সংবাদে গুজব, জলবায়ু পরিবর্তন ও গণমাধ্যমের এক্তিয়ার
১৯ জুন ২০২৪সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্ব অর্থনীতি ফোরামের মতো প্রতিষ্ঠান তাদের প্রতিবেদনগুলিতে বলে, বর্তমান বিশ্বে চ্যালেঞ্জ মূলত দুটি ভাগে বিভক্ত: জলবায়ু পরিবর্তন ও গুজব৷
ইচ্ছাকৃতভাবে ভুল ও বিভ্রান্তিকর তথ্যের সাথে নকল ছবি দিয়ে গুজব ছড়ানোকে সাংবাদিকতার পরিভাষায় বলা হয় ‘ফেক নিউজ'৷ এই ফেক নিউজ গণতান্ত্রিক চর্চায় আঘাত করে ও সামাজিক বিভেদকে আরো গভীরে প্রোথিত করে৷
অন্যদিকে, জলবায়ু পরিবর্তন যেভাবে পৃথিবীর পরিবেশকে ধ্বংস করছে, তা এক সময় এই গ্রহে মানবজীবনকে সংকটের মুখে ফেলবে৷
সমস্যার বিচারে গুজব বা ফেক নিউজকে স্বল্পমেয়াদী বলে ধরা হয়, উলটো দিকে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের মেয়াদ দীর্ঘ৷
এই দুই একসাথে ঘটলে যা হয়
এই প্রশ্নটিই ডয়চে ভেলের বার্ষিক সম্মেলন গ্লোবাল মিডিয়া ফোরামে বারবার আলোচিত হয় এবছর৷ মার্কিন অর্থায়নে কাজ করা সংস্থা ইন্টারনিউজের রিসার্চ ম্যানেজার ইসাবেল শ্লেপফার বলেন যে জলবায়ু পরিবর্তনকে ঘিরে ছড়ানো গুজব খুবই বড় সমস্যা৷ জুন মাসে তার সংস্থা সাংবাদিকতা ও পরিবেশ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে৷ ‘কভারিং দ্য প্ল্যানেট' শিরোনামের এই প্রতিবেদনের জন্য ৭০০জন সাংবাদিকের সাথে কথা বলা হয়৷
ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘৪৫ শতাংশেরও বেশি সাংবাদিক মনে করছেন, গুজব বেড়েছে মূলত সোশাল মিডিয়াকে ঘিরেই৷ জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক আলোচনাকে বিকৃত করে, সাধারণ মানুষের জীবনে এর প্রভাবের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় থেকে আলোচনা সরিয়ে নিয়ে যায়৷''
বিশেষজ্ঞদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকাতে পারে সরকারি নীতি৷ কিন্তু এই প্রক্রিয়ায় সাথে নেওয়া উচিত সাধারণ জনগণকেও৷ তাই গুজবের বাড়াবাড়ি অত্যন্ত সমস্যাজনক৷''
জলবায়ু পরিবর্তনকে ‘অস্বীকার'
কখনো কখনো জলবায়ু পরিবর্তন ও তাকে ঘিরে চলা ফেক নিউজকে অস্বীকার করাটাও রাজনৈতিক প্রচারের অংশ হতে পারে, বা কোনো বিশেষ গোষ্ঠীও তা ছড়াতে পারে৷ যেমন ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের নতুন পরিবেশনীতির বিরোধিতা করা কিছু কৃষক সংগঠন৷
আবার কারো কারো মতে জলবায়ু পরিবর্তন বলে কিছু নেই, কারণ, তাদের মতে, খরা বা চরম আবহাওয়ার ঘটনা পৃথিবীর স্বাভাবিক প্রাকৃতিক চক্রের অংশ৷
কিন্তু জানুয়ারি মাসে ব্রিটিশ সংস্থা সেন্টার ফর কাউন্টারিং ডিজিটাল হেট তাদের প্রতিবেদনে জানায় যে, জলবায়ু পরিবর্তনকে অস্বীকার করার মধ্যেও কিছু নতুন ধরন দেখা যাচ্ছে, যা সাংবাদিকদের মাথায় রাখা উচিত৷ এর নাম দিয়েছেন তারা ‘নিউ ডিনায়াল'৷ লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসের গবেষকরা তাকে বলছেন ‘ডিলেইজম' হিসাবে৷
গ্লোবাল মিডিয়া ফোরামে যোগ দেওয়া পরিবেশকর্মী আনা নানু বলেন, ‘‘ছয় বছর আগে এমন নিউ ডিনায়াল ইউটিউবে জলবায়ু পরিবর্তনকে অস্বীকার করা কন্টেন্টের ৩৫ শতাংশ ছিল, এখন এমন কন্টেন্টই ৭০ শতাংশ৷ গুজবের ধরন সোজাসুজি অস্বীকার করা থেকে বদলেছে৷ বর্তমানে, তাদের নজর জলবায়ু পরিবর্তনের সমাধানকে আক্রমণ করার দিকে, যা বিজ্ঞান ও বৈজ্ঞানিক সমাধান দুটোকেই অস্বীকার করে৷''
সম্মেলনে যোগ দেওয়া বেশিরভাগ অংশগ্রহণকারীই বলেন, এই সমস্যা মোকাবিলায় অস্ত্র করতে হবে সঠিক তথ্য ও বিজ্ঞানকেই৷ কেউ কেউ বললেন এমন তথ্যকে সহজ ভাষায় সকলের কাছে পৌঁছে দেওয়া ও বকিজ্ঞানকে সহজলভ্য করার প্রয়োজনীয়তার কথাও৷ দু'টি সমস্যার সার্বিক প্রভাব যে মানুষের ওপরেই এসে পড়ছে, তাই সমাধান ভাবনার কেন্দ্রেও রাখতে হবে মানুষকেই, বলেন রয়টার্স ইন্সটিটিউট অপ দ্য স্টাডি অফ জার্নালিজমের পরিচালক, মিতালি মুখার্জি৷
ক্যাথরিন শেয়ার/এসএস