ব্রেক্সিটের পরেও আবার ব্রেক্সিটের হাতছানি
৫ অক্টোবর ২০২১দীর্ঘ আলাপ-আলোচনা, অনিশ্চয়তা ও দরকষাকষির পর ব্রিটেন ২০২০ সালের ৩১শে জানুয়ারি শেষ পর্যন্ত ইউরোপীয় ইউনিয়ন ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল৷ দ্বিপাক্ষিক বিচ্ছেদ চুক্তি স্বাক্ষরের পর ১১ মাসের অন্তর্বর্তীকালীন পর্যায়ে সব কিছু আগের মতোই ছিল৷ ২০২১ সালে চূড়ান্তভাবে ইইউ ত্যাগ করে ব্রিটেন৷ তারপর করোনা সংকটের কালো ছায়ার আড়ালে ব্রেক্সিটের প্রভাব ও পরিণতি ঢাকা পড়ে যায়৷ করোনা পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে ওঠার পর ব্রিটেনের অর্থনীতি একাধিক সংকট সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে৷ এরই মধ্যে ব্রেক্সিটের একটি ক্ষত নতুন করে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে আরও সংঘাতের আশঙ্কা বাড়িয়ে তুলছে৷
সংকটের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে ব্রিটেনের উত্তর আয়ারল্যান্ড প্রদেশ৷ ইইউ সদস্য রাষ্ট্র আইরিশ প্রজাতন্ত্রের সঙ্গে ব্রিটেনের একমাত্র স্থলসীমান্তে পণ্যের অবাধ চলাচল নিশ্চিত করতে ব্রেক্সিট চুক্তির মধ্যে নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড প্রোটোকল নামের বিশেষ ধারা রাখা হয়েছিল৷ ১৯৯৮ সালের আইরিশ শান্তি চুক্তির স্বার্থে ব্রিটেনের এই প্রদেশকে ইউরোপীয় অভিন্ন বাজারের মধ্যে রাখার চাপ মেনে নিতে কার্যত বাধ্য হয় প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের সরকার৷ ব্রিটেনের সংসদও ব্রেক্সিট চুক্তির অন্তর্গত সেই প্রোটোকল অনুমোদন করে৷ কিন্তু বাস্তবে উত্তর আয়ারল্যান্ড ও ব্রিটেনের মূল ভূখণ্ডের মধ্যে পণ্য চলাচলের ক্ষেত্রে এক অদৃশ্য সীমানা আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠায় একতরফাভাবে নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড প্রোটোকল বাতিল করার হুমকি দিচ্ছে ব্রিটেন৷ অন্যদিকে ইইউ ব্রেক্সিট চুক্তির মধ্যে কোনোরকম মৌলিক রদবদল করতে প্রস্তুত নয়৷
সোমবার ব্রিটেনের সরকার ইউরোপীয় ইউনিয়নকে আবার সতর্ক করে দিয়েছে৷ ক্ষমতাসীন রক্ষণশীল দলের সম্মেলনে ব্রেক্সিটের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী ডেভিড ফ্রস্ট জট ছাড়াতে বিকল্প আইনি খসড়া পেশ করার ঘোষণা করেছেন৷ চলতি মাসের শেষেই সরকার এমন চরম পদক্ষেপ নেবার তোড়জোড় করছে বলে তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন৷ তার আগে ব্রাসেলসের সঙ্গে আলোচনা করে শেষ চেষ্টা চালানোর ইচ্ছা প্রকাশ করেন ফ্রস্ট৷
ব্রিটেন ব্রেক্সিট চুক্তির ১৬ নম্বর ধারা কাজে লাগিয়ে এমন একতরফা পদক্ষেপ নিলে তার পরিণাম সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়েছে ইইউ৷ ব্রিটেন থেকে উত্তর আয়ারল্যান্ডে পণ্যের সরবরাহ আরও সহজ করতে ইইউ একগুচ্ছ প্রস্তাব রাখবে বলে জানিয়েছে৷ ইইউ কমিশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট মারস সেফকোভিচ জানিয়েছেন, তিনি আগামী সপ্তাহেই সেই প্রস্তাবের খসড়া পেশ করবেন৷
কোনো কারণে শেষ পর্যন্ত ঐকমত্য সম্ভব না হলে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ হিসেবে ইইউ ব্রিটেনের পণ্যের উপর বাড়তি শুল্ক চাপাতে পারে৷ ব্রিটেনের শিল্প-বাণিজ্য জগত এমন চরম পদক্ষেপ এড়াতে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা মিটিয়ে নেবার আহ্বান জানিয়েছে৷ শুধু ব্যবসা-বাণিজ্যে বিঘ্ন নয়, ইইউৃর সঙ্গে সংঘাতের কারণে উত্তর আয়ারল্যান্ডের ভঙ্গুর শান্তি প্রক্রিয়ার ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে ওঠার আশঙ্কা রয়েছে৷ সে ক্ষেত্রে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যে মোটেই ব্রিটেনের পাশে দাঁড়াবেন না, সে বিষয়ে কোনো সংশয় নেই৷ ইউরোপের পাশাপাশি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গেও সম্পর্কের অবনতি ব্রিটেনের স্বার্থের কতটা ক্ষতি করবে, সে বিষয়ে জল্পনাকল্পনা চলছে৷
এসবি/এসিবি (রয়টার্স, এএফপি)