সিবিআই দোষীদের রক্ষা করছে: বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়
২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩এই সপ্তাহে পরপর দুই দিন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় সিবিআইয়ের কড়া সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে সিবিআই যেভাবে তদন্ত করছে, তাতে তিনি একেবারেই খুশি নন। দোষীদের ধরার বদলে তারা তাদের রক্ষা করছে। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী জানানোর কথাও বলেন তিনি।
আদালতে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ''এবার আমি আপনাদের পদক্ষেপ বর্ণনা করে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখব। আপনারা দোষীদের আড়াল করার চেষ্টা করছেন। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের আধিকারিকরা কী করছেন?''
এরপর আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, ''প্রধানমন্ত্রীকে জানালে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ শুরু হবে। আমলাদের তৎপরতা বাড়বে। সেটা অনাহূত। এই পদক্ষেপ নেবেন না''। তারপর বিচারপতি জানান, ''ঠিক আছে।''
কী বলেছেন বিচারপতি
বিচারপতি বলেছেন, ''সিবিআইয়ের আধিকারিকরা নিশ্চয়ই এত অবোধ বা নির্বোধ নন। তারা নিশ্চিতভাবেই দুষ্কৃতীদের সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করছেন। ওএমআর শিট সংক্রান্ত মামলায় আদালত সিবিআইয়ের কাজে একেবারেই খুশি নয়।''
বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় যা বলেছেন, তাতে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার তদন্তে তিনি কতটা ক্ষুব্ধ তা যেমন সামনে এসেছে, তেমনই আস্থাহীনতাও ফুটে উঠেছে। তবে এটা তার পর্যবেক্ষণ মাত্র। তিনি এখনো সিবিআইয়ের হাত থেকে তদন্তভার প্রত্যাহার করে নেননি।
নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশেই ,সিবিআই তদন্ত করছে। এই এক বছরে তারা প্রচুর অভিযুক্তকে জেরা করেছে, বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছে, কিন্তু বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের মন্তব্য করেছেন, আসল দুষ্কৃতীদের তারা বাঁচাচ্ছে। তিনি কোনো রাখঢাক না করেই বলেছেন, ''সিবিআই
আধিকারিকদের নির্বোধের মতো আচরণে আমি অবাক।''
তিনি বলেছেন, ''কম্পিউটারে সংরক্ষিত ওএমআর শিটের তথ্যকে এতদিন ডিজিটাইজড বলে শিক্ষা পর্ষদ দাবি করছিল, সেটা একেবারেই ডিজিটাইজড কপি নয়। সিবিআইয়ের আধাকিরাকরা নির্লজ্জ। এতবার এত আদালতের প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে তাদের, তা সত্ত্বেও তাদের হুঁশ ফিরছে না।''
বিচারপতি বলেছেন, এ''কসময় প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ মানিক ভট্টাচার্যের জমিদারি ছিল। এখন তাকে সরিয়ে দেয়ার পর তার কিছু অনুগামী গন্ডগোল করছে। তারা সিবিআই-ইডির নজরদারিতে আছেন।''
বিচারপতির মন্তব্যের পর প্রশ্ন
বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় এই ভাবে সিবিআইয়ের উপর অনাস্থা প্রকাশ করার পর নানান প্রশ্ন উঠেছে।
প্রবীণ সাংবদিক শুভাশিস মৈত্র ডিডাব্লিউকে জানিয়েছেন, ''সাধারণ মানুষ সরকারের কাছে সুবিচার না পেয়ে আদালতের উপর ভরসা করেন। কিন্তু আদালত যদি তদন্তকারী সংস্থাকে নিয়ে এই কথা বলেন তো তারা কার কাছে যাবেন?''
শুভাশিস জানিয়েছেন, ''সিবিআইয়ের হাতে রাজ্যের অনেকগুলি মামলা আছে। তার মধ্যে সারদা মামলাই তো বহু বছর হয়ে গেল। এখনো সেভাবে এগোয়নি। জ্ঞানেশ্বরী দুর্ঘটনা থেকে শুরু করে রবীন্দ্রনাথের নোবেল চুরির মতো অনেক বিষয়ই তারা বছরের পর বছর ধরে তদন্ত করছে।''
সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেছেন, ''দিল্লির সরকার যে তৃণমূলকে বাঁচাতে চায় তা স্পষ্ট। বিচারপতি বলতে বাধ্য হয়েছেন, এবার কি তবে প্রধানমন্ত্রীকে বলতে হবে, সিবিআইয়ের ডিরেক্টরকে বলতে হবে? দুর্নীতির তদন্ত নিয়ে ছেলেখেলা করা হচ্ছে।''
জিএইচ/এসজি (পিটিআই, এবিপি আনন্দ)