ইসরায়েলের সঙ্গে মতপার্থক্য গোপন করলেন না শলৎস
৩ মার্চ ২০২২ইউক্রেন সংকটের মাঝেই জার্মান চ্যান্সেলর হিসেবে প্রথম ইসরায়েল সফর করলেন ওলাফ শলৎস৷ দুই দেশের বিশেষ সম্পর্ককে আরও নিবিড় করতে তিনি ও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেট নতুন ‘কৌশলগত সংলাপ'-এর কাঠামো চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন৷ এর আওতায় বছরে দুইবার শীর্ষ স্তরে রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা নীতি সম্পর্কে জার্মানি ও ইসরায়েলের আদানপ্রদান হবে৷ উল্লেখ্য, এখনো পর্যন্ত শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের সঙ্গে ইসরায়েলের ‘স্ট্র্যাটিজিক ডায়ালগ' স্তরের সম্পর্ক ছিল৷ নিবিড় দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ভিত্তিতে জার্মানিকেও এবার সেই মর্যাদা দিলো ইসরায়েল৷ শলৎস বলেন, চলতি বছরের গ্রীষ্মে বার্লিনে দুই দেশের মন্ত্রিসভার যৌথ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে৷
জার্মানিতে আঙ্গেলা ম্যার্কেল ও ইসরায়েলে বেনইয়ামিন নেতানিয়াহুর দীর্ঘ শাসনকালের পর শলৎস ও বেনেট বিশেষ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও নিবিড় করার দায়িত্ব পেয়েছেন৷ ইসরায়েলের জোট সরকারের বোঝাপড়া অনুযায়ী কার্যকালের অর্ধেক সময়ের পর প্রধানমন্ত্রী হবেন বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়াইর লাপিদ৷ শলৎস তার সঙ্গেও বৈঠক করেন৷
অন্যান্য বিদেশি নেতার মতো জার্মান চ্যান্সেলরও তার ইসরায়েল সফরের শুরুতেই জেরুসালেমের হলোকস্ট শৌধ ‘ইয়াদ ভাশেম'-এ যান৷ সেখানে অতিথিদের প্রতিক্রিয়া লেখার খাতায় তিনি লেখেন, ইহুদি নিধন যজ্ঞের কারণে ইসরায়েলি রাষ্ট্র ও ইহুদিদের জীবনের নিরাপত্তার প্রশ্নে জার্মানির বিশেষ দায়িত্ব রয়েছে৷ জার্মানি ভবিষ্যতেও ইসরায়েলের পাশে থাকবে বলে তিনি মন্তব্য করেন৷
বিশেষ নিবিড় সম্পর্কের প্রতি পূর্ণ অঙ্গীকার সত্ত্বেও সত্ত্বেও জার্মানি ইসরায়েলের সব নীতির প্রতি যে সমর্থন করে না, সেটাও স্পষ্ট করে দিয়েছেন জার্মান চ্যান্সেলর শলৎস৷ মধ্যপ্রাচ্য শান্তি প্রক্রিয়া সম্পর্কে তিনি বলেন, একমাত্র দুই রাষ্ট্র-ভিত্তিক সমাধানসূত্রের মাধ্যমেই দীর্ঘমেয়াদী শান্তি সম্ভব৷ ফিলিস্তিনিদের জীবনযাত্রা উন্নতির লক্ষ্যে বর্তমান সরকারের উদ্যোগের প্রশংসা করে তিনি বলেন, দুই পক্ষের মধ্যে শান্তির লক্ষ্যে অগ্রগতিও জরুরি৷ ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনেট, জার্মানিকে ইউরোপের ‘স্থিতিশীলতার নোঙর' হিসেবে বর্ণনা করেন৷
ইরানের প্রতি ইসরায়েলের কড়া অবস্থান সত্ত্বেও ওলাফ শলৎস বলেন, ইরানের সঙ্গে নতুন পরমাণু চুক্তি আর পেছানো সম্ভব নয়, উচিতও নয়৷ মূলত ইসরায়েলের উৎসাহেই বর্তমান সরকার সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তি একতরফাভাবে বর্জন করার পর নতুন করে সমঝোতার যে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, জার্মানি তা হাতছাড়া করতে চায় না৷ বেনেট অবশ্য বর্তমান সমঝোতার রূপরেখা সম্পর্কে গভীর সংশয় প্রকাশ করেন৷ ইরানের প্রতি প্রচ্ছন্ন হুমকি দিয়ে তিনি বলেন, ইসরায়েল আত্মরক্ষা ও নিজস্ব নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জানে৷
ইউক্রেনের উপর রাশিয়ার হামলা নিয়েও জার্মানি ও ইসরায়েলের অবস্থানে পার্থক্য রয়েছে৷ ইউক্রেনের সহায়তা করতে জার্মানি অতীতের নীতি বর্জন করে যুদ্ধক্ষেত্রে অস্ত্র পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ও ‘নর্ড স্ট্রিম ২' পাইপলাইন প্রকল্প বন্ধ রেখেছে৷ অন্যদিকে ইসরায়েল ইউক্রেনকে সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ করতে অস্বীকার করেছে৷ তার বদলে মানবিক সাহায্য পাঠাচ্ছে সে দেশ৷ বেনেট ইউক্রেন ও রাশিয়ার শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বললেও সরাসরি রাশিয়ার হামলার সমালোচনা করেন নি৷ তবে বুধবার ইসরায়েল জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের প্রস্তাবের পক্ষে সমর্থন করেছে৷ সেই প্রস্তাবে ইউক্রেন থেকে রাশিয়ার সেনা প্রত্যাহারের দাবি করা হয়েছে৷ ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদোমির জেলেনস্কি ইসরায়েলের মধ্যস্থতার অনুরোধ করেছেন৷
এসবি/কেএম (রয়টার্স, এএফপি)