1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

গ্রহাণুর হাত থেকে বাঁচানো যাবে পৃথিবীকে?

৫ মে ২০১৯

কখনো যদি বিশাল আকারের কোনো গ্রহাণু বা ধূমকেতু পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসে, কী করবো আমরা? এই আশঙ্কা সামনে রেখে কিভাবে তা এড়ানো যায়, সে গবেষণাই করছেন বিশেষজ্ঞরা৷

https://p.dw.com/p/3HtJ1
ছবি: NDR

আমরা হয়তো খবর রাখি না, কিন্তু মাঝেমধ্যেই বিশাল আকারের সব পাথরখণ্ড পৃথিবীর গা ঘেঁষে চলে যায়৷ ২০১৮ সালের এপ্রিলে ২০১৮জিইথ্রি নামের ৫০ মিটার ব্যাসের একটি গ্রহাণু বিপজ্জনকভাবে পৃথিবীর কাছে চলে আসে৷ মাত্র ২১ ঘণ্টা আগে জ্যোতির্বিদরা এটির উপস্থিতি টের পান৷

এরও পাঁচ বছর আগে ২০ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি উল্কা রাশিয়ার চেলিয়াবিনস্কে আঘাত হানে৷ আকারের তুলনায় বিপর্যয় কম মাত্রারই হয়েছিল৷ কয়েক হাজার বাড়িঘর এর প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল,  প্রায় এক হাজার মানুষ আহত হয়েছিলেন৷ তবে ভাগ্যক্রমে এর আঘাতে কেউ প্রাণ হারাননি৷ 

মহাকাশ গবেষকরা অবশ্য সবচেয়ে প্রাণঘাতী বস্তুগুলোর অবস্থান নিশ্চিত করার বিষয়ে বেশ আত্মবিশ্বাসী৷ এই গ্রহাণুগুলো কয়েক কিলোমিটার ব্যাসেরও হতে পারে৷ তবে আগামী ১০০ বছরের মধ্যে এত বড় কোনো গ্রহাণু পৃথিবীতে আঘাত করবে না বলে মোটামুটি নিশ্চয়তা দিচ্ছেন গবেষকরা৷

সবচেয়ে বিপজ্জনক মাঝারি আকার

আকারে কয়েকশ' মিটার ব্যাসের গ্রহাণু বড় আকারের বিপদে ফেলতে পারে পৃথিবীর জীববৈচিত্র্যে৷ এবং উপরে বর্ণনা করা সবশেষ গ্রহাণুটির বিবরণ থেকে বোঝা যায়, এর সবগুলোর অবস্থান ও আবির্ভাব অনেক আগে থেকে শনাক্তও করা যাবে না৷

এ কারণেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন, জার্মানি, ফ্রান্স ও ইসরায়েলের তিনশ' জ্যোতির্বিজ্ঞানী, নভোচারী, মহাকাশ প্রকৌশলী ও অন্যান্য বিশেষজ্ঞরা সমবেত হয়েছেন ভবিষ্যৎ করণীয় নির্ধারণে৷

যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ডে ষষ্ঠ প্ল্যানেটারি ডিফেন্স কনফারেন্সে মূল আলোচনার বিষয় আমাদের এই গ্রহের প্রতিরক্ষাব্যবস্থা নিশ্চিত করা৷ জনস হপকিনস অ্যালায়েড ফিজিক্স ল্যাবরেটরির গবেষকদের সঙ্গে মিলে এ সম্মেলনের আয়োজন করেছে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা৷

করণীয় কী?

বিজ্ঞানীরা ৩০০ মিটার আকারের একটি মডেল বানিয়েছেন৷ মডেলটি প্রতি সেকেন্ডে ১৪ কিলোমিটার, অর্থাৎ, ঘণ্টায় প্রায় ৫০ হাজার কিলোমিটার গতিতে ৫৭ মিলিয়ন কিলোমিটার দূর থেকে ছুটে আসছে৷ পৃথিবীতে এর আঘাত হানার আশঙ্কা কেবল এক শতাংশ৷

এর প্রভাব এড়ানোর একটি কৌশল হলো, আগে থেকে সম্ভাব্য আঘাতস্থল চিহ্নিত করে সেখান থেকে সবাইকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে ফেলা৷

এছাড়া, অনেক বিজ্ঞানীই কিভাবে ধেয়ে আসা গ্রহাণুর গতিপথ পৃথিবীর দিক থেকে অন্যদিকে পরিবর্তন করা যায়, হবে সে আলোচনাও৷ পৃথিবীর দিকে না এলেও কাছেই অবস্থান করছে, এমন একটি ১৫০-মিটার ব্যাসের গ্রহাণুর সঙ্গে সংঘাত ঘটিয়ে সেটির গতিপথ পালটানো যায় কিনা, ২০২২ সালে তা যাচাই করেও দেখবেন বিজ্ঞানীরা৷ 

বাড়ছে সচেতনতা

যেসব গ্রহাণুর কক্ষপথ পৃথিবী থেকে ৫০ মিলিয়ন কিলোমিটারের মধ্যে, সেগুলোকে পৃথিবীর ‘কাছের' গ্রহাণু বলে ধরে নেয়া হয়৷ এই তালিকায় ২০ হাজারেরও বেশি এমন গ্রহাণু আছে, প্রতি বছর নতুন করে যোগ হচ্ছে আরো ৭০০টি করে গ্রহাণু৷

ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি এসা'র ডেটলেফ কোশনি বলছেন, ‘‘চেলিয়াবিনস্কের ঘটনার পর মানুষ এ বিষয়ে অনেক সচেতন হয়েছে, ফলে রাজনৈতিক নেতাদের ওপরও চাপ তৈরি হয়েছে৷''

নাসার কর্মকর্তা জিম ব্রিডেনস্টাইন এএফপিকে বলেছেন, ‘‘আমাদের মানুষকে আগে বোঝাতে হবে, এটা হলিউড না, এটা সত্যিকারের ঘটনা৷''

বিজ্ঞানীরা বলছেন, অন্য সবকিছু ঠিকঠাক থাকলেও মূল সমস্যা হয়, যখন সূর্যের কাছ ঘেঁষে কোনো গ্রহাণু পৃথিবীর দিকে ছুটে আসতে থাকে৷ আলোর কারণে পৃথিবীর টেলিস্কোপ থেকে এরা প্রায় অদৃশ্য থাকে৷ সাধারণ টেলিস্কোপ তো নয়ই, কেবল আরিজোনা, হাওয়াই, চিলি, স্পেন ও সিসিলিতে বসানো বিশেষ টেলিস্কোপ দিয়ে হয়ত এদের দেখা যেতে পারে৷

এই সমস্যা এড়াতে বিজ্ঞানীরা এখন মহাকাশে টেলিস্কোপ বসানোর কথা ভাবছেন৷ এটি বিভিন্ন অ্যাঙ্গেল থেকে এমন গ্রহাণু খুঁজে বের করতে সহায়তা করবে৷ এমনকি চাঁদের দূরতম প্রান্তে এই টেলিস্কোপ স্থাপন করা যায় কিনা, তা-ও ভাবছেন তাঁরা৷ সেখানে চাঁদের পৃষ্ঠের আড়ালে সূর্যের আলো ও পৃথিবীর প্রতিফলন এড়িয়ে মহাকাশের আরো গভীরের খোঁজ মিলবে বলে আশা তাঁদের৷

এডিকে/এসিবি (ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি)