টিভি-তে বিচারপতির সাক্ষাৎকার নিয়ে আলোড়ন
২১ সেপ্টেম্বর ২০২২বিচারক থেকে বিচারপতিরা সচরাচর সংবাদমাধ্যমের কাছে সাক্ষাৎকার দেন না, অন্তত কর্মরত অবস্থায় তো নয়ই। এর আগে সুপ্রিম কোর্টের চারজন বিচারপতি সাংবাদিক সম্মেলন করে প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে তাদের ক্ষোভ জানিয়েছিলেন। কিন্তু তারাও সাক্ষাৎকার দেননি। কিন্তু কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় এবিপি আনন্দ চ্যানেলে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। সেখানে দুর্নীতির মামলা ও তার রায় নিয়ে তিনি খোলাখুলি কথা বলেছেন। আর তার পরেই শুরু হয়েছে আলোড়ন।
মতপ্রকাশের অধিকার মৌলিক অধিকার হলেও একজন বিচারপতির এভাবে সংবাদমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দেয়াটা বেনজির ঘটনা। ফলে এনিয়ে প্রবল আলোড়ন হচ্ছে। সামাজিক মাধ্যমে বিচারপতি গঙ্গেপাধ্যায়ের পক্ষে ও বিপক্ষে মত জানাচ্ছেন প্রচুর মানুষ। আইনজীবীরা সংবাদমাধ্যমের কাছে মুখ খুলেছেন। এমনিতেই একের পর এক মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়ে এবং মামলা চলাকালীন নানা ধরনের পর্যবেক্ষণ দিয়ে বিচারপতি গঙ্গেোপাধ্যায় বিতর্কে ছিলেন। কিন্তু এবার সাক্ষাৎকার দেয়ার পর যে আলোড়ন শুরু হয়েছে, সেটাও নজিরবিহীন।
তবে এই সাক্ষাৎকার যাতে দেখানো না হয়, সেজন্য কলকাতা হাইকোর্টে আবেদন জানানো হয়েছিল। কিন্তু প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ তা খারিজ করে দিয়ে জানায়, বিচারপতি গঙ্গেপাধ্যায় নিশ্চয়ই এমন কিছু বলবেন না, যাতে বিচারব্যবস্থায় আঘাত লাগে।
কী বলেছেন বিচারপতি?
সাক্ষাৎকারে বিচারপতি গঙ্গেপাধ্যায় বলেছেন, রাজ্যে স্কুলে নিয়োগের ক্ষেত্রে মুড়ি-মুড়কির মতো দুর্নীতি হয়েছে, তাই তিনি মুড়ি-মুড়কির মতো সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। এমনকী ভবিষ্যতে অভাবিত ব্যবস্থা নিতে হতে পারে বলেও জানিয়েছেন।
বিচারপতি স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, ''এত দুর্নীতি আমি কল্পনাও করতে পারিনি। শুনানির সময় যখন স্কুল সার্ভিস কমিশন ও মধ্যশিক্ষা পর্ষদ পরষ্পরবিরোধী কথা বললো, তখনই আমি বুঝে যাই, দুর্নীতি আছে।''
তিনি এটাও জানিয়েছেন, মাঝেমধ্যে সিবিআইয়ের তদন্তে ঢিলেমি দেখে তিনি বিরক্ত হয়েছেন। তবে তার আশা, শেষপর্যন্ত দোষীরা শাস্তি পাবে। তার দাবি, ''জালিয়াতি করে চাকরি যারা পেয়েছেন, তাদের চাকরি যাবে। ধরতে পারলে তাদের চাকরি যাবেই। তারা যেন নিশ্চিন্তে না থাকেন।''
তিনি কি অবসরের পর রাজনীতিতে নামবেন? বিচারপতি গঙ্গোপাধ্য়ায়ের জবাব, তিনি এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেননি। সবসময় দলীয় রাজনীতি করতে হবে তারও মানে নেই। রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে রাজনীতির কথা বলা মানেও তো রাজনীতি করা।
বিচারপতি কি সাক্ষাৎকার দিতে পারেন?
বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় বলেছেন, ‘‘বেঙ্গালুরু প্রিন্সিপালে বলা আছে বিচারপতিরা কী করতে পারেন, কত দূর যেতে পারেন। আমার বিচারব্যবস্থা সম্পর্কে পূর্ণ আস্থা আছে। আর বিচারপতিদেরও বাক্স্বাধীনতা আছে।''
কিন্তু এনিয়ে আইনজীবী মহল ও নেটিজেনরা দ্বিধাবিভক্ত। কলকাতা বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অরুণাভ ঘোষ মনে করেন, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ ও গাইডলাইন অনুসারে একজন বিচারপতি এভাবে সাক্ষাৎকার দিতে পারেন না। আবার সিপিএম নেতা ও আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেছেন, বিচারপতি সাক্ষাৎকার দিতে পারেন কি না, তা যুক্তিসাপেক্ষ।
হাইকোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সহ সভাপতি কল্লোল মন্ডল বলেছেন, তিনি কাউকে আঘাত না দিয়ে কথা বললে তো কোনো অসুবিধা নেই। আঘাত দিলে তা নিন্দনীয়। রাজ্য়ের অ্যাডভোকেট জেনারেল মনে করেন, এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের সম্মানের প্রশ্ন জড়িত।
প্রবীণ সাংবাদিক দীপ্তেন্দ্র রায়চৌধুরির মতে, ''ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, বিচারপতিদের সাধাক্ষকার না দেয়াই ভালো। কিন্তু বিচারপতিরা সেমিনারে বলেন, নানা ধরনের সম্মেলনে যোগ দেন। ভাষণও দেন। ফলে এ নিয়ে গেল গেল রব তোলার কিছু হয়নি। এর আগেও সুপ্রিম কোর্টের চার বিচারপতি সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন।''
নেট মাধ্যমেও এই বিভাজন স্পষ্ট। কেউ বলছেন, এভাবে সাক্ষাৎকার দেয়া ঠিক হয়নি। আবার কেউ বলছেন, বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় কোনো ভুল করেননি।
জিএইচ/এসজি(পিটিআই, এবিপি আনন্দ, সংবাদ প্রতিদিন)