1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আউশভিৎসের বেদনাময় ইতিহাস

২৭ জানুয়ারি ২০২২

গোটা বিশ্বে ২৭শে জানুয়ারি নাৎসি আমলের ইহুদি নিধন যজ্ঞের কথা স্মরণ করা হয়৷ ১৯৪৫ সালে সোভিয়েত বাহিনী আউশভিৎস কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পের বন্দিদের উদ্ধার করে সেখানকার অবর্ণনীয় কর্মকাণ্ডের পরিচয় পেয়েছিল৷

https://p.dw.com/p/468ud
আউশভিৎস বির্কেনাউ কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হাঙ্গেরির ইহুদিদের দেখা যাচ্ছেছবি: picture-alliance/dpa/Mary Evans Picture Library

পোল্যান্ডের দক্ষিণে আউশভিৎস কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প ১৯৪৭ সাল থেকে দর্শকদের জন্য খুলে দেবার পর থেকে চার কোটি ৯০ লাখেরও বেশি মানুষ সেখানে পা রেখেছেন৷ গোটা বিশ্ব থেকে বছরে ২০ লাখেরও বেশি মানুষ সেখানে গেলেও করোনা মহামারির কারণে সেই সংখ্যা পাঁচ লাখে নেমে গেছে৷ বিশাল এলাকা জুড়ে ইহুদি নিধন যজ্ঞের নানা চিহ্নের পাশাপাশি একটি মিউজিয়ামও রয়েছে৷

আউশভিৎসের গুরুত্ব

নাৎসিদের তৎপরতার অনেক আগেই ঘটনাবহুল ইতিহাসের সাক্ষী ছিল আউশভিৎস৷ অস্ট্রিয়া, বোহেমিয়া, প্রাশিয়ার মতো সাম্রাজ্যের অংশ ছিল এই অঞ্চল৷ শেষে পোলিশ রাজতন্ত্রের আওতায় চলে আসে এই ছোট শহর৷ ১৯৩৯ সালে নাৎসি জার্মানি জায়গাটি দখল করে নেয়৷ শ্রমিকদের ব্যারাক ভবিষ্যতের কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পের জন্য উপযুক্ত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়৷

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে আউশভিৎসের প্রায় ১২ হাজার বাসিন্দার মধ্যে অর্ধেকই ছিলেন ইহুদি ধর্মাবলম্বী৷ কিন্তু হিটলার বাহিনীর হামলার পর পরিস্থিতি রাতারাতি বদলে যায়৷ নাৎসিদের ‘শুদ্ধিকরণ’ নীতির কারণে ‘খাঁটি’ জার্মানদের জন্য ইহুদিদের জায়গা ছেড়ে দিতে হয়৷ দাস শ্রমিক হিসেবে অনেককে দেশের অন্যত্র পাঠিয়ে দেওয়া হয়৷ অনেককে ‘গেটো' বা বিচ্ছিন্ন বস্তি এলাকায় আটকে রাখা হয়৷

আউশভিৎসের ভৌগলিক অবস্থান নাৎসিদের জন্য অত্যন্ত সুবিধাজনক ছিল৷ প্রাগ ও ভিয়েনার সঙ্গে রেলপথে সরাসরি যোগাযোগের পাশাপাশি বার্লিন তথা ওয়ারশ শহরে যাতায়াতের পথও সুগম ছিল৷ ফলে নাৎসি নেতৃত্ব বিশাল সংখ্যক মানুষকে পাঠানোর উপযুক্ত হিসেবে জায়গাটি বেছে নেয়৷ বন্দিদের রেলযোগে আউশভিৎসে পাঠানোর দায়িত্ব পান নাৎসি সামরিক কর্মকর্তা আডলফ আইশমান৷ ইউরোপে ইহুদিদের নিশ্চিহ্ন করতে ‘ফাইনাল সলিউশন’ বা চূড়ান্ত সমাধানসূত্র হিসেবে আউশভিৎস কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে ‘গণহত্যার কারখানা’ গড়ে তোলা হয়৷

KZ-Auschwitz Häftlinge nach der Befreiung
১৯৪৫ সালে সোভিয়েত বাহিনী আউশভিৎসে পৌঁছার পর মুক্ত বন্দিরাছবি: akg-images/picture alliance

ইহুদি নিধন যজ্ঞের আওতায় আউশভিৎসের আগে আরও ছয়টি কনসেনট্রেশন ক্যাম্প গড়ে তোলা হয়েছিল৷ তবে সেগুলির কোনোটাই এত বড় আকারের ছিল না৷ সুপরিকল্পিতভাবে গণ হারে মানুষ হত্যার বিশাল অবকাঠামো তৈরি করেছিল নাৎসিরা৷ ১৯৪৪ সালের মধ্যে কুখ্যাত এসএস বাহিনীর প্রায় চার হাজার রক্ষী সেই শিবিরে মোতায়েন ছিল৷

মৃত্যুর কারখানা

১৯৪২ সাল থেকে পুরোদমে ইহুদি নিধন যজ্ঞ শুরু হয়ে যায়৷ প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষকে বন্দি হিসেবে নথিভুক্ত না করে সরাসরি গ্যাস চেম্বারে হত্যা করা হতো৷ মৃতদেহগুলি জ্বালিয়ে দিয়ে আশেপাশের হ্রদগুলিতে ছাই ফেলে দেওয়া হতো৷ সেই প্রক্রিয়া আরও বড় আকারে ও দ্রুত সম্পাদন করে বাহবা কুড়াতে চেয়েছিলেন এক নাৎসি কর্মকর্তা৷ ১৯৪৪ সালে শেষ বারের মতো বন্দি ইহুদিদের সেখানে আনা হয়৷ ঠিক কত সংখ্যক মানুষকে আউশভিৎসে হত্যা করা হয়েছিল, তা এখনো পুরোপুরি স্পষ্ট নয়৷ প্রতি বছরই নতুন নথিপত্র আবিষ্কারের ফলে আরও ঘটনার কথা জানা যাচ্ছে৷ তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, ৫০ লাখেরও বেশি মানুষ সেখানে ইহুদি নিধন যজ্ঞের শিকার হয়েছিলেন৷

Konzentrationslager Auschwitz
ক্যাম্পের একটি দরজাছবি: picture-alliance/dpa/J. Woitas

মুক্তির স্বাদ

১৯৪৫ সালের ২৭শে জানুয়ারি সোভিয়েত বাহিনী আউশভিৎস কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পেপৌঁছে ভয়াবহ পরিস্থিতির সাক্ষী হয়৷ মাত্র সাত হাজার দুর্বল ও মৃতপ্রায় বন্দিদের জীবিত অবস্থায় পাওয়া যায়৷ তাঁদের মধ্যে বেশিরভাগের এমনকি উঠে দাঁড়ানোর ক্ষমতা ছিল না৷ পরাজয়ের ঠিক আগে নাৎসিরা তাদের নিপীড়বের চিহ্ন যতটা সম্ভব দূর করার চেষ্টা করেছিল৷ বিস্ফোরণ ঘটিয়ে গ্যাস চেম্বারসহ অনেক স্থাপনা নষ্ট করে দেয় তারা৷

১৯৪৬ সালে সোভিয়েত দখলদারী বাহিনী আউশভিৎস ক্যাম্পের ভগ্নাবশেষ পোল্যান্ডের কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেয়৷ প্রাক্তন বন্দিদের উদ্যোগে ও পোল্যান্ডের সংসদের ঘোষণা অনুযায়ী ১৯৪৭ সালে ‘আউশভিৎস বির্কেনাউ রাষ্ট্রীয় মিউজিয়াম’ সৃষ্টি হয়৷ ইসরায়েলের ‘ইয়াদ ভাশেম’ স্মারক কেন্দ্রের সঙ্গে সহযোগিতায় প্রথম প্রদর্শনী আয়োজিত হয়৷

প্রতি বছর ২৭শে জানুয়ারি আউশভিৎস ক্যাম্প মুক্তির ঐতিহাসিক ঘটনা স্মরণ করা হয়৷ জার্মান সংসদের নিম্ন কক্ষ বুন্ডেসটাগেও সেই ভয়াবহ অভিজ্ঞতার সাক্ষী অনেক ইহুদি ব্যক্তি ভাষণ দিয়েছেন৷ আউশভিৎস ফেরত অবশিষ্ট কিছু মানুষ এ দিন আউশভিৎস থেকে বির্কেনাউ পর্যন্ত পদযাত্রা করেন, যা ‘জীবিতদের মার্চ’ নামে পরিচিত৷ তবে তাদের সংখ্যা কমেই চলেছে৷ ভবিষ্যতে তাদের সন্তান ও উত্তরসূরিদেরই সেই স্মৃতি বাঁচিয়ে রাখার উদ্যোগ নিতে হবে৷

হাইকে মুন্ড/এসবি