পেরেক ও সুতার শিল্পকর্মের চমক
২৫ জুন ২০১৫তাঁর ছবির দিকে ভালো করে নজর না দিলে মনে হবে, কাগজের উপর পেন্সিল দিয়ে আঁকা৷ কিন্তু মন দিয়ে দেখলে বোঝা যাবে, ছবিগুলি আসলে পেরেকে জড়ানো সুতা দিয়ে সৃষ্টি করা হয়েছে৷ পেরেক ও সুতা দিয়ে তৈরি এই সব ছবির স্রষ্টা ব্রিটিশ টেক্সটাইল ডিজাইনার ডেবি স্মিথ৷ তিনি বলেন, ‘‘যখন আর্ট আর ডিজাইন নিয়ে মৌলিক শিক্ষা নিচ্ছিলাম, তখন মনে হয়েছিল, টেক্সটাইল তার নিজস্ব অধিকারে শিল্প হয়ে উঠতে পারে৷ শুধু কোনো কিছু মেরামত করতে সুতা ব্যবহার করা হয়৷ তবে প্রথমেই ছবি সৃষ্টি করার কথা ভাবিনি৷ কিন্তু সামগ্রিকভাবে উপাদান নিয়ে ভাবতে শুরু করি৷ তারপর কলেজে টেক্সটাইল নিয়ে পড়াশোনা শুরু করি৷ সেখান থেকে আজ এখানে পৌঁছেছি৷''
৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে ডেবি স্মিথ সুতা-শিল্পী হিসেবে কাজ করছেন৷ তাঁর শিল্পসৃষ্টির মূল্য ১৮,০০০ ইউরো পর্যন্ত ছুঁয়েছে৷ প্রত্যেকটি চিত্র এমন কোনো মুহূর্তের উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে, যা তাঁকে বিশেষভাবে নাড়া দিয়েছে৷
সৃষ্টির কাজে কত পরিমাণ সুতা ও পেরেক ব্যবহার করা হলো, তা নিয়ে মাথা ঘামান না তিনি৷ ডেবি বলেন, ‘‘আমার কাছে এটা ড্রয়িং৷ অন্যভাবে আঁকা৷ আমি সুতাকে পেন্সিল হিসেবে দেখি৷ প্রথমে সব লাইন তৈরি করে আরও লাইন যোগ করা হয়৷ ঠিক যেভাবে পেন্সিল দিয়ে করা হয়৷
একেবারে নিজস্ব এই শৈলির কারণে অসংখ্য আন্তর্জাতিক কোম্পানি তাঁর কাজের বিষয়ে সচেতন হয়ে উঠছে৷ তিনি ফরাসি ফ্যাশন ডিজাইনার ‘অ্যার্মেস'-এর দোকানের জানালার ডিজাইন করেন৷ লন্ডনে ২০১২ সালের অলিম্পিক উপলক্ষ্যে তিনি ‘আডিডাস' কোম্পানির জন্য ডিজাইন করেছেন৷ জার্মানির মার্সিডিজ বেনৎস কোম্পানির জন্য মোবিলিটি সংক্রান্ত একটি স্টাডিরও ডিজাইন করেছেন ডেবি৷
তাঁর প্রথম বাণিজ্যিক কাজ অবশ্য এসেছিল নিউ ইয়র্ক টাইমস ম্যাগাজিন থেকে৷ তাদের লোগো নতুন করে তুলে ধরাই ছিল তার লক্ষ্য৷ ডেবি স্মিথ বলেন, ‘‘এর আগের কাজের তুলনায় সেটা ছিল একেবারে ভিন্ন৷ কারণ আমি শুধু এভাবে ড্রয়িং করেছি৷ আরও গ্রাফিক, মানে টাইপোগ্রাফি বা হরফ নিয়ে কাজ করা আমার জন্য বেশ ইন্টারেস্টিং ছিল৷ এর ফলে ভবিষ্যতের জন্যও আরও পথ খুলে গেল৷ কারণ আমার সৃষ্টি আরও বেশি দর্শকের কাছে পৌঁছে গেল৷ কুঁয়োর ব্যাঙ হয়ে থাকতে চাইনি৷ এই প্রক্রিয়া সীমিত বলে মনে হলেও নানা ভাবে এর প্রয়োগ করা সম্ভব৷''
ডেবি স্মিথ ইংল্যান্ডের পশ্চিমে গ্লস্টাশায়ার শহরে বসবাস করেন৷ শহুরে অঞ্চলেই তিনি অনুপ্রেরণা খুঁজে পান৷ গোটা ইউরোপ থেকে তাঁর জন্য বাণিজ্যিক প্রকল্পের বায়না আসে৷ যেমন ২০১২ সালে ডেবি স্মিথ হামবুর্গ শহরের ফিলহারমোনিক হলের জন্য বিজ্ঞাপনের ডিজাইন করেছিলেন৷ ‘প্রতিটি স্বরলিপিই এক অভিজ্ঞতা' – এই মটোর ভিত্তিতে তিনি একটি সাংগীতিক সৃষ্টিকর্ম দৃশ্যমান করে তুলেছিলেন৷ এই শিল্পকর্ম বেশ আলোড়ন তুলেছিল৷ ডেবি বলেন, ‘‘এটা দেখে অনেকের মুখ হাঁ হয়ে গিয়েছিল, কারণ সেটা অপ্রত্যাশিত ছিল৷''
ডেবি স্মিথ-এর কাজ ভালোই চলছে৷ বলা যেতে পারে, তিনি নিজের কর্মজীবনের বুনট ভালোই গড়ে তুলেছেন৷