বাংলাদেশে বিকল্প খামারের সম্ভাবনা আশাব্যাঞ্জক
২৯ জানুয়ারি ২০১৯একসময় বাংলাদেশের গ্রাম অঞ্চলে হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল পালনই ছিল কৃষকের বাড়তি আয়ের উৎস৷ পর্যায়ক্রমে পোল্ট্রি সেক্টরে এসেছে ব্রয়লার ও লেয়ার মুরগির পালন৷ গ্রামীণ বেকার যুবক ও নারীরা অনেকেই ব্রয়লার ও লেয়ার মুরগির খামার করে স্বাবলম্বী হয়েছেন৷
সময় বদলেছে৷ কালের পালাবদলে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষিত বেকার যুবক ও নারীরা হাঁস, মুরগির বিকল্প হিসেবে বেছে নিচ্ছেন বিকল্প প্রজাতীর পাখির খামার৷ এদের মধ্যে টার্কি, তিতির, উটাপাখির খামার উল্লেখযোগ্য৷ অন্যদিকে গরু, ছাগল পালনের পাশাপাশি বিকল্প পশুর খামারে ঝুঁকছেন শিক্ষিত তরুণ প্রজন্ম৷ বাংলাদেশের কৃষিখামারে যুক্ত হয়েছে হরিণ, কুমির, সাপ, উটের মতো বৈচিত্র্যময় পশু৷
টার্কি, তিতির ও শৌখিন মুরগির খামার
পাশ্চাত্যের খাবার টার্কির জয়জয়কার এখন বাংলাদেশে৷ বছর চারেক আগেও এ দেশে টার্কিকে খুব বেশি চিনতো না মানুষ৷ কিন্তু টার্কি পালন লাভজনক হওয়ায় দ্রুত সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে এই পাখিটি৷ সারাদেশে ছোট-বড় মিলিয়ে বর্তমানে সাত হাজারের বেশি টার্কির খামার গড়ে উঠেছে৷ একসময় নরসিংদী জেলার পাইকশা অঞ্চলকে ‘টার্কির গ্রাম' নামে অভিহিত করেছিলেন কৃষিবিষয়ক অনুষ্ঠান ‘হৃদয়ে মাটি ও মানুষ'-এর উপস্থাপক শাইখ সিরাজ৷ বর্তমানে বলতে গেলে সারাদেশই টার্কির গ্রামে পরিণত হয়েছে৷ স্বল্প সময়ে অধিক ওজন ও বাজার মূল্য বেশি হওয়ায় টার্কির খামারে আগ্রহী হয়েছে হাজার হাজার উদ্যোক্তা৷ সৃষ্টি হয়েছে নতুন কর্মসংস্থানেরও৷
বর্তমানে সর্বোচ্চ সংখ্যক টার্কির খামার গড়ে উঠেছে উত্তরাঞ্চল ও দক্ষিণাঞ্চলগুলোতে৷ কুমিল্লা, নরসিংদী, চট্টগ্রাম, সিলেট, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, ময়মনসিংহে টার্কির খামার বেশ চোখে পড়ে৷ ঢাকাসহ সারাদেশের শহরাঞ্চলে টার্কির মাংসের চাহিদা সৃষ্টি হয়েছে৷ এছাড়া টার্কির ডিম এবং বাচ্চা বিক্রি করে খামারিরা লাভবান হচ্ছেন৷ টার্কিকে পোল্ট্রি শিল্পের আওতায় এনে খামারিদের সহজ শর্তে ঋণ দেয়ার পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার৷
ঢাকার নবীনগরে অবস্থিত টার্কি খামারি আমিন ইসলামের টার্কি খামারে সুবিশাল চারটি টার্কির শেড রয়েছে৷ তাঁর খামারে বাচ্চা ও প্রাপ্ত বয়স্ক মিলিয়ে ১৫০০ টার্কি রয়েছে৷ নরসিংদীর কামরুল ইসলাম মাসুদ বাণিজ্যিক ভিত্তিতে দেশি মুরগির পাশাপাশি অরগ্যানিক উপায়ে পালন করছেন টার্কি, তিতির, কাদাকনাথসহ আরো কিছু শৌখিন প্রজাতির মুরগি৷ বর্তমানে তাঁর কাছে দুই হাজারের বেশি টার্কি মুরগি রয়েছে৷
বাংলাদেশে বিকল্প পাখির খামার হিসেবে নতুন একটি নাম হচ্ছে কাদাকনাথ মুরগির খামার৷ ডিম সাদা, তবে পালক, চামড়া এবং মাংস কালো হওয়ায় এই জাতটি নিয়ে ইতোমধ্যেই কৌতূহল সৃষ্টি হয়েছে৷ ভারতের তামিল নাড়ুতে ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসবে কাদাকনাথের মাংস খাওয়া হয়৷ পোল্ট্রি কনসালটেন্ট ও ভেটেরনারি সার্জন ডা. বলরাম কুমার রায় জানান, কাদাকনাথের মাংসে মেডিসিনাল ভ্যাল্যু অনেক বেশি৷ হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় ও নার্ভাস ডিসফাংশনে এ মুরগির মাংসের বিশেষ কার্যকারীতা রয়েছে৷ এছাড়াও ভারতের মধ্যপ্রদেশের উপজাতীয়রা কাদাকনাথ মুরগির রক্ত মানুষের ক্রনিক রোগের চিকিৎসায় ব্যবহার করেন৷ বর্তমানে সারা দেশে ছোট-বড় মিলিয়ে কাদাকনাথের শতাধিক খামার রয়েছে৷
তিতির মুরগি অতীতে গ্রামবাংলায় মা-খালাদের উঠানে দেখা গেলেও একসময় প্রায় হারিয়ে গিয়েছিল৷ বর্তমানে টার্কির খামারের পাশাপাশি তিতির মুরগির খামারও বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে৷ দেখতে দেশি মুরগির চেয়ে সামান্য বড়, গোলাকার এবং আকর্ষণীয় রং ও দৈহিক গড়নের কারণে তিতির মুরগির খামারে আকৃষ্ট হচ্ছেন অনেকে৷ এর ডিম ও মাংস খুবই সুস্বাদু৷ নওগাঁ জেলার শালুকায় নারী উদ্যোক্তা শওদা রহমান ২০১৬ সালে গড়ে তোলেন তিতিরের খামার৷ তাঁর খামারের সফলতা দেখে আশপাশে অনেক নারী ও পুরুষ তিতির পালনে উদ্যোগী হন৷ পর্যায়ক্রমে সারাদেশে তিতির পালন ছড়িয়ে পড়ে৷ খাদ্যাভ্যাস প্রায় একই রকম হবার কারণে অনেকে টার্কির পাশাপাশি একই শেডে তিতিরের খামার গড়ে তুলেছেন৷ ছোট-বড় মিলিয়ে সারা দেশে তিতির পাখির খামার প্রায় দুই হাজারের বেশি৷
টার্কি তিতির ও কাদাকনাথের পাশাপাশি বেশকিছু শৌখিন মুরগির খামার বাংলাদেশে জনপ্রিয়তা পেয়েছে৷ এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ময়ূর, সিল্কী, বেনথাম, সেব্রাইট, পলিশক্যাপ ও দেশি কালিম পাখির খামার৷
উট পাখির খামার
উট পাখি বর্তমানে জায়গা করে নিয়েছে বাংলাদেশের খামারিদের আঙিনায়৷ আকারে বিশাল হওয়ায় প্রোটিনের চাহিদা মিটাতে উট পাখিকে বিকল্প হিসেবে ভাবা হচ্ছে৷ ইতোমধ্যে সারা দেশে বেশ কয়েকটি উট পাখির বাণিজ্যিক খামার গড়ে উঠেছে৷ শৌখিন পর্যায়েও বাড়ির আঙিনায় উট পাখি পুষছেন অনেকে৷ বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল দিনাজপুরের নারী উদ্যোক্তা আঞ্জুমান আরা বেগম ও তাঁর স্বামী মিলে গড়ে তুলেছেন সমন্বিত কৃষি খামার৷ তাঁর খামারে আড়াই হাজার টার্কির পাশাপাশি উট পাখি রয়েছে বিশটি৷ আঞ্জুমান আরা জানান, বাংলাদেশের আবহাওয়া উটপাখির জন্য মানানসই৷ একটি উটপাখির মাংস হয় প্রায় আড়াই মন৷ গরু যেখানে বছরে একটি মাত্র বাচ্চা দেয়, উটপাখি সেখানে ডিম দেয় ৫০ থেকে ৮০টি৷ ডিম নিজেরাই তা দিয়ে ফুটায় কিংবা ইনকিউবেটরে ফুটানো যায়৷ সার্বিক বিবেচনায় গরুর চেয়ে উটপাখির খামার করা বেশি লাভজনক৷
খুলনার সুমন হোসেন টার্কি ও শৌখিন মুরগির পাশাপাশি উটপাখি পুষছেন ২০১৭ সাল থেকে৷ বর্তমানে তাঁর কাছে এগারোটি প্রাপ্তবয়স্ক উটপাখি রয়েছে৷ এগুলো কিছু দিনের মধ্যেই ডিম দেবে৷ বাংলাদেশে এর সম্ভাবনা যাচাই করে শিগগিরই তিনি উট পাখির বড় আকারের খামার গড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন৷ পাশাপাশি হরিণ ও ময়ূরের খামার করার আগ্রহও আছে বলে তিনি জানান৷
হরিণের খামার
গরু, মহিষ আর ছাগলের খামারের বিকল্প হতে পারে হরিণের খামার৷ ইতোমধ্যে সারা দেশে বেশ কয়েকটি জায়গায় ব্যক্তি উদ্যোগে গড়ে উঠেছে হরিণের খামার৷ বগুড়ার শিবগঞ্জের হাজী মোখলেসুর রহমান হরিণ পালন করে আসছেন প্রায় একযুগ ধরে৷ সরকারি নিয়ম মেনে মাত্র এক জোড়া হরিণ কিনে খামার শুরু করেন৷ বর্তমানে তাঁর কাছে ১২টি হরিণ আছে৷ আরো পনেরোটি বিক্রি করেছেন৷
ঝালকাঠি জেলার নলছিটি ফেরি ঘাটের পাশে ব্যবসায়ী কাজী আলমগীরের হরিণ এবং ময়ূরের খামার৷ নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলার আব্দুল কাদের ভূঁইয়ার হরিণ খামারে রয়েছে ২৫টি হরিণ৷ ফেনীর শুভপুরে এক অস্ট্রেলিয়া প্রবাসীর হরিণের খামারেও প্রায় পঁচিশটি হরিণ আছে৷ বরিশালের আগৈলঝারা উপজেলার মৃদুল সাহার খামারে বর্তমানে হরিণ আছে ২৬টি৷ বিক্রি করেছেন চব্বিশটি৷ নরসিংদী সদরের আলীজান জুটমিলে মোশারফ হোসেন গড়ে তুলেছেন হরিণ, উট পাখি ও ইমু পাখির খামার৷ সারা দেশে ব্যক্তি উদ্যোগে এমন অসংখ্য হরিণের খামার রয়েছে, যা সরকারি নীতিমালায় সহজলভ্য হলে এবং বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ ও বিক্রয়ের সুযোগ সৃষ্টি হলে হরিণ পালন হবে লাভজনক একটি ক্ষেত্র৷
সাপের খামার
সাপ মানুষের কাছে মূর্তমান আতঙ্কেও নাম হলেও এর রয়েছে বিপুল বাণিজ্যিক সম্ভাবনা৷ সাপের বিষ দিয়ে অনেক মূল্যবান ওষুধ তৈরি করা হয়৷ সাপের বিষ রপ্তানি করা গেলে আয় করা সম্ভব হবে প্রচুর বৈদেশিখ মুদ্রা৷ এ সকল কারণে সাপের খামার গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখছে দেশের তরুণ প্রজন্ম৷ পটুয়াখালির রাজ্জাক বিশ্বাস তেমনই এক উদাহরণ৷ প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকলেও নিজ বাড়িতে গড়ে তুলেছেন সুবৃহৎ সাপের খামার৷ সাপ নিয়ে করছেন গবেষণা৷ বাংলাদেশ স্নেক ভেনম নামে তাঁর সাপের খামারটিতে রয়েছে পাঁচ প্রজাতির প্রায় আড়াইশ' সাপ৷ এর মধ্যে কোবরা নাজা নাজা, কমন ক্রেইট, কিং কোবরা, রাসেল ভাইপার ও পাইথন উল্লেখযোগ্য৷ সাপ নিয়ে মানুষের ভ্রান্ত ধারণা দূর করতে এবং সাপের বংশবিস্তারে সহযোগিতা করতে প্রতিনিয়ত কাজ করে চলেছেন তিনি৷
রাজশাহীর পবা উপজেলার ধর্মহাটা গ্রামের বোরহান বিশ্বাস সাপের খামার শুরু করেন ২০০৯ সালে৷ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নানান জাতের বিলুপ্ত প্রায় সাপ ধরে এনে খামার সম্প্রসারণ করেন, পাশাপাশি সাপের খামার তৈরিতে তরুণদেরকে উদ্বুদ্ধ করতে থাকেন৷
সাপের খামার নিয়ে কাজ করা আরেক উজ্জ্বল মুখ রাজবাড়ির কালুখালি উপজেলার কাসাদহ গ্রামের রবিউল ইসলাম রঞ্জু৷ ৮৩ শতাংশ জমিতে তিনি গড়ে তোলেন রাজবাড়ি স্নেক ফার্ম৷ তাঁর খামারেও পাঁচ প্রজাতির প্রায় ৫০টির অধিক সাপ রয়েছে৷ এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ইন্ডিয়ান রেট স্নেক বা দারাজ, ইন্ডিয়ান কোবরা নাজা নাজা, রাসেল ভাইপার, পাইথন এবং স্যান্ডবোয়া বা বালুবোড়া৷ এসব সাপের অধিকাংশই সংগ্রহ করা হয়েছে আশপাশের পরিত্যক্ত বাড়ি কিংবা জঙ্গল থেকে৷ রঞ্জু জানান, তাঁর খামারে বর্তমানে তিন জন কর্মচারী রয়েছে, মাসিক খরচ প্রায় ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা৷ এ পর্যন্ত তিনি সাপের খামারে ত্রিশ লাখ টাকার বেশি অর্থায়ন করেছেন৷
প্রয়োজন সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা
নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে প্রচলিত কৃষি-খামারের পাশাপাশি বিকল্প এই সম্ভাবনাময় খাতগুলোকে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার আওতায় আনা জরুরি বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট খামারিগণ৷ পোল্ট্রি শিল্পে টার্কি, তিতির ও শৌখিন পাখি পালনে সরকারি ঋণ ও চিকিৎসা সহায়তা দেয়া গেলে যেমন দেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখতে পারবে, তেমনি হরিণের খামারে প্রয়োজন সহজ নীতিমালা৷ হরিণের সহজপ্রাপ্যতা নিশ্চিত হলে এবং উটপাখির খামার সম্প্রসারণে সরকারি প্রশিক্ষণ চালু হলে দেশের প্রোটিনের চাহিদা মেটাতে সক্ষম হবে এই ক্ষেত্রগুলো৷ অন্যদিকে সাপের খামারের যথাযথ অনুমতি ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকলে সাপের খামারে স্বাবলম্বী হবে দেশের শিক্ষিত তরুণরা৷ সাপের বিষ রপ্তানি করে আয় হবে কাঙ্খিত বৈদেশিক মূদ্রা৷
সংকট ও সমাধান
বাংলাদেশের বিকল্প খামারগুলো তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য আশাব্যাঞ্জক হলেও খামার নীতিমালা ও বাজারব্যবস্থাপনা খামারিবান্ধব নয়৷ নতুন প্রজাতির প্রাণীর খামার হওয়ায় এদের সঠিক খাবার, বাসস্থান এবং চিকিৎসা সম্পর্কেও খামারিদের অনেকেই ওয়াকিবহাল নন৷ অন্যদিকে বিপুল সম্ভাবনাময় টার্কি এতদিন খামারি থেকে খামারি পর্যায়ে বিক্রি হলেও সময় এসেছে মাংসের বাজারে একে প্রতিষ্ঠিত করার৷ কিন্তু প্রান্তিক খামারিদের বাজারব্যবস্থা সম্পর্কে পর্যাপ্ত ধারণা না থাকায় তাঁরা অপ্রচলিত টার্কির গ্রাহক সৃষ্টি করতে পারছেন না৷ টার্কি-তিতিরসহ বিকল্প পাখির খামারিদের বড় সংক হলো এদের সুষম খাবার, স্পেশালাইজড চিকিৎসক ও ওষুধের ঘাটতি৷ বাজারে প্রচলিত ফিড কোম্পানিগুলো লেয়ার এবং ব্রয়লার মুরগির জন্য খাবার প্রস্তুত করে থাকে৷ টার্কি বড় আকারের পাখি হওয়ায় এর ফুড ফরমুলেশন ভিন্ন হওয়া উচিত৷ কিন্তু সেটিতে এগিয়ে আসার লোক নেই৷ টার্কির বাজার প্রতিষ্ঠা করতে হলে এর সার্বিক ব্যবস্থাপনায় নজর দিতে হবে৷ গড়ে তুলতে হবে খাদ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান, ভেটারনারি সহায়তা এবং মার্কেট সুব্যবস্থা৷ এগুলো সুবিশাল পরিকল্পনার বিষয়৷
হরিণ পালন লাভজনক হলেও স্বাধীনভাবে হরিণ বেচা-কেনার সুযোগ চান হরিণ খামারিরা৷ সরকার যদি চিত্রা হরিণের মতো অন্যান্য হরিণ স্বাধীনভাবে পালন ও বিক্রয়ের সুযোগ দেন, তাহলে গরু-ছাগল পালনের চেয়েও মানুষ বেশি হরিণ পালনে আগ্রহী হবে এবং বিরল প্রজাতির হরিণগুলো খামারেই বংশ বিস্তার করবে৷ এরা স্বভাবগতভাবে বন্য ও ভীত হলেও পর্যায়ক্রমে খামারের পরিবেশে অভ্যস্ত হয়ে উঠবে৷
সাপের বিষ মহামূল্যবান ওষুধী উপকরণ হওয়ায় একসময় আমাদের দেশে চল্লিশটিরও অধিক সাপের খামার গড়ে উঠেছিল৷ কিন্তু সরকারি অনুমোদন এবং যথাযথ সহযোগিতা না পাওয়ায় অঙ্কুরেই হারিয়ে গেছে এসব খামার৷ বর্তমানে দেশে চার-পাঁচজন খামারি ব্যক্তিগত অর্থায়নে চালাচ্ছেন সাপ নিয়ে গবেষণা৷
‘মেইড ইন জিঞ্জিরা'-র দেশে জিঞ্জিরার খুদে টেকনিশয়ানরা বিশ্বমানের পণ্য তৈরির যোগ্যতা রাখলেও তাঁরা যেমন এগুতে পারছেন না উপযুক্ত প্রশিক্ষণ আর সহযোগিতার অভাবে, তেমনি স্রোতের বিপরীতে চলা আমাদের বিকল্প খামারিরা লড়াই করছেন ‘নতুন কিছু' নিয়ে সফল হতে৷ এদেশে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় নামে একটি মন্ত্রণালয় রয়েছে৷ তারা সম্ভাবনাময় নতুন কৃষিখাতগুলোকে নার্সিংয়ের আওতায় আনুক, সম্ভাব্যতা যাচাই করুক এবং প্রয়োজনীয় সহযোগিতার হাত বাড়াক, এটাই কামনা৷
আমার বিশ্বাস কুমিরের চাষ আমাদের চামড়াশিল্পকে সমৃদ্ধ করবে৷ এমু পাখির চাষ দেশের প্রোটিনের চাহিদা পূরণে সহায়তা করতে বিশাল ভূমিকা রাখতে পারে৷ একইসঙ্গে আরএসএস পদ্ধতিতে বা অ্যাকুরিয়ামে মাছ চাষ করে মাছের বাজারও সম্প্রসারণ করা সম্ভব৷ আমাদের মনে রাখতে হবে, আমাদের প্রাকৃতিক পরিবেশ খামার উপযোগী৷ এখন এগিয়ে আসতে হবে প্রশাসন পর্যায়ে, বিশেষ করে প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তর, জেলা পর্যায়ে কৃষি অধিদপ্তরকে এগিয়ে আসতে হবে বিকল্প কৃষি সম্প্রসারনে৷ এমনকি অর্থসেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান, তথা ব্যাংকগুলো যদি সহজ শর্তে ঋণ সহায়তা দেয়, সেটিও ব্যবসায়ীদের ভরসা দেবে৷
এ বিষয়ে আপনার কোনো অভিজ্ঞতা, মন্তব্য বা প্রশ্ন থাকলে লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷