সকালে ইস্তফা, বিকেলে ফের বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার
২৮ জানুয়ারি ২০২৪বিকেলেই বিজেপির সমর্থন নিয়ে ফের মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নেন তিনি।
ভারতে বিজেপি বিরোধীদের ইন্ডিয়া ব্লক বড় ধাক্কা খেল বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞেরা। নীতীশ যে আবার বিজেপির জোট ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স- এনডিএতে ফিরতে পারেন, সেই জল্পনা ক্রমশ দৃঢ় হচ্ছিলো। নীতীশকে আটকানোর চেষ্টা করেছিলেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। নীতীশ ফিরেছেন বিজেপির কাছেই।
২০০৫ সালে বিজেপির হাত ধরেই প্রথম বার বিহারের মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন জনতা দল (ইউনাইটেড)- জেডিইউ এর প্রতিষ্ঠাতা নীতীশ কুমার। তারপর কখনো বিজেপির সঙ্গে থেকেছেন, কখনো একাই লড়েছেন নীতীশ। এর আগে বলেছিলেন, বিজেপির সঙ্গে কখন তিনি হাত মেলাবেন না। কিন্তু রোববার বিকালে বিহারে পুনর্গঠিত এনডিএ-র মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে তিনি শপথও নিলেন। ফলে বড়সড় ধাক্কার মুখে পড়ল ‘ইন্ডিয়া' ব্লক।
বিরোধী জোট ছেড়ে নীতীশ কুমার ফের বিজেপির হাত ধরার পর জেডিইউ নেতা কেসি ত্যাগী বলেন, কংগ্রেস ষড়যন্ত্র করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মাধ্যমে বিরোধী জোটের প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে মল্লিকার্জুন খাড়গের নাম বলিয়েছিল।ইন্ডিয়া জোটেরনেতৃত্ব চুরি করতে চেয়েছিল কংগ্রেস। এর আগে মুম্বইয়ের বৈঠকে সর্বসম্মতিক্রমে এটাই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বিরোধী জোট কোনও প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী ছাড়াই ভোটে লড়বে। এদিকে পশ্চিমবঙ্গে ইন্ডিয়া জোট কার্যত ভেঙে পড়ার মুখে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আসন সমঝোতার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছেন। কেন্দ্রীয় স্তরে ইন্ডিয়া জোটের সঙ্গে মমতা থাকবেন বললেও জোটের প্রাসঙ্গিকতা কমে যাচ্ছে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা।
রোববার সকালে ইস্তফা দেয়ার পর ভারতীয় সংবাদসংস্থা এএনআইকে নীতীশ বলেছিলেন, "আজ মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছি। আমরা যে নতুন মহাজোট তৈরি করেছি সেটি ভালো অবস্থায় নেই। পরিস্থিতি ভালো মনে হচ্ছে না।"
বিকালে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথগ্রহণের পরই নীতীশ কুমারকে অভিনন্দন জানান ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
এনডিএ-র ১২৮ জন বিধায়কের সমর্থন নিয়ে সরকার গঠনের দাবি করেছিলেন নীতীশ কুমার। তার সঙ্গে মন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সম্রাট চৌধরি। বিহারে বিজেপি পরিষদীয় দলের নেতা নির্বাচিত হয়েছেন সম্রাট চৌধরি এবং উপ-নেতা বিজয় সিংহ।
কংগ্রেসের রাহুল গান্ধী ছাড়াও বেশ কয়েকজন অ-কংগ্রেসি নেতারাও বিরোধী জোটের মুখ হওয়ার দৌড়ে ছিলেন। তাদের মধ্যে অন্যতম দুজন হলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং নীতীশ কুমার। তবে ইন্ডিয়া ব্লকের ভিত কার্যত নীতীশের হাতেই স্থাপিত হয়েছিলো। আজকের পর সেই জোট কতটা প্রাসঙ্গিক থাকছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
রাহুল গান্ধীর 'ভারত জোড়ো'
রোববারেই উত্তরবঙ্গের জলপাইগুড়িতে দেড় কিলোমিটার রোড শো করেন রাহুল গান্ধী। তার পাশে ছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরী। পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়িতে ভারত জোড়ো ন্য়ায় যাত্রায় এসে কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ তীব্র কটাক্ষ করেন নীতীশ কুমারের বিরুদ্ধে তিনি বলেন, "এটা আশ্চর্যের কিছু নয় যে নীতীশ কুমার পদত্যাগ করেছেন। তিনি পাকা রাজনীতিবিদ। তিনি বেশ কয়েক বছর ধরে মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। কিন্তু তিনি তার রাজনৈতিক রং পরিবর্তন করে চলেছেন। তিনি গিরগিটিদেরও কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছেন। বিহারের মানুষ তাকে উপযুক্ত জবাব দেবে।''
জলপাইগুড়ির সভায় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুপস্থিতি প্রসঙ্গে জয়রাম রমেশ বলেন, ''তিনি যদি যোগ দেন তাহলে স্বাগত। উনি ব্যস্ত মুখ্যমন্ত্রী।'' যদিও রাহুলের সভায় তৃণমূলের কাউকেই দেখা যায়নি।
জলপাইগুড়ির কর্মসূচি সেরে শিলিগুড়ি পৌঁছান রাহুল গান্ধী। সেখানেও থানা মোড় থেকে এয়ার ভিউ মোড় পর্যন্ত মিছিল করার কথা তার। সেখানে সভা শেষে শিলিগুড়ির এয়ার ভিউ মোড় থেকে উত্তর দিনাজপুরের সোনাপুরে পৌঁছানোর কথা কংগ্রেস নেতার।
ইন্ডিয়া জোটের মিছিলে তৃণমূল নেতাদের দেখা না গেলেও রোববারেই কলকাতায় কেন্দ্রীয় বঞ্চনার অভিযোগে মিছিল করে তৃণমূল কংগ্রেস। গোলপার্ক থেকে গড়িয়াহাট হয়ে মিছিল যায় হাজরায়। মিছিলে যোগ দেন তৃণমূল নেতা ফিরহাদ হাকিম, দেবাশিস কুমাররা।
আরকেসি/এডিকে (রয়টার্স, আনন্দবাজার পত্রিকা, হিন্দুস্তান টাইমস বাংলা, এবিপি আনন্দ)