মরুভূমিতে চাষ
৫ আগস্ট ২০১৫প্রচণ্ড গরম, বৃষ্টি প্রায় নেই বললেই চলে, প্রখর রৌদ্র – নেগেভ মরুভূমির গাছপালাকে এমন এক কঠিন পরিবেশের ধাক্কা সামলাতে হয়৷ সেটা তারা কী ভাবে করে, সেটাই হল ব্লাউস্টাইন ইনস্টিটিউটের গবেষক স্ডে বোকার-এর গবেষণার বিষয়৷ স্ডে ইসরায়েলের নাগরিক৷
বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা করে দেখছেন, কঠিন পরিবেশ সত্ত্বেও কী ভাবে শস্য বা শাকসবজি উৎপাদন করা যায়৷ সে জন্য তাঁরা মাঝেমধ্যে গাছপালাগুলোকে গাড়িতে চড়িয়ে ঘোরান, যদিও ধীরেসুস্থে৷ এর মাধ্যমে এক একটি কন্টেনারে বিভিন্ন ধরনের পরিবেশ সৃষ্টি করা যায়৷ যন্ত্রটি উদ্ভাবন করেছেন সেচ বিশেষজ্ঞ নাফতালি লাজারোভিচ ও তাঁর সহকর্মীরা৷ বর্তমানে তারা ক্যাপসিকাম নিয়ে পরীক্ষা চালাচ্ছেন৷ ইয়াকব-ব্লাউস্টাইন মরুভূমি গবেষণা কেন্দ্রের নাফতালি লাজারোভিচ বলেন, ‘‘বিশেষ বিশেষ পরিস্থিতিতে জল কী ভাবে মাটি থেকে উদ্ভিদে ওঠে, সেটা আমরা বুঝতে চাই৷ প্রক্রিয়াটা বোঝার পর আমরা সেটিকে অপটিমাইজ করতে চাই – যেমন কখন এবং কতোবার সেচ দিতে হবে, তা দেখতে চাই৷''
ব্লাউস্টাইন ইনস্টিটিউটে মৌলিক গবেষণা চলে৷ কিন্তু চাষিরা তো আর সেই গবেষণার ফলাফল পড়ে দেখবেন না, লাজারোভিচ সেটা ভালো করেই জানেন৷ কাজেই তিনি মাঝেমধ্যে লোহিত সাগরের দিকে রওনা হয়ে যান৷ গাড়িতে ঘণ্টা দেড়েক গেলেই পাওয়া যাবে আরাভা রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট সেন্টার৷ নাফতালি জানতে চান, ফসল বাড়ানোর জন্য বাস্তবে কী করা প্রয়োজন৷
মাছের বর্জ্য থেকে উদ্ভিদের সার
আঙুরফল থেকে শুরু করে ক্যাপসিকাম কিংবা মিলেট – আসল প্রশ্ন হল, বাস্তব পরিস্থিতিতে এই সব গাছ কিংবা উদ্ভিদ ঠিক সেইরকম আচরণ করে কিনা, পরীক্ষাগারে মৌলিক গবেষণা থেকে যেমনটি দেখা গেছে৷ তবে সেখানে শুধু খেজুর কিংবা মিলেটই নেই৷ মাছ নিয়েও গবেষণা চলেছে৷ সারা বিশ্বে খাদ্যের একটি বড় উৎস হল মাছ৷ মাছ খুব তাড়াতাড়ি বাড়ে – বললেন স্নাতকোত্তর গবেষক টম গ্র্যোনফেল্ড৷ মাছের বর্জ্য আবার উদ্ভিদদের জন্য সারের কাজ করতে পারে৷ একবার জল থাকলে, তা সার্কুলেট করানো যেতে পারে: যেমন এখানে এই চৌবাচ্চার জল পরে পাশের গ্রিনহাউসে স্যালাডের সবজি চাষের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে৷ ইয়াকব-ব্লাউস্টাইন মরুভূমি গবেষণা কেন্দ্রের টম গ্র্যোনফেল্ড বলেন, ‘‘এখান দিয়ে একটা পাইপ গেছে, যা গাছগুলোর গোড়ায় অক্সিজেন দিচ্ছে৷ গাছগুলো গজাচ্ছে কিন্তু পানিতে৷ তারা জল থেকে নাইট্রেট শুষে নিচ্ছে; পরে পরিশুদ্ধ জল মাছেদের চৌবাচ্চায় ফিরে যাচ্ছে৷''
মরুভূমিতে ধানচাষ সম্ভব নয়৷ কিন্তু এখানে ড্রিপ ইরিগেশন বা ফোঁটা ফোঁটা সেচের মাধ্যমে ধানচাষের প্রচেষ্টা করা হচ্ছে৷ ইয়াকব-ব্লাউস্টাইন মরুভূমি গবেষণা কেন্দ্রের নাফতালি লাজারোভিচ বলেন, ‘‘ভবিষ্যতে যে ইসরায়েলে ধানের চাষ হবে, এমন বলছি না৷ কিন্তু এখানে অন্যান্য দেশ থেকে অনেক স্বেচ্ছাসেবক আসেন, এখানে কাজ করেন৷ তাদের একাংশ এসেছেন পূর্ব এশিয়া থেকে৷ তারা ধানচাষের সঙ্গে পরিচিত বলে এখানেও ধানগাছ নিয়ে ড্রিপ ইরিগেশন শিখছেন৷''
এশিয়ার এই ছাত্রছাত্রীরা যখন স্বদেশে ফিরবেন, তখন তাঁরা জানবেন, কম পানিতে কী ভাবে ধানচাষ করা যায়৷ এছাড়া, ধানচাষ থেকে যে নাইট্রোজেন বেরোয়, তাও কমানো যাবে৷