স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ আজ অনেকেরই নাগালে
১২ জানুয়ারি ২০২১‘স্মার্ট স্মল স্যাটেলাইট সিস্টেমস' নামের স্টার্টআপ কোম্পানির নামের মধ্যেই কাজের ধরন তুলে ধরা হয়েছে৷ এই কোম্পানির কিউবস্যাট স্যাটেলাইটগুলিনিজস্ব অবস্থান সম্পর্কে নিখুঁত তথ্যের সাহায্যে নির্ধারিত দিক চিহ্নিত করতে পারে৷ এক একটির দাম কিন্তু কম নয়৷ ভ্যুয়র্তসবুর্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাউস শিলিং বলেন, ‘‘ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতির মিনিয়েচার বা ক্ষুদ্র সংস্করণ তৈরির ক্ষেত্রে সাফল্যের দৌলতেই এমন প্রবণতা দেখা যাচ্ছে৷ স্যাটেলাইটের আকার ছোট হতে থাকলেও সেগুলির সার্বিক গুণাগুণ মোটেই কমছে না৷ একটি বড় স্যাটেলাইটের মূল্যে একাধিক স্যাটেলাইট কাজে লাগানো যায়৷''
এখনো পর্যন্ত এই কোম্পানি চারটি কিউব-স্যাট উৎক্ষেপণ করেছে৷ সেগুলির সমষ্টি বৈজ্ঞানিক পরিমাপের জন্য থ্রিটি টোপোলজি পরীক্ষা করছে৷ সেই কাজে স্যাটেলাইটগুলির মধ্যে স্বাধীনভাবে তথ্যের আদানপ্রদান, পরবর্তি পদক্ষেপ স্থির করা ও ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত জরুরি৷ ইনটেলিজেন্ট থ্রিডি স্যাটেলাইট কনফিগারেশনের লক্ষ্যে এই পরীক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ আগ্নেয়গিরিতে অগ্নুৎপাত ঘটলে নির্গত ছাইয়ের অবস্থান নির্ণয় করতে এই প্রযুক্তি প্রয়োগ করা যেতে পারে৷ বেসামরিক বিমান চলাচলের ক্ষেত্রে এমন প্রযুক্তির যথেষ্ট মূল্য রয়েছে৷
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সাধারণ যন্ত্রাংশ দিয়েই ছোট স্যাটেলাইট তৈরি করা হয়৷ তাই সহজেই অনেক স্যাটেলাইট তৈরি করা সম্ভব৷ উদ্দেশ্য অনুযায়ী অপ্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ ফেলেও দেওয়া যায়৷ স্পেস-এক্স কোম্পানি স্টারলিংক প্রকল্পের আওতায় ১২,০০০ ছোট স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের পরিকল্পনা করছে৷ এভাবে বিশ্বের প্রত্যন্ত প্রান্তেও ইন্টারনেট পরিষেবা পৌঁছে দেওয়া যাবে৷
এমন বড় প্রকল্পের দৌলতে স্যাটেলাইট উৎপাদনের প্রক্রিয়াও স্বয়ংক্রিয় হয়ে উঠছে৷ অনেকটা গাড়ি শিল্পের সঙ্গে এই প্রবণতার তুলনা করা যায়৷ এ ক্ষেত্রে ইউরোপের তুলনায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলি অনেক এগিয়ে রয়েছে৷ ক্লাউস শিলিং বলেন, ‘‘এমন বাজারে অংশ নেবার লক্ষ্য ইউরোপের ত্যাগ করা উচিত নয়৷ বরং তাতে অংশ নিয়ে ভবিষ্যতে এর বিপুল ও বাণিজ্যিক সম্ভাবনা কাজে লাগানো উচিত৷''
জার্মানির আউগসবুর্গ শহরের রকেট ফ্যাক্টরি সেই সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে আগ্রহী৷ সেটিছোট স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের জন্য প্রয়োজনীয় লঞ্চার তৈরি করছে৷ সেই লক্ষ্যে ছোট রকেট তৈরি করা হয়েছে৷ এখনো পর্যন্ত আরিয়ানের মতো বড় রকেট উৎক্ষেপণের উপর ছোট স্যাটেলাইটগুলিকে নির্ভর করতে হয়৷ ব্যয় তেমন বেশি না হলেও উৎক্ষেপণের জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়৷ রকেট ফ্যাক্টরির প্রধান ইয়োর্ন স্পুয়রমান বলেন, ‘‘বড় লঞ্চার অনেকটা বাসের মতো৷ সবাই ওঠা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়৷ ছোট লঞ্চার ট্যাক্সির মতো৷ আরও সস্তায় ও দক্ষতার সঙ্গে আপনাকে গন্তব্যে পৌঁছে দেয়৷ ছোট স্যাটেলাইটের সমষ্টি সৃষ্টি করার ক্ষেত্রে এটা ভালো সমাধানসূত্র৷''
প্রায় একশো কোম্পানি মিনি লঞ্চার তৈরির কাজ করছে৷ অনেক কোম্পানিই হয়তো শেষ পর্যন্ত হাল ছেড়ে দেবে৷ জার্মানিতে এমন তিনটি কোম্পানি রয়েছে৷ রকেট ফ্যাক্টরি স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের ক্ষেত্রে সাশ্রয়ী ও নমনীয় সমাধানসূত্র দিতে চায়৷ আরিয়ান রকেটে উৎক্ষেপণের জন্য ১৩ কোটি ইউরো মাসুলের বদলে দশ লক্ষ ইউরো গুনলেই চলবে৷
ব্যয়ভার কম রাখতে কোম্পানির লঞ্চারে গাড়ি শিল্পে ব্যবহৃত অনেক উপাদান রাখা হচ্ছে৷ তবে প্রপালশন সিস্টেম একেবারে নতুন করে ডিজাইন করা হচ্ছে এবং অনেক যন্ত্রাংশ থ্রিডি প্রিন্টিংয়ের মাধ্যমে উৎপাদন করা হচ্ছে৷ আরিয়ানের মতো বড় লঞ্চার অত্যন্ত জটিল এবং এর জন্য আলাদা করে অসংখ্য উপাদান তৈরি করতে হয়৷ সেই কাজে অনেক সময় লাগে৷ সেই তুলনায় রকেট ফ্যাক্টরি মাত্র তিন বছরের মধ্যেই প্রথম লঞ্চার তৈরির লক্ষ্য স্থির করেছে৷ স্টেফান ব্রিশেংক বলেন, ‘‘মাসে একবার উৎক্ষেপণ করে আমারা বাণিজ্যিক স্বার্থ অক্ষত রাখতে পারবো৷ কিন্তু আমরা সপ্তাহে একটি উৎক্ষেপণ করতে চাই৷ গোটা প্রক্রিয়া এমনভাবে সাজাতে হবে, যাতে বিষয়টি আর নজর কাড়ার মতো না থাকে৷ যেমন বিমানে ব্রেমেন থেকে মিউনিখ যাওয়া আজ আর কোনো বিশেষ ঘটনা নয়৷ রকেটের ক্ষেত্রেও আমরা এমনটা দেখতে চাই৷''
ছোট স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের এমন ব্যবস্থা কক্ষপথে পাঠানোর ব্যয় অনেক কমিয়ে দেবে৷ ফলে এ ক্ষেত্রে অসংখ্য নতুন উদ্যোগের সম্ভাবনার দ্বার খুলে যাচ্ছে৷
কনি বরমান/এসবি