জার্মান সেক্সশপ দেউলিয়া হওয়ার মুখে
১৮ ডিসেম্বর ২০১৭দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বৈমানিক হিসেবে কাজ করেছেন বেয়াটে উহসে, এমনকি স্টান্ট পাইলটও ছিলেন৷ এই অসমসাহসী মহিলার আরেকটি সাহসের কাজ ছিল যুদ্ধ শেষ হবার পরেই ১৯৪৬ সালে তাঁর সেক্সশপ চেইন প্রতিষ্ঠা করা৷ যৌনকামনা ও যৌন উদ্দীপনায় আজীবন বিশ্বাসী বেয়াটে উহসে ও তাঁর বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড জার্মানদের যৌনজীবনকেই বদলে দিয়েছে, বলে সমাজতাত্ত্বিকরা দাবি করে থাকেন৷ ২০০১ সালে পরলোকগমন করেন বেয়াটে উহসে৷ তার দু'দশকের মধ্যেই কি তাঁর ‘ইরোটিক' সাম্রাজ্য অস্ত যেতে বসেছে? গত শুক্রবার ফ্লেন্সবুর্গে হোল্ডিং কোম্পানি ‘বিইউ' দেউলিয়া হওয়ার নোটিশ দাখিল করে – তবে নিজের নিয়ন্ত্রণে ও আদালতের তত্ত্বাবধানে থেকে৷
‘বিইউ'-এর কর্মীসংখ্যা এখন মাত্র ১০, কিন্তু ইউরোপ জুড়ে তাদের যে ৪৩টি সেক্সশপ আছে – কোম্পানির প্রশাখাগুলি যে সব বিপণী চালিয়ে থাকে – সেখানে আজও প্রায় ৩৪৫ জন কর্মী নিযুক্ত৷
‘বিইউ' হোল্ডিং-এর মূল সমস্যা হলো বিনিয়োগকারীদের হাতে কোম্পানির প্রায় তিন কোটি ইউরো মূল্যের বন্ড বা কাগজ, যা ২০১৯ সালের মধ্যেই ফেরত দিতে হবে৷ ওদিকে কোম্পানি ২০১৬ সালে ১০ কোটি ইউরোর বেশি আয় করলেও, লোকসান হয়েছে সাকুল্যে প্রায় ৬২ লাখ ইউরো৷
শেয়ারের ওঠানামা
১৯৯৯ সালে বেয়াটে উহসে কোম্পানির শেয়ার যখন প্রথম বাজারে আসে, তখন তার মূল্য ছিল শেয়ার প্রতি ৭ ইউরো ২০ সেন্ট৷ পরে সেই শেয়ারের দাম দাঁড়িয়েছিল ২৮ ইউরো ২০ সেন্টে৷ ২০০৫ সালেও বেয়াটে উহসে কোম্পানি সবচেয়ে বেশি আয় করে৷ তা সত্ত্বেও ২০০৮ সালের মধ্যে কোম্পানির শেয়ারের মূল্য গিয়ে দাঁড়ায় ৫৮ সেন্টে৷ গত সপ্তাহান্তে সেই শেয়ার বেচাকেনা হয়েছে মাত্র পাঁচ সেন্টে৷
শুধু একটি ভুলে?
কেন এভাবে গ্রাহক খোয়াল বেয়াটে উহসে? বিশ্লেষকরা বলছেন, কোম্পানিটি ই-কমার্সের প্রবণতা ঠিক উপলব্ধি করতে পারেনি; সেই অবকাশে ‘আইস.ডিই' বা ‘আমোরেলি'-র মতো নবাগত কোম্পানিরা বিশেষ করে মহিলা ও দম্পতিদের জন্য অভিনবত্বের পসরা খুলে তাদের ‘‘তরতাজা আবেদনের'' জোরে বাজার মাত করেছে৷
স্টান্ট পাইলট
বেয়াটে উহসে তাঁর স্টান্ট পাইলটের লাইসেন্স পান ১৯৩৮ সালে৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে তিনি জার্মানির হয়ে মেসারস্মিট জঙ্গিবিমান চালিয়েছেন৷ ১৯৪৬ সালে তাঁর প্রথম বাণিজ্যিক উদ্যোগ ছিল মহিলারা কিভাবে গর্ভবতী হওয়া থেকে রেহাই পেতে পারেন, সে বিষয়ে একটি প্রচারপত্রিকা৷ তাঁর মেইল অর্ডার ব্যবসা খুব ভালোই চলতে থাকে; ফলে বেয়াটে উহসে-র ‘‘বৈবাহিক স্বাস্থ্যবিধি প্রতিষ্ঠানের'' প্রথম বিপণীটি খোলে ১৯৬২ সালে, ফ্লেন্সবুর্গে – যেখানে মহিলাদের অন্তর্বাস ও গর্ভনিরোধক বিক্রি করা হতো, নৈতিকতা নিয়ে চিন্তিত নাগরিকদের দায়ের করা বহু মামলা সত্ত্বেও৷ সত্তরের দশকে জার্মানি যখন অবশেষে তার পর্নোগ্রাফি আইন শিথিল করে, ততদিনে বেয়াটে উহসের নাম জার্মানির সব প্রাপ্তবয়স্কের জানা হয়ে গিয়েছে৷
বেয়াটে উহসের সাম্রাজ্যে একটি টেলিভিশন সেক্স চ্যানেলও বাদ যায়নি৷ ১৯৮৯ সালে বার্লিন প্রাকারের পতনের পর সাবেক পূর্ব জার্মানির বাসিন্দারাও বেয়াটে উহসের খদ্দের হন, যার ফলে তাঁর ‘ইরোটিক' পণ্যের বিক্রি বাড়ে দারুণভাবে৷ কিন্তু বেয়াটে উহসে সংস্থার একাধিপত্যে প্রথম আঁচড় কাটে ইন্টারনেট ভিত্তিক নিখর্চার ভিডিও ক্লিপ – যার সঙ্গে ইন্টারনেট ভিত্তিক মেইল অর্ডার যুক্ত হয়ে যৌন পণ্য সংক্রান্ত ব্যবসায়ের ধারাপ্রকৃতিই বদলে যায়৷
বেয়াটে উহসে যে সময়ের সঙ্গে পা মিলিয়ে চলার চেষ্টা করেনি, এমন নয়৷ ২০০৪ সালে সংস্থাটি হামবুর্গে শুধুমাত্র মহিলাদের জন্য তাদের প্রথম সেক্সশপ খোলে, এমনকি কোম্পানির লোগো-তেও নারীসুলভ ছোঁয়া আনে৷ কিন্তু এ সব সত্ত্বেও হয়তো ‘ডেয়ার স্পিগেল' পত্রিকার আশঙ্কাই সত্যি হতে চলেছে: যে মহিলা ‘‘প্রায় একাই'' জার্মানীর যৌন মানচিত্র বদলে দিয়েছিলেন, তাঁর সাধের সংস্থাটিকে এই অবক্ষয়ের হাত থেকে রক্ষা করা খুব সহজ হবে না৷
এসি/ডিজি (এএফপি, রয়টার্স, ডিপিএ)