মহাকাশে ক্ষুদ্র স্যাটেলাইটের ভিড় বাড়ছে
১১ জানুয়ারি ২০২১মহাকাশপ্রযুক্তি ও মহাকাশে উড়াল আজ আধুনিক জীবনের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে পড়েছে৷ বিদ্যুৎ সংযোগের মতোই অপরিহার্য হয়ে পড়েছে, বলা চলে৷ এই ক্ষেত্র নতুন ও ভবিষ্যৎ প্রযুক্তির চাবিকাঠি৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রায় ১০ শতাংশ অর্থনৈতিক কার্যকলাপ ইতোমধ্যেই স্যাটেলাইট ন্যাভিগেশনের উপর নির্ভর করে৷
২০১৪ সালে ইইউ কোপার্নিকাস কর্মসূচি চালু করে৷ জনগণের অর্থে চালিত এই উদ্যোগের আওতায় একাধিক স্যাটেলাইট নির্দিষ্ট কক্ষপথ থেকে পৃথিবী পর্যবেক্ষণ করছে৷ স্যাটেলাইট থেকে পাঠানো তথ্য নতুন অ্যাপ্লিকেশন সৃষ্টির কাজে লাগানো হচ্ছে৷ যেমন জাহাজে জ্বালানীর সাশ্রয় বাড়ানোর সফটওয়্যার তৈরি করা হচ্ছে৷ এই প্রযুক্তির দৌলতে কর্মসংস্থানও বাড়ছে৷
স্যাটেলাইট থেকে পাঠানো তথ্য কাজে লাগিয়ে বাজারে অনেক পণ্য তৈরি করা যেতে পারে৷ রিমোট সেন্সিং সলিউশনস মিউনিখ-ভিত্তিক একটি কোম্পানি, যেটি পরিবেশের উপর নজর রাখার কাজে দক্ষ৷ এই শিল্পক্ষেত্রে বেশি মুনাফার আশা করা যায় না৷ তবে কোপার্নিকাস প্রকল্পের আওতায় সব তথ্য বিনামূল্যে পাওয়া যায় বলে আয় কিছুটা বেড়েছে৷ এই কোম্পানি সেই ডেটা ব্যবহার করে মূল্যবান তথ্য সৃষ্টি করছে৷ আরএসএস কোম্পানির প্রধান ফ্লোরিয়ান সিগার্ট বলেন, ‘‘ডেটা যখন বিনামূল্যে অথবা কম দামে পাওয়া যায়, তখন তথ্য সৃষ্টির গোটা প্রক্রিয়ার ব্যয়ও কমে যায়৷ মানুষের কেনার আগ্রহও বেড়ে যায়৷''
কোম্পানির গ্রাহকদের মধ্যে ডাব্লিউডাব্লিউএফ-এর মতো প্রকৃতি সংরক্ষণ গোষ্ঠী এবং বেশ কিছু সরকারি প্রতিষ্ঠানও রয়েছে৷ গাছপালার উপর জমির ব্যবহার ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব পর্যবেক্ষণ করা কোম্পানির অন্যতম কাজ৷ স্যাটেলাইট বিস্তীর্ণ এলাকার ছবি তুলতে পারে৷ প্রতি মরসুমে সাহেল এলাকার গাছপালার উপর নজর রাখা যায়৷ ফ্লোরিয়ান সিগার্ট বলেন, ‘‘মহাকাশচারীরা বলেন, একবার আইএসএস-এ থাকার পর পৃথিবীর সঙ্গে তাঁদের ভিন্ন ধরনের সম্পর্ক গড়ে ওঠে৷ স্যাটেলাইট থেকেও প্রায় একই রকম দৃশ্য দেখা যায়৷ আফ্রিকা, দক্ষিণ অ্যামেরিকায় কী হচ্ছে, আমরা তা দেখতে পাই৷ দূর থেকে পর্যবেক্ষণ করলে আমরা আরও স্পষ্টভাবে সংযোগ বুঝতে পারি৷''
কোপার্নিকাস প্রকল্পের স্যাটেলাইটগুলি খুব বড় ও ভারি৷ ওজন কয়েক টন পর্যন্ত হতে পারে৷ তৈরি করতে অনেক বছর সময় লাগে৷ প্রত্যেকটি স্যাটেলাইট অনবদ্য৷ অনেক যন্ত্রাংশ বা উপাদান বিশেষভাবে তৈরি করতে হয়৷ সে কারণে এমন স্যাটেলাইট বেশ দামী হয়৷ একটি স্যাটেলাইটের মূল্য কয়েক কোটি ইউরো হতে পারে৷ সে তুলনায় মিনি স্যাটেলাইটের দাম অনেক কম৷ আকারে ওয়াইনের বোতলের মতো ছোট হতে পারে৷
ছোট আকারের স্যাটেলাইটের আবির্ভাবের ফলে নতুন এক যুগের সূচনা হয়েছে৷ দাম অনেক কম হলেও সেগুলি গুরুত্বপূর্ণ পরিষেবা দিতে পারে৷
সান ফ্রানসিস্কো শহরের প্ল্যানেট ল্যাব কোম্পানি ইতোমধ্যেই মিনি স্যাটেলাইটের সাহায্যে পৃথিবীর ছবি তুলছে৷
গোটা ইউরোপে ছাত্রছাত্রীরা এমন ছোট ডিভাইস তৈরির কাজ শিখছেন৷ ন্যানো স্যাটেলাইট এক ধরনের ছোট স্যাটেলাইট৷ বার্লিনের প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক টিম বেশি পরিমাণ ডেটা ট্রান্সফার সম্ভব করতে চারটি এমন স্যাটেলাইট কাজে লাগাচ্ছে৷ দুই বছর আগে সেগুলি কক্ষপথে পাঠানো হয়েছিল৷ পৃথিবীর উপর নজর রাখার কাজে ও বিশ্বজুড়ে যোগাযোগের ক্ষেত্রে ছোট স্যাটেলাইট বিপ্লব আনতে পারে৷
কনি বরমান/এসবি