ঢাকার ৪২২টি হাসপাতাল আগুন লাগার ঝুঁকিতে
১৯ মার্চ ২০২১সর্বশেষ গত ১৭ মার্চ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসাতালের করোনা ইউনিটের আইসিইউতে আগুন লেগে চার জন রোগী মারা গেছেন৷ এর আগে গত বছর মে মাসে বেসরকারি ইউনাইটেড হাসাপাতালে করোনা ইউনিটে আগুন লেগে পাঁচ জন মারা যান৷
এর বাইরে সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন স্থানের হাসপাতালগুলোতে আগুন লাগার ঘটনাও অনেক ঘটেছে৷ ঢাকা মেডিকেলে গত জানুয়ারি মাসেই আরেকবার আগুন লেগেছিল৷ ওই আগুন লেগেছিল পুরনো ভবনের আইসিইউতে৷
ফায়ার সার্ভিসের হিসেব অনুযায়ী গত বছর (২০২০) সারাদেশে মোট আগুনের ঘটনা ঘটেছে ২১ হাজার ৭৩টি৷ এর মধ্যে বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে আগুনের ঘটনা ঘটেছে ৯০ টি৷ তার আগের বছর, অর্থাৎ ২০১৯ সালে সারাদেশে আগুনের ঘটনা ছিল ২৪ হাজার৷ তারমধ্যে হাসপাতাল ও ক্লিনিকে আগুনের ঘটনা ছিল ৭৭৮টি৷ কিন্তু করোনার সময় আইসিইউতে আগুন লাগার ঘটনায় উদ্বেগ বেড়েছে৷
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. ফরিদ হোসেন জানান, ঢাকা মেডিকেলের আইসিইউতে সর্বশেষ আগুনের ঘটনা সামান্য একটা স্পার্ক থেকে৷ আর তা থেকে ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ে৷ তিনি বলেন, ‘‘আরো অনেকের প্রাণহানি হতে পারতো৷ কিন্তু আল্লাহর অশেষ রহমত দ্রুত রোগীদের সরিয়ে নেয়ায় প্রাণহানি কম হয়েছে৷’’
তিনি জানান, ‘‘করোনার সময়ে হাসপাতালের আইসিইউগুলোতে আগুনের ঝুঁকি বেড়ে গেছে৷ এর প্রধান কারণ লোড বেড়ে যাওয়া৷ আইসিইউতে হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা থাকায় সেখানে অক্সিজেনোর চাপ অনেক বেশি৷ তাই সামান্য একটি স্পার্ক হলেও আগুন ধরে যায়৷ ঢাকা মেডিকেলে তাই হয়েছে৷’’
তিনি বলেন, অনেক ক্ষেত্রে এখন রোগীডের লোড নেয়ার মতো ক্যাপাসিটি নাই৷ ইলেকট্রিক লাইনগুলোও লোড নিতে পারছে না৷ শর্ট সার্কিটের আশঙ্কা আছে৷ তবে হাসপাতালগুলোর এই অবস্থা নতুন নয়৷ ফায়ার সার্ভিসের হিসাব অনুযায়ী, ঢাকার ৪৪২টি হাসপাতালের মধ্যে ৪২২টি হাসপাতালই আগুন ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে৷ শতকরা হিসেবে এটা ৯৭.৫ ভাগ৷ এই হাসপাতালগুলোকে ফায়ার সার্ভিস নোটিশ দিলেও তেমন কাজ হয় না৷ এই তালিকায় ‘সাধারণ ঝুঁকিতে’ আছে ২৪৯টি এবং ‘খুবই ঝঁকিপূর্ণর’ তালিকায় রয়েছে ১৭৩টি৷ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ‘খুবই ঝঁকিপূর্ণ’ তালিকার একটি সরকারি হাসপাতাল৷ ঢাকা শহরের আরো ২০টির মতো বড় সরকারি হাসপাতাল আছে এই তালিকায়৷ ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ‘খুবই ঝঁকিপূর্ণ’ সোরাওয়ার্দী হাসপাতালেও আগুন লেগেছিল৷
ফায়ার সার্ভিসের ঢাকা বিভাগের সহকারী পরিচালক ছালেহ উদ্দিন বলেন, ‘‘আমরা প্রতিবছরই তাদের নতুন করে নোটিশ দিই৷ আমাদের পরিদর্শন টিমও যায়৷ কিন্তু অবস্থার উন্নতি হয় না৷ আমরা সরাসরি তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারি না৷ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে তাদের জানাই৷’’
তিনি বলেন, ‘‘হাসপাতালগুলোর ফায়ার সেফটি খুবই খারাপ অবস্থায় রয়েছে৷ সরকারি-বেসরকারি সব হাসপাতালেরই একই অবস্থা৷ অনেক হাসাপতালে ফায়ার সেফটি বলতেই কিছু নেই৷ কিন্তু প্রত্যেক হাসপাতালে ফায়ার সেফটি থাকা বাধ্যতামূলক৷’’ তবে ফায়ার সার্ভিস মনে করে, করোনার সময় হাসপাতালে আগুন লাগা বেড়ে গেছে সেরকম কোনো তথ্য তাদের কাছে নেই৷ তাদের মতে, ভবনের ফায়ার সেফটি নেশনাল বিল্ডিং কোড-এর সঙ্গে জড়িত৷ তবে যে ভবনে দাহ্য পদার্থ বেশি থাকবে সেই ভবনের অগ্নি নিরাপত্তাও তত ভালো হতে হবে৷ ভবনটি কী কাজে ব্যবহার করা হচেছ তা খুবই জরুরি ফায়ার সেফটি নির্ধারণে৷
ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন) লে. কর্নেল জিল্লুর রহমান বলেন, ‘‘হাসপাতালে অনেক বেশি ইলেকট্রিক এবং ইলেকট্রনিক সরঞ্জাম থাকে৷ হাসপাতালে এখন অত্যাধুনিক এমআরআই মেশিন, এক্স-রে মেশিন আছে৷ কিন্তু হাসপাতাল ভবনগুলো অনেক পুরনো৷ আবার আইসিইউতে হাই অক্সিজেন ফ্লো থাকে৷ তাই পুরনো অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা পর্যাপ্ত নয়৷’’
তিনি বলেন, তারা হাসপাতালগুলোকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে এবিষয়ে সতর্ক করেন, কিন্তু সরসারি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না৷
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক দাবি করেন, ‘‘সরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি বেসরকারি হাসপাতালগুলোকেও ইউনাইটেড হাসপাতালে আগুনের পর সতর্ক করা হয়েছে৷ সব হাসপাতালের আইসিইউ পুরোপুরি ফায়ার প্রুফ করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে৷ এটা আমরা মনিটরিং করবো৷’’
তিনি আরো জানান, আগুনের পর ঢাকা মেডিকেলের আইসিইউ আরো সম্প্রসারণের পরিকল্পনা করা হয়েছে৷
২০১৯ সালের এপ্রিলের ছবিঘরটি দেখুন...