1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
বিচার ব্যবস্থাভারত

অভিষেকের মামলার পর বিচারপতি বললেন, এত চুরি আগে দেখেছেন?

১১ জানুয়ারি ২০২৪

এবার খোদ বিচারপির বিরুদ্ধেই মামলা। আর মামলাকারী হলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।

https://p.dw.com/p/4b6tH
বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।
বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্য়ায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে মামলা অভিষেক বন্দ্যোপধ্যায়ের। ছবি: Subrata Goswami/DW

কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্য়ায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করলেন অভিষেক।

অভিষেক সেই মামলায় বলেছেন, বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় আদালতের বাইরে মামলা নিয়ে মন্তব্য করেছেন। তাই তার বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়া হোক। নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত সব মামলা তার ও বিচারপতি অমৃতা সিনহার হাত থেকে নিয়ে নেয়া হোক।  একটা বিশেষ বেঞ্চ গঠন করে সেখানে মামলাগুলো দেয়া হোক। আর বিচারপতি গঙ্গোপাধ্য়ায় যেন বাইরে কোনো মন্তব্য না করেন, সেটা তাঁকে বলে দেয়া হোক।

মামলায় কী অভিযোগ করা হয়েছে?

বাংলা সংবাদমাধ্যমের রিপোর্ট  বলছে, এই মামলায় বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের আগের সাক্ষাৎকারের বিষয়টি যেমন তোলা হয়েছে, তেমনই সম্প্রতি তিনি একটি অনুষ্ঠানে কিছু কথা বলেন, সেই উল্লেখও আছে। তাছাড়া তিনি অভিষেকের সম্পত্তির উৎস জানানোর বিষয়ে কিছু মন্তব্য করেছেন সেটাও বলা হয়েছে।

বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় মিডিয়াকে বলেছিলেন, অভিষেক যদি তার সম্পত্তির বিবরণ দেন ও উৎস সম্পর্কে বলেন, তাহলে তিনি মীণাক্ষি মুখোপাধ্যায়-সহ সমসাময়িক বিরোধী নেতাদেরও সম্পত্তির বিবরণ ও উৎস জানাতে বলবেন। তিনি এটাও বলেছিলেন, এরপর তো চোরেরা সুপ্রিম কোর্টে গিয়ে চুরি করে জীবীকা নির্বাহ করার দাবি জানাতে যাবেন।

রাজ্য প্রতিবন্ধী সম্মেলনের অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। সেখানে আইনজীবী ও সিপিএম নেতা বিকাশ ভট্টাচার্য ও সাবেক মন্ত্রী ও সিপিএম নেতা কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়ও ছিলেন। মামলায় সেই বিষয়টিও আনা হয়েছে।

বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় যা বলেছেন

বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় বলেছেন, ''বিচারপতিদের নামে মামলা হতে পারে না এমন নয়। হতেই পারে। তবে বিচারপতি হিসাবে তাদের একটা সংবিধানিক রক্ষাকবচ থাকে। সেটা বাদ দিয়ে অন্য ক্ষেত্রে মামলা হতে পারে।''

মামলা সম্পর্কে তিনি জানিয়েছেন, ''দেখা যাক না কী দাঁড়ায়। সুপ্রিম কোর্ট মামলা নেয় কি না দেখি। বহু বিখ্যাত মানুষ. যারা কাজ করার চেষ্টা করেছেন, তাদেরকে টেনে নামানোর চেষ্টা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধাচরণ করা হয়েছে। এমনকী বিধবাবিবাহের সময় বিদ্যাসাগর মহাশয়কে শারীরিক নিগ্রহ করা হয়েছিল।''

তিনি জানিয়েছেন, ''পরে এই বিষয়ে আমার বিশদ বলব। মামলা যে কেউ করতে পারে। কেউ বলতে পারে চাঁদ পেড়ে দাও। সবসময় আলো ও আঁধার থাকে। আমার মনে হয়, আমার কাজকর্মে ও কথাবার্তায় একটা শ্রেণি খুব বিপদে পড়ছে। একটা কথায় কর্তৃপক্ষ প্রভাবিত হয়ে যাবে, এ সব আষাঢ়ে গল্প।''

তিনি বলেছেন, ''সময় পাল্টাচ্ছে। আগে  এত চুরিজোচ্চুরি দেখেছেন। চাকরি বিক্রি দেখেছেন? দেখেননি। টাকা নিয়ে এত চাকরি হচ্ছে।''

কী বলছেন আইনজীবীরা?

আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেছেন, ''মামলা হতেই পারে। যার সামর্থ্য আছে, সে বারবার করে হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টে যেতে পারে। ওরা তো আগে গিয়ে বললেন, অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বিরুপ মন্তব্য করছেন। সুপ্রিম কোর্ট বললো, ঠিক আছে অন্য বিচারপতি মামলা শুনবেন। তিনি যখন কড়া পদক্ষেপ নিচ্ছেন, তখন তার কাছ থেকে মামলা সরাবার কথা বলা হচ্ছে।''

বিকাশরঞ্জনের বক্তব্য, ''এভাবে বিচারপতিদের পরোক্ষভাবে ভয় দেখানোর চেষ্টা হচ্ছে। আমার ধারণা, প্রধান বিচারপতি এই আবেদন গ্রাহ্য করবে না। বিচারপতি কী বলবেন, তা কি কেউ ঠিক করে দিতে পারে? তদন্ত করলে সব তথ্য প্রকাশিত হবে বলে ওরা ভয় পাচ্ছে।''

আইনজীবী ফিরদৌস শামিম রিপাবলিক টিভিকে বলেছেন, ''বিচারপতির পরিবারের উপর আক্রমণ, তাদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখানোর ঘটনা আমরা আগে দেখেছি। আসলে কোনো কোনো পক্ষ বুঝতে পারছেন, তাদের বিপদ ঘনিয়ে আসছে। তাই এরকম করছে।''

সুদীপ্ত দাশগুপ্ত রিপাবলিককে বলেছেন,  ''ওরা বারবার মামলা করছেন। কোনো রায় বিপক্ষে গেলে বিচারপতিদের বিরুদ্ধে পোস্টার পড়ে, বিক্ষোভ দেখানো হয়। ওরা একাধিক বিচারপতি বদলের জন্য সুপ্রিম কোর্টে ছুটছেন। আসলে উনি ভয় পাচ্ছেন।''

বিচারপতিরা কি বাইরে কথা বলতে পারেন?

সাংবাদিক শরদ গুপ্তা ডিডাব্লিউেকে বলেছেন, ''আগেকার দিনে আদালতকক্ষের বাইরে বিচারপতিরা বিশেষ কিছু বলতেন না। কিন্তু এখন দিন বদলেছে। তারাও নানা অনুষ্ঠানে যান। কথা বলেন। তারা কী বলবেন, কী বলবেন না, এই বিষয় নিয়ে কখনো কখনো বিতর্ক হতে আমরা আগে দেখেছি।''

শরদের মতে, ''বিচারপতিরা আদালতেও নানান পর্যবেক্ষণ করেন। সেসব রিপোর্টও করা হয়। অনেক সময় তাদের পর্যবেক্ষণের সঙ্গে রায় মেলেও না। ফলে পুরো বিষয়টাকে বৃহত্তর পরিপ্রেক্ষিতেই দেখা উচিত। তবে এই বিষয়ে এখন সুপ্রিম কোর্ট কী বলে, সেটাই দেখার জন্য আগ্রহ থাকবে।''

জিএইচ/এসজি (পিটিআই, এবিপি আনন্দ)