এটা সিপ্রাসের রাজনৈতিক কৌশলও হতে পারে
২৯ জানুয়ারি ২০১৫সরকার গঠনের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই আলেক্সিস সিপ্রাস ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়লেন৷ ইউক্রেন সংকটের কারণে রাশিয়ার ওপর আরো কঠোর অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপের জন্য ইইউ যে সম্মিলিত বিবৃতি দিয়েছে, গ্রিস তাতে সম্মতি দিতে রাজি নয়৷ এটা কি একটা আনাড়ির মতো ভুল, নাকি উগ্র বামপন্থি সিরিজা দলের ভয়ংকর রাজনৈতিক কৌশল? যেটাই হোক, ঘটনাটি খুব আশঙ্কাজনক৷
২৮টি দেশ খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে সম্মিলিতভাবে ঘোষণা দিতে গেলে কী প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়, গ্রিসের নতুন সরকার তা হয়ত জানতো না৷ হ্যাঁ, এমন সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায়না৷ আবার ব্রাসেলস থেকে ইইউভুক্ত দেশগুলোতে অনুমোদনের জন্য পাঠানো রাশিয়ার ওপর কঠোরতর অবরোধ আরোপের হুমকিসম্বলিত চিঠিটি অন্য কোথাও আটকে থাকেনি তো? সদস্যগুলো নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আপত্তি না জানালে সম্মতি দিয়েছে বলে ধরে নেয়া হয়৷ এটাই প্রথা৷ ২৮টি দেশ তা মেনেই এতদিন কাজ করেছে, গ্রিসের বামপন্থি এবং ডানপন্থির জোট সরকারকে তা বুঝতে হবে৷
আলেক্সিস সিপ্রাস তাঁর আপত্তির কথা ফোন করে ইইউ-র পররাষ্ট্র নীতি বিষয়ক প্রধানকে জানিয়েছেন৷ তিনি অভিযোগ করেছেন, এ ঘটনায় গ্রিসের প্রতি অসম্মান প্রদর্শন করা হয়েছে৷ ব্যাপারটা খুব দুঃখজনক৷ গ্রিসের এ আচরণকে নতুন সরকারের সুচিন্তিত রাজনৈতিক পদক্ষেপ মনে করলেও হয়ত ভুল হবে না৷
এর মাধ্যমে সিপ্রাস কিছু দাবি আদায়ের জন্য ইইউ-র ওপর চাপ প্রয়োগের চেষ্টা করে থাকতে পারেন৷ তিনি ভেবে থাকতে পারেন, ইইউ যদি গ্রিসের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়তার জন্য উন্নততর প্রস্তাবে সম্মতি দেয়, কেবল তাহলেই রাশিয়ার ওপর কঠোরতর অবরোধ আরোপ এবং অন্যান্য রাজনৈতিক বিষয়েও সম্মতি দেবেন৷ ইইউ-র তো শুধু অবরোধ আরোপের জন্যই সম্মতির দরকার হয় না, বাণিজ্য, বাজেট ইত্যাদি বিষয়েও তার প্রয়োজন পড়ে৷ সুতরাং এই বিষয়গুলো নিয়ে ইইউ-কে ব্ল্যাকমেল করার পরিষ্কার সুযোগ আছে৷
সিপ্রাস ইইউ-র সঙ্গে মতবিরোধের বিষয়টি সবাইকে জানিয়ে কিন্তু বলটা ইইউ-র অন্য দেশগুলোর কোর্টে ফেলে দিয়েছেন৷ এমন পরিস্থিতি সৃষ্টির আগে বিষয়টি অভ্যন্তরীণভাবে সুরাহা করে নিলে ভালো হতো৷
নিজের নির্বাচনি প্রচারের সময়ই সিপ্রাস রাশিয়ার বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপের বিরুদ্ধে খোলামেলা কথা বলেছেন৷ তাঁর সিরিজা দলের কয়েকজন নেতা নাকি মস্কোর সঙ্গে খুব ঘনিষ্ট৷ ইউরোপীয় ইউনিয়ন সবসময়ই সদস্য দেশগুলোর কাছে ব্ল্যাকমেলের শিকার হয়েছে৷ নিজের দেশের অর্থনৈতিক স্বার্থকে মাথায় রেখেই তারা তা করেছে৷ এবার পার্থক্য এটুকুই যে, আলেক্সিস সিপ্রাস খুবই দুর্বল অর্থনীতির দেশের হয়ে তা করতে চাচ্ছেন এবং দেশটির ইইউ-তে কোনো মিত্র নেই৷ তাঁর আচরণ বিব্রতকর এবং অপেশাদার৷ গ্রিসের ইইউ-কে প্রয়োজন৷ সুতরাং ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করতেই হবে৷ সপ্তাহ দুয়েক পর যে শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে সেখানে সিপ্রাসকে সামলাতে হবে৷ এথেন্সের এই সমস্যা সৃষ্টিকারীকে চ্যান্সেলর ম্যার্কেল একটা ফোন করলেও মন্দ হবে না৷