মঙ্গলগ্রহে প্রাণের সম্ভাবনা উজ্জ্বল করে তুলছে
১৩ এপ্রিল ২০২১মার্স এক্সপ্রেস যানের মধ্যে একটি রাডার যন্ত্রও রয়েছে৷ সেটির সাহায্যে প্রথমবার মঙ্গলগ্রহের মাটির প্রায় পাঁচ কিলোমিটার গভীরের অবস্থা জানা গেছে৷ বিশাল পরিমাণ পানির রহস্য সমাধানের লক্ষ্যে সেই প্রচেষ্টা গুরুত্বপূর্ণ৷
দক্ষিণ মেরুতে রাডার বরফের স্তর পরিমাপ করে দেখিয়েছে, যে সেটির আয়তন প্রায় ইউরোপ মহাদেশের সমান৷ সেই বরফ গলে গেলে গোটা মঙ্গলগ্রহ ১১ মিটার পানির নীচে চলে যাতে পারে৷ ২০১৮ সালে সেই রাডার উল্লেখযোগ্য একটি আবিষ্কার করেছিল৷ মাটির নীচের হ্রদে তরল পানির খোঁজ পাওয়া গেল, যা কিনা প্রাণের অস্তিত্বের পূর্বশর্ত৷ মঙ্গলগ্রহের উপরিভাগের মসৃণ রেখার নীচে সাদা অংশে তা চেনা যায়৷
যানের স্পেকট্রোমিটার আরেকটি উল্লেখযোগ্য আবিষ্কার করেছে৷ মঙ্গলগ্রহের বায়ুমণ্ডলে মিথেন গ্যাসের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে৷ এক মার্কিন মহাকাশযান মাটিতেও সেই উদ্বায়ী গ্যাস শনাক্ত করেছে৷ সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, দুই যানই একই জায়গায় একই সময়ে সেই আবিষ্কার করেছে৷ গ্রহ সংক্রান্ত ভূতাত্ত্বিক প্রো. রাল্ফ ইয়াউমান এই আবিষ্কারের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘‘সত্যি বলতে কি এই মিথেন আসলে অদ্ভুত এক অণু৷ অতিবেগুনি রশ্মির আঘাতে সেটি ভেঙে যায়৷ অর্থাৎ বায়ুমণ্ডলে মিথেনের অস্তিত্বের অর্থ হলো, হাজার বছরের বেশি আগে সেটি ছিল না৷''
খুব সম্ভবত সেই মিথেন গ্যাস মাটির নীচ থেকে বেরিয়ে আসছে৷ কিন্তু কীভাবে সেটি সৃষ্টি হচ্ছে? মাটির নীচে বাসা বাঁধা জীবাণু কি তার জন্য দায়ী? পৃথিবীর বুকে পার্মাফ্রস্টের ক্ষেত্রে যেমনটা হয়ে থাকে? নাকি কোনো ভূতাত্ত্বিক প্রক্রিয়ার কারণে মিথেন সৃষ্টি হচ্ছে? আবহাওয়ার তারতম্যের ফলে আগ্নেয়গিরির পাথর ভেঙে গেলে এমনটা ঘটতে পারে৷ মার্স এক্সপ্রেস সেই প্রশ্নের জবাব দিতে পারেনি৷
তাই এবার ইউরোপের দ্বিতীয় যান হিসেবে ‘ট্রেস গ্যাস অরবিটার' মঙ্গলগ্রহের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছে৷ যানটি প্রায় দেড় বছর ধরে খুব কাছ থেকে লাল গ্রহ প্রদক্ষিণ করে তারপর পরিমাপের কাজ শুরু করেছে৷
‘ট্রেস গ্যাস অরবিটার' মিথেনসহ সমগোত্রীয় গ্যাস পরিমাপ করবে৷ মঙ্গলগ্রহে সূর্যোদয় বা সূর্যাস্তের সময় এমনকি বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন স্তরও পরীক্ষা করা হবে৷ যানটির মধ্যে অত্যন্ত সূক্ষ যন্ত্রপাতি এমনকি এক লাখ কোটি কণার মধ্যে ৫০টি মিথেনের অণু শনাক্ত করতে পারবে৷
যানের একটি ক্যামেরা মিথেনের সম্ভাব্য উৎস দেখানোর চেষ্টা করবে৷ সেটি অসাধারণ ছবি পাঠিয়ে চলেছে৷ তবে এখনো পর্যন্ত ‘ট্রেস গ্যাস অরবিটার' মিথেনের খোঁজ পায় নি৷ প্রো. ইয়াউমান বলেন, ‘‘এই মিশন আরও দীর্ঘ সময় ধরে সক্রিয় থাকলে তবেই গুরুত্বপূর্ণ পরিমাপ চালিয়ে যেতে পারবে৷ বিশেষ করে মিথেনের সন্ধান পাওয়া বেশ কঠিন কাজ৷''
২০২২ সালে ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থা মঙ্গলগ্রহে এই প্রথম কোনো রোভার পাঠাবে৷ সেটির নাম ‘রোজালিন্ড ফ্রাংকলিন'৷ সেটি কয়েক মিটার গভীর পর্যন্ত মাটি খুঁড়ে জটিল অরগ্যানিক অণুর সন্ধান করবে৷ এমনকি মৃত অণুর চিহ্ন শনাক্ত করারও চেষ্টা করবে৷ মহাকাশের বিপজ্জনক বিকিরণ মঙ্গলগ্রহের মাটি পর্যন্ত পৌঁছে যায় বলে কোনো জীবের পক্ষে মাটির নীচে থাকাই নিরাপদ৷ উপরে সেগুলির নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবার আশঙ্কা বেশি৷
কর্নেলিয়া বরমান/এসবি