জার্মানি পর্নো দেখায় বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ছিল!
১৬ জানুয়ারি ২০১৭স্ত্রী-পুরুষের যৌন সম্পর্ক – বিশেষ করে প্রাক-বৈবাহিক বা বিবাহবর্জিত যৌন সম্পর্ক – কিংবা সাধারণভাবে যৌনতার ক্ষেত্রে ইউরোপ তথা জার্মানি যে চিরকাল এতটা উদার ও প্রগতিশীল ছিল, এমন নয়৷
জার্মানিতে তথাকথিত ‘যৌন বিপ্লব' শুরু হয় গর্ভনিরোধক পিল চালু হবার সাথে৷ সেক্ষেত্রেও বহু দ্বিধা, দ্বন্দ্ব পার হতে হয়েছে৷ ১৯৬৪ সালে পশ্চিম জার্মানিতে মাত্র হাজার দু'য়েক মহিলা পিল পরখ করেছিলেন; অধিকাংশ ডাক্তার অবিবাহিত মহিলাদের পিলের প্রেস্ক্রিপশনই দিতে চাইতেন না৷ ১৯৬৮ সালে দেখা যায়, প্রায় ১৪ লাখ মহিলা পিল ব্যবহার করছেন৷ আরো দশ বছরের মধ্যে ২০ বছরের কমবয়সি মেয়েদের প্রায় ৮০ ভাগ নিয়মিত পিল ব্যবহার করছিলেন৷ অর্থাৎ জার্মানিতে ‘যৌন বিপ্লব' তখনই প্রায় সফল হয়েছে বলা চলে৷
পর্নোগ্রাফির অবদান
যৌনতার প্রতি জার্মান সমাজের মনোভাব বদলাতে পর্নোগ্রাফিও একটা বিশেষ অবদান রেখেছে৷ পর্নোগ্রাফির সূচনা কিন্তু জার্মানিতে নয়, ব্রিটেনে, যেখানে ১৯৬৪ সালে ‘‘কিং'' নামের প্রথম ‘গ্লসি' পর্নো ম্যাগাজিন প্রকাশিত হয়৷ তার এক বছর পরেই বাজারে আসে ‘‘পেন্টহাউস'', তারও পরে মার্কিন মুলুকের ‘‘প্লেবয়'' প্রায় একই সঙ্গে ইউরোপও জয় করে – যখন ইটালীয় পুরুষরা গাড়ি চালিয়ে সুইজারল্যান্ডের সীমান্তে যেতেন শুধু ‘‘প্লেবয়'' কিনতে৷ ওদিকে ১৯৬৮ সালের খবর ছিল যে, সারা বিশ্বে সবচেয়ে বেশি পর্নোগ্রাফি দেখা হয় জার্মান ফেডারাল প্রজাতন্ত্র নামের দেশটিতে, অর্থাৎ পশ্চিম জার্মানিতে৷
ততদিনে পর্নোগ্রাফি ফিল্মেও এসে গেছে৷ ‘‘কাউন্ট পর্নো ও তাঁর সঙ্গিনীরা'' শীর্ষক একটি ছবি ১৯৬৮ সালে বাজারে আসে ও ৩০ লাখের বেশি মানুষ রীতিমতো টিকিট কেটে সিনেমা হলে গিয়ে ছবিটি দেখেন৷ কাউন্ট পর্নোর সাফল্য থেকে এক পর্যায় পর্নো ছবি জন্ম নেয়, যাদের মধ্যে সবচেয়ে নামকরা ছিল ‘‘স্কুলগার্ল রিপোর্ট, বাবা-মায়েরা যা অসম্ভব বলে মনে করেন''৷ এই সব ছবির আশ্চর্য জনপ্রিয়তা দেখেই জার্মান মিডিয়া ‘‘সেক্স ওয়েভ''-এর কথা বলতে শুরু করে৷
জার্মান পর্নো ছবির সেক্স সিনগুলি ক্রমেই আরো চমকদার হতে থাকে৷ পর্নোগ্রাফির উপর আইনগত নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয় ১৯৭৫ সালে৷ আজ জার্মান পর্নোগ্রাফির দু'টি ভাগ আছে বলা চলে: একদিকে মার্কিন ‘গ্ল্যামার' পর্নোগ্রাফি, অন্যদিকে বিশেষভাবে ‘হার্ডকোর' জার্মান ‘হোম-মেড' পর্নোগ্রাফি, যা তার বিকৃত রুচির কারণে বিদেশেও প্রচুর গ্রাহক পেয়ে থাকে৷
অবশ্য মনে রাখা দরকার যে, জার্মান আইন হার্ডকোর পর্নোগ্রাফির ব্যাপারে বিশেষ কড়া, যদিও সফ্টকোর পর্নোগ্রাফি, গণিকাবৃত্তি বা সেক্স শপের ক্ষেত্রে খুবই উদার৷ ১৮ বছরের কম বয়সিদের হার্ডকোর পর্নোগ্রাফি সরবরাহ করাটা এদেশে একটা অপরাধ; যে দোকানে তা বিক্রি হচ্ছে, সেখানেও ১৮ বছরের কম বয়সিদের ঢুকতে দেওয়া চলবে না৷ যে সব ওয়েবসাইটে পর্নোগ্রাফিক কন্টেন্ট আছে, তাদের নিশ্চিত হতে হবে যে ব্যবহারকারীর বয়স ১৮-র বেশি৷ অপরদিকে টিভি চ্যানেলগুলো রাতের দিকে সফ্টকোর কন্টেন্ট দেখাতে পারে; এক্ষেত্রে বয়সসীমা হলো ১৬ বছর৷
বজ্র আঁটুনি ফস্কা গেরো?
বিশ্বে কোন দেশের নাগরিকরা সবচেয়ে বেশি পর্নো দেখেন, তা নিয়ে বহু ধরনের পরিসংখ্যান পাওয়া যাবে ইন্টারনেটে – যদিও সে সব পরিসংখ্যান কতটা নির্ভরযোগ্য, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে৷ তবে সাধারণভাবে এটুকু বলা চলে যে, ধর্মীয় কড়াকড়ি ও সমাজব্যবস্থার বিচারে সবচেয়ে রক্ষণশীল দেশগুলিতেই সবচেয়ে বেশি পর্নোগ্রাফি দেখা হয়ে থাকে৷
যৌনতার প্রতি মানবের আকর্ষণ ও কৌতূহল চিরকালের ও তার একটা আধুনিক বাণিজ্যিক রূপ হলো পর্নোগ্রাফি৷ অন্য বাকি সব পণ্যের মতোই, এখানে চাহিদা ও সরবরাহের খেলায় কোন দেশ যে কখন এগিয়ে থাকবে, তা বলা শক্ত৷ ষাটের দশকের শেষে জার্মানি যেমন পর্নোগ্রাফির সবচেয়ে বড় গ্রাহক ছিল, তেমন পর্নোগ্রাফি রপ্তানির ক্ষেত্রে বহু বছর ধরে শীর্ষস্থানটি অধিকার করে ছিল – ডেনমার্ক! ছোট দেশ বলে নয়, উদারপন্থি দেশ বলে, যার সুযোগ নিয়ে পর্নো ব্যবসা ফুলেফেঁপে উঠতে পেরেছে৷
দুনিয়া জুড়ে যে ইন্টারনেট বিপ্লব চলেছে, তার একটি ফল সম্ভবত এই যে, যৌন বিপ্লবের কামনা প্রতিকূল পরিস্থিতিতে পথ না খুঁজে পেয়ে, পর্নোগ্রাফির মাত্রাধিক ব্যবহারে নিবৃত্তি খুঁজতে পারে৷
আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷