ভারত-জার্মান আন্তঃসরকার পরামর্শ বৈঠক
৩১ মে ২০১১নতুনদিল্লিতে জার্মান চ্যান্সেলার আঙ্গেলা ম্যার্কেলের আজ ছিল ব্যস্ত কর্মসূচি৷কিন্তু ইরান তার আকাশসীমা দিয়ে জার্মান চ্যান্সেলারের বিমান যাবার অনুমতি দিতে দেরি করায় প্রায় দু ঘন্টা দেরিতে তিনি দিল্লি এসে পৌঁছোন৷ ফলে তাঁর কর্মসূচি সময়মত শুরু হতে পারেনি৷
ভারত-জার্মান আন্তঃসরকার পরামর্শ বৈঠকে বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়৷ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, তেজঃশক্তি, প্রতিরক্ষা, সন্ত্রাস, ব্যবসা বাণিজ্য থেকে দক্ষিণ ও পশ্চিম এশিয়া, লিবিয়াসহ উত্তর আফ্রিকার অশান্ত পরিস্থিতি এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা৷ আলোচনায় নেতৃত্ব দেন প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং এবং চ্যান্সেলার আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷ সই হয় চারটি সমঝোতা চুক্তিপত্র৷ বৃত্তিমূলক শিক্ষা, চিকিৎসা গবেষণা, নিউক্লিয়ার ফিজিক্স এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি৷
বৈঠক শেষে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি চুক্তি সই হওয়ায় সন্তোষ ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং ভারত-জার্মান কৌশলগত সহযোগিতার উজ্জ্বল ভবিষ্যতের ওপর জোর দেন৷ অনুরূপ মনোভাব ব্যক্ত করে জার্মান চ্যান্সেলার ম্যার্কেল ভারত-জার্মান কূটনৈতিক সম্পর্কের ৬০ বছরের সাফল্যের নজির উল্লেখ করে বলেন, ভবিষ্যৎ অগ্রগতির পথে ভারত আমাদের যাত্রাসঙ্গী৷ উল্লেখ্য, ভারত মুষ্টিমেয় দেশের অন্যতম যার সঙ্গে জার্মানি যৌথ ক্যাবিনেট বৈঠক করে৷
পরমাণু বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রসঙ্গে জার্মান চ্যান্সেলার বলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদনের পন্থাপদ্ধতি বেছে নেবার স্বাধীনতা প্রত্যেক দেশের আছে৷ জার্মানি আগামী এক দশকের মধ্যে পরমাণু বিদ্যুতের ব্যবহার বন্ধ করতে চায়৷ পরমাণু নিরাপত্তার ক্ষেত্রে জার্মানি বিশ্বের অগ্রণী৷ এবিষয়ে ভারতকে সাহায্য করতে পারে জার্মানি৷ প্রধানমন্ত্রী সিং বলেন, ভারতে পরমাণু বিদ্যুতের উৎপাদন খুবই কম, মাত্র ৩%৷ অথচ চাহিদা ক্রমবর্ধমান৷ পুনর্ব্যবহারযোগ্য বিদ্যুৎ জরুরি হলেও রাতারাতি পরমাণু শক্তি বা কয়লার ব্যবহার বাতিল করা ভারতের পক্ষে সম্ভব নয়৷ তবে পরমাণু সুরক্ষার সর্বাত্মক রক্ষাকবচের সংস্থান রাখা হবে৷
আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের শীর্ষপদে নিয়োগ প্রসঙ্গটি আলোচনায় না উঠলেও এবিষয়ে ভারতের অবস্থান স্পষ্ট৷ যোগ্যতাই একমাত্র মাপকাঠি হওয়া উচিত৷ কোন দেশ তার মাপকাঠি হতে পারেনা৷ বর্তমান বিশ্বের নতুন বাস্তব অবস্থার নিরিখে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সংস্কার জরুরি৷ এক্ষেত্রে ভারত-জার্মানি একমত৷
আজ সন্ধ্যায় রাষ্ট্রপতি ভবনে জার্মান চ্যান্সেলারকে আন্তর্জাতিক সমঝোতায় উল্লেখযোগ্য অবদান রাখার জন্য দেয়া হচ্ছে জহরলাল নেহেরু পুরস্কার৷ ভারতে জার্মান বর্ষের সূচনা করে ম্যার্কেল উপস্থিত থাকবেন এক সংগীতানুষ্ঠানে৷ আগামীকাল তাঁর স্বদেশে ফেরার কথা৷
আঙ্গেলা ম্যার্কেল’এর সঙ্গে এসেছেন এক উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল৷ যারমধ্যে আছেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ ৬জন ক্যাবিনেট মন্ত্রী এবং শীর্ষ বাণিজ্যিক কর্তাব্যক্তিরা৷
প্রতিবেদন: অনিল চট্টোপাধ্যায়, নতুনদিল্লি
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক