বাজার ব্যবস্থাপনায় ত্রুটি আছে: সফিকুজ্জামান
১৫ মার্চ ২০২৪এসব বিষয় নিয়ে ডয়চে ভেলের সঙ্গে কথা বলেছেন ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান৷
ডয়চে ভেলে : রোজা আসলেই কিছু পণ্যের দাম বাড়ে৷ এগুলো নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় না কেন?
এ এইচ এম সফিকুজ্জামান : রমজানে তো অনেক পণ্যের চাহিদা বেড়ে যায় এবং সেই সুযোগ কিছু অসাধু ব্যবসায়ী নিয়ে থাকেন৷ আমরা চেষ্টা করছি, সরবরাহটা ঠিক রাখার৷ এবার কিন্তু একটা ব্যতিক্রম হয়েছে৷ আমরা সুপার শপসহ বড় ব্যবসায়ীদের আহবান করেছিলাম গায়ের দামের চেয়েও যেন পণ্যের দাম তারা কম রাখেন৷ সেই কথা তারা শুনেছেন৷ বিভিন্ন জায়গায় অফার দিয়ে তারা বিক্রি করছেন৷ আমাদের উদ্যোগের কারণেই তারা সাড়া দিয়েছেন৷
দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে রমজানে মাসে আপনারা যে অভিযান চালান, সেটা কি পর্যাপ্ত?
আমাদের কাজটাকে শুধু অভিযান বললে সঠিক হবে না৷ আমরা মনিটরিং করি৷ বিশেষ বিশেষ জায়গায় অভিযান করি৷ সম্প্রতি আমরা নারায়ণগঞ্জে অভিযান করেছি, সেখানে আগের বছরের খেজুর মজুদ করে রেখেছিল৷ বাজার অস্থির করতে তারা সেটা করছিল৷ ওই খেজুরগুলো আমরা জব্দ করেছি৷ এগুলো অভিযান৷ আর মনিটরিং কার্যক্রম চলে সবসময়৷ ঢাকাসহ সারাদেশে আমাদের ৪০ থেকে ৪৫টি টিম মনিটরিং বা অভিযান কার্যক্রম পরিচালনা করছে৷
আপনারা অভিযানে গিয়ে কি কখনও সিন্ডিকেটের সন্ধান পেয়েছেন?
এই শব্দটা আমি উচ্চারণও করতে চাই না৷ কর্পোরেট গ্রুপগুলো এমন করতে পারে৷ তাদের কিন্তু আমরা মনিটরিংয়ে রেখেছি৷ আর যেখানে লাখ লাখ কৃষক সবজি উৎপাদনে জড়িত সেখানে এই শব্দটা প্রযোজ্য না৷ বাজার ব্যবস্থাপনায় ত্রুটি আছে৷ হাত বদলে প্রতিটি পক্ষই অহেতুক, অনৈতিকভাবে, অন্যায্যভাবে অনেক লাভ করে৷ যে কারণে বাজার অস্থির হয়ে যায়৷ এই কারণে কারওয়ান বাজারসহ বিভিন্ন বাজারে রাতভর অভিযান পরিচালনা করছি৷ যৌক্তিক মূল্যে যেন মানুষ পণ্যটি পায় সে কারণে আমরা কাজ করে যাচ্ছি৷
ব্যবসায়ীদের নৈতিকতা নিয়ে সরকারের কোনো উদ্যোগ আছে?
রমজানে যেহেতু কিছু অসাধু ব্যবসায়ী এই সুযোগটা নেয়, তাই আমরা অনেক ব্যবসায়ীর সঙ্গে বসি৷ পর্যায়ক্রমে আমরা সবার সঙ্গেই বসার চেষ্টা করি৷ বোঝানোর চেষ্টা করি৷ এবার যেটা হয়েছে, আমরা ব্যবসায়ীদের উদ্বুদ্ধ করতে পেরেছি৷ অনেক ক্ষেত্রেই তারা দাম কমিয়ে দিয়েছেন৷
রমজানে তো নির্দিষ্ট পণ্যের চাহিদা বাড়ে৷ এগুলো কি আগে থেকেই পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করা হয়, নাকি আসলেই সংকট থাকে? আপনারা অভিযানে গিয়ে কী দেখেছেন?
এখানে দুই ধরনের পণ্যের চাহিদা আছে৷ একটা আমদানি করা হয়, আরেকটা দেশের মার্কেটেই পাওয়া যায়৷ আমদানি করা পণ্যের ক্ষেত্রে যদি বলি চিনি, তেল, ছোলা, খেজুর এগুলো তো আগে থেকেই প্রক্রিয়া করতে হয়৷ এগুলো কিন্তু পুরোটাই প্রাইভেট সেক্টর আমদানি করে৷ চাহিদা অনুযায়ী তারা সেটা করেন৷ এগুলো আমরা মনিটরিং করি৷ সেখানে মজুদ আর সরবরাহের একটা ব্যালান্স আছে৷ সেটা আছে বলেই কয়েকদিন আগে একটা বড় সুগার রিফাইনারিতে আগুন লাগার পরও চিনির দাম বাড়েনি৷ মজুদ পরিস্থিতি ভালো ছিল বলেই এটা সম্ভব হয়েছে৷ দেশীয় পণ্যের মধ্যে দেখেন এখন লেবুর মৌসুম না৷ কিন্তু রমজানে লেবুর চাহিদা অনেক বাড়ে৷ ফলে এখানে চাহিদা ও সরবরাহের ভারসাম্য থাকে না৷ এসব কারণেও অনেক পণ্যের মূল্য বেড়ে যাওয়ার প্রবণতা থাকে৷
কোনো এলাকায় অভিযান চালিয়ে চলে আসার পর কী আবার ফলোআপ করেন?
আমাদের যে লজিস্টিক, সেটা অনেক ক্ষেত্রেই অপ্রতুল৷ ১৭ জেলায় আমাদের কোনো অফিসার নেই৷ জেলা পর্যায়ে একজন অফিসার ও একজন কম্পিউটার অপারেটর আছে৷ দেশে এত বড় বড় বাজার, তার সবগুলোতে আমাদের পক্ষে সবসময় নজরদারি করা সম্ভব হয়ে ওঠে না৷ অনেক ক্ষেত্রেই আমরা তথ্যভিত্তিক কাজ করি৷ বিশেষ তথ্য পাওয়ার পরই আমরা অভিযান পরিচালনা করি৷
অভিযানে জেল-জারিমানা করেন৷ এতেই কী সমাধান? নাকি বিকল্প কিছু ভাবনা আছে?
আমরা কিন্তু ভোক্তাদেরও সচেতন করি৷ ব্যবসায়ী ও ভোক্তাদের যদি আমরা সচেতন করতে না পারি তাহলে অভিযান দিয়ে সমাধান হবে না৷ আমাদের বাইরেও গোয়েন্দা সংস্থা এবং জেলা প্রশাসন এ নিয়ে কাজ করে৷ আমরা সবাই মিলেই সম্মিলিতভাবে কাজটা করছি৷ আমাদের সরবরাহ ব্যবস্থায় একটা বড় চ্যালেঞ্জ আছে৷ গতানুগতিক ধারায় এখানে পণ্যের হাতবদল হয়৷ ৪-৫ বার হাতবদলে দামটা বেড়ে যাচ্ছে৷ সে কারণে আমরা অ্যাপ নির্ভর বিপণন ব্যবস্থা করার চেষ্টা করছি৷
সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে আপনাদের কোনো কার্যক্রম আছে?
অনেক ধরনের কর্মসূচী আছে৷ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আমরা সেমিনার করি৷ সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক প্রচারণা চালাই৷ গণশুনানি করছি৷ নানাভাবে আমরা এই কাজগুলো করছি৷
কত শতাংশ বাজার আপনারা দেখভাল করতে পারেন?
এইভাবে কোনো পরিসংখ্যান নেই৷ তবে এখন প্রতিদিন আমাদের ৪০ থেকে ৪৫টি টিম বাজারে কাজ করছে৷ সারাদেশের সব বাজারে আমাদের পক্ষে অভিযান চালানো সম্ভব না৷ স্থানীয় প্রশাসন সেখানে কাজ করছে৷
রোজায় মানুষের মধ্যে স্বস্তি ফেরাতে এই মুহূর্তে করণীয় কী?
রোজা তো শুরু হয়ে গেছে৷ ফলে স্বস্তি-অস্বস্তি তো আপেক্ষিক বিষয়৷ এখন ধরেন ইফতারে চকবাজারের ‘বড় বাপের পোলায় খায়' এর যদি ব্যাপক চাহিদা থাকে, তাহলে সেটা তো ভিন্ন কথা৷ হালিমের যদি ব্যাপক চাহিদা থাকে, সেটাও ভিন্ন কথা৷ কিন্তু মানুষের নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের ক্ষেত্রে আমরা কাজ করে যাচ্ছি৷