মঙ্গলগ্রহে চমকপ্রদ আবিষ্কারের ধারা
১২ এপ্রিল ২০২১আমাদের প্রতিবেশী গ্রহ এখন প্রায় মরুভূমি হয়ে উঠলেও অতীতে সম্ভবত প্রাণে ভরপুর ছিল৷ হয়তো নাটকীয় জলবায়ু পরিবর্তনেরও সাক্ষী ছিল৷ এখনো সেই অবস্থার কিছু চিহ্ন চোখে পড়ে৷
২০০৪ সাল থেকে মার্স এক্সপ্রেস জটিল যন্ত্রপাতির সাহায্যে মঙ্গলগ্রহে অনুসন্ধান চালিয়ে যাচ্ছে৷ ইউরোপের উদ্যোগে কোনো গ্রহ সম্পর্কে সাক্ষাৎ গবেষণার প্রথম প্রচেষ্টা এটি৷ গ্রহ সংক্রান্ত ভূতাত্ত্বিক প্রো. রাল্ফ ইয়াউমান বলেন, ‘‘বলতেই হবে যে, প্রযুক্তিগত দিক থেকে এটা সত্যি অসাধারণ সাফল্য৷ একটি মহাকাশযান কোনো রক্ষণাবেক্ষণ ছাড়াই প্রায় ২০ বছর ধরে চরম বিকিরণ সত্ত্বেও অত্যন্ত কঠিন পরিবেশে ভুলত্রুটি ছাড়াই কাজ করে চলেছে! সত্যি খুবই ভালো কথা৷''
মার্স এক্সপ্রেসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্র হলো বিশেষভাবে তৈরি এক ক্যামেরা৷ রাল্ফ ইয়াউমানও সেটি তৈরির কাজে অংশ নিয়েছিলেন৷ সেই ক্যামেরা প্রায় নিখুঁত ছবি তুলতে পারে৷ সেটি কাজে লাগিয়ে প্রথমবার মঙ্গলগ্রহের ত্রিমাত্রিক ও রঙিন মানচিত্র তৈরি করা সম্ভব হয়েছে৷
সেই সব মডেলের ভিত্তিতে সেখানকার ভূতাত্ত্বিক বিকাশ ও জলবায়ুর ইতিহাস সম্পর্কে অনেক নতুন তথ্য পাওয়া যাচ্ছে৷ মঙ্গলগ্রহে পৌঁছানোর কিছুকাল পরেই এই যান জমাট পানি আবিষ্কার করেছিল, যার ফলে পৃথিবীতে সাড়া পড়ে যায়৷ ফলে সেখানে যে এককালে প্রচুর পরিমাণ পানি বয়ে যেতো, সেই তত্ত্বের সপক্ষে আরও প্রমাণ পাওয়া গেল৷ প্রোফেসর ইয়াউমান বলেন, ‘‘আমরা পাহাড়ের উচ্চতা সম্পর্কে জানি৷
উপত্যকার গভীরতাও আমাদের জানা আছে৷ তার ভিত্তিতে কোথায়, কতকাল ধরে কত পরিমাণ পানি ছিল, সে বিষয়ে ধারণা পাওয়া যায়৷ মঙ্গলগ্রহে কখনো প্রাণ ছিল কিনা, তা জানার জন্য এই তথ্য অত্যন্ত জরুরি৷ ভবিষ্যতেও সেখানে বসতি স্থাপনের ক্ষেত্রে সেই জ্ঞান কাজে লাগবে৷''
সেই এলাকার উপর দিয়ে যে নদী বয়ে যেতো, সেটি অনেকটা পৃথিবীর রাইন নদীর মতো৷ এমনকি ঠিক রাইনের মতো সেই নদীও সেকেন্ডে ৩,০০০ থেকে ৫,০০০ ঘন মিটার পানি পরিবহণ করতো৷
মার্স এক্সপ্রেস মঙ্গলগ্রহের সবচেয়ে বড় আগ্নেয়গিরির মধ্যে তাজা লাভার চিহ্নও পেয়েছে৷ মাত্র ২০ লাখ বছর আগে সেখানে অগ্নুৎপাত ঘটেছিল৷ আজও মাটির নীচে গরম অংশ থাকতে পারে, যা জীবাণুর বিকাশের সহায়ক হতে পারে৷
বিষুবরেখা ও ক্রান্তীয় অঞ্চলে আরও একটি চমকপ্রদ আবিষ্কার করেছে মার্স এক্সপ্রেস৷ সেখানে হিমবাহের চিহ্ন পাওয়া গেছে৷ প্রোফেসর রাল্ফ ইয়াউমান বলেন, ‘‘সেখানে কোনো এক সময়ে উলকার ধাক্কায় তৈরি গর্তে বরফ বয়ে যেত৷ প্রথম গর্তের নীচে দ্বিতীয় আরেকটি গর্ত রয়েছে৷ প্রথমটি উপচে পড়ে দ্বিতীয়টি ভরিয়ে দিতো৷ সেটা জেনে আমি খুবই অবাক হয়েছিলাম৷ পাহাড়ে বড় হয়েছি বলে সে সব খুব নিজের মনে হচ্ছিল৷''
হিমবাহের চিহ্ন দেখিয়ে দিচ্ছে যে, মঙ্গলগ্রহ এতই অস্থির যে সেখানখার বিষুবরেখা মেরুর দিকে অগ্রসর হচ্ছে এবং এর বিপরীতটাও ঘটছে৷ সে কারণে অতীত যুগে পানির গতিরও বার বার পরিবর্তন ঘটেছে৷
সাধারণত নদীর উৎপত্তি ও তার বিনাশের এমন চক্র পূর্ণ হতে লাখ লাখ বছর সময় লাগে৷ তবে সেগুলির চিহ্ন থেকে গেছে৷
কর্নেলিয়া বরমান/এসবি