ফ্রাঙ্কফুর্টে চলছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় বই মেলা
১৪ অক্টোবর ২০০৯মঙ্গলবার যখন বই মেলার উদ্বোধন হলো তখন জার্মানির চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল তাঁর উদ্বোধনী ভাষণে বললেন, বই মানুষের মাঝে পরিবর্তন আনে৷ কারণ, বই একনায়কতন্ত্রের জন্য হুমকি আর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য সহায়ক৷ তাঁর এই বক্তব্য অনেককেই আর একবার মনে করিয়ে দিয়েছে ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলা মতপ্রকাশ আর সত্য প্রতিষ্ঠায় কতটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার বিষয়টি৷ যদিও এবারের ফ্রাঙ্কফুর্ট বই মেলা নিয়ে বহু আগ থেকেই চলছে নানা বিতর্ক – কারণ, চীনকে অতিথি দেশ হিসাবে বেছে নেয়া৷ মেলাজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে তাই চীন৷ চীনের অংশগ্রহণ সম্পর্কে ম্যার্কেল বলেন, চীন সম্পূর্ণ সচেতনভাবেই ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলার মঞ্চে উপস্থিত হয়েছে৷ এখানে প্রশংসা ও সমালোচনা শোনা যাবে এবং সেটাই এই মেলার সার্থকতা৷ আমি আশা করি এবং আমি নিশ্চিত, যে সব বিষয় নিয়েই এখানে খোলামেলা আলোচনা হবে৷ কোন প্রশ্নই বাদ যাবে না৷ এটাই হল মত প্রকাশের অধিকারের ভিত্তি৷ সাহিত্যের মতো সংস্কৃতির অন্য কোন শাখা নেই, যেখানে মত প্রকাশের বিষয়টিকে এতটা প্রাধান্য দেওয়া হয়৷
বলা হচ্ছে, চীনের বই বা গণমাধ্যমে চীনা মানুষের মতের খুবই কম প্রতিফলন ঘটে৷ তাই প্রশ্ন উঠছে, যে সব চীনা প্রতিষ্ঠান বা প্রকাশক এই বই মেলায় অংশ নেবেন, তারা কি আসলেই তাদের মনের কথা প্রকাশ করতে পারবেন! সেপ্টেম্বরে বার্লিনে মেলার প্রস্তুতি উপলক্ষ্যে আয়োজিত সভায়ও তৈরি হয়েছিল এমনই মতভেদ৷ যদিও সব কিছুর পরও ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলা আয়োজকদের আশাকে পূর্ণ করে এগিয়ে চলেছে৷
দ্বিতীয় দিন বইমেলার বাইরে চীনের কারারুদ্ধ বুদ্ধিজীবী লিউ শাওবো এবং টান ইয়োরেন-এর মুক্তি দাবি করে প্লাকার্ডসহ শান্তিপূর্ণ মিছিল হয়৷ মেলার ব্যবস্থাপক ইয়ুর্গেন বোস গণমাধ্যমকে বলেন, ‘‘চীন আমাদের মুগ্ধ করে, আবার উত্যক্তও করে৷ কিন্তু আমরা দুটো বিষয়কেই চ্যালেঞ্জ হিসাবে নিয়েছি৷'' তিনি আরো বলেন, এই বই মেলা বিভিন্ন জাতির অনেক মানুষকে স্বাধীনভাবে তাঁদের কথা বলার সুযোগ নিশ্চিত করছে ৷
বিশিষ্ট চীনা কবি বাই লিং এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, কিছু মানুষ ‘‘ভিন্ন ধরণের কথা বলে৷'' তিনি বলেন, তাদের কাছে গোপন লেখনি বা কবিতার মাধ্যমে তা প্রকাশ করা ছাড়া অন্য কোন উপায় নেই৷
এতো সব বিতর্কের পরও চীনা প্রতিনিধি দলের প্রধান জেং ফুহাই এক বার্তায় আশা প্রকাশ করে জানান, এই মেলাতে জার্মানি এবং পৃথিবীর অন্যান্য দেশ থেকে যে প্রতিনিধিরা এসেছেন, তাঁদের সামনে চীনের ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং সাহিত্য – সবই সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তোলা যাবে৷ চীন এই মেলা উপলক্ষ্যে ৭ দশমিক ৪ মিলিয়ন ডলার খরচ করেছে৷ বই প্রদর্শনী ছাড়াও প্রতিদিনই রয়েছে সাংস্কৃতিক আয়োজন, চীনের ঐতিহ্যবাহী পুতুলের ছায়ানৃত্য, এমনকি হস্তশিল্পও৷
এবারের মেলায় কম্পিউটারের মাধ্যমে বই পড়ার বিশেষ যন্ত্র বা ই-বুক বেশ সাড়া তুলেছে৷ সম্প্রতি প্রকাশিত এক সমীক্ষায় বলা হয় যে, ই-বুক ২০১৮ সালের মধ্যেই পুরোপুরি দখল করে নেবে মুদ্রিত বইয়ের বাজার৷ বিশ্বের সবচেয়ে বড় এই আন্তর্জাতিক পুস্তক মেলায় ১০০ টির মত দেশ প্রায় ৬ হাজার ৯শ স্টলে নিজেদের বই ও অন্যান্য সামগ্রী তুলে ধরছে৷
প্রতিবেদক: ঝুমুর বারী
সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন