা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ভারতের ভাবমূর্তিকে কতটা নষ্ট করছে, সেটাও বিচার করে দেখতে হবে।"