গ্রিসে সিরিজা’র জয়
২৬ জানুয়ারি ২০১৫যে দেশ একটি ২৪০ বিলিয়ন ইউরো বেইলআউট, অর্থাৎ আর্থিক ত্রাণ চুক্তির কল্যাণে দেউলিয়া হওয়া থেকে বেঁচে আছে, সে দেশের নতুন সরকার গঠিত হতে চলেছে দুই বেইলআউট বিরোধী দলের জোট বাঁধার ফলে৷ গ্রিক সংসদের ৩০০টি আসনের মধ্যে ১৪৯টি আসন যখন সিরিজার হাতে, ঠিক তখনই মধ্যপন্থি পোটামি দলের পরিবর্তে দক্ষিণপন্থি স্বাধীন গ্রিকদের সঙ্গে কথাবার্তা বলার সিদ্ধান্ত নিয়ে তাঁর প্রথম রাজনৈতিক রণকৌশলের আভাস দিলেন আলেক্সিস সিপ্রাস৷
ভোটের ফলাফল থেকে তিনি নিঃসন্দেহে জয়ী: প্রায় একশো ভাগ ভোট গণনার পর দেখা যাচ্ছে, সিরিজা পেয়েছে ৩৬ দশমিক ৩ শতাংশ ভোট; রক্ষণশীল সাবেক শাসক জোট ২৭ দশমিক ৮ শতাংশ ভোট; তৃতীয় স্থানে চরম দক্ষিণপন্থি ‘সোনালি প্রত্যুষ' দল পেয়েছে প্রায় ৬ দশমিক ৩ শতাংশ ভোট৷ এই পরিস্থিতিতে সিপ্রাস যে স্বাধীন গ্রিকদের বেছে নিলেন, তার অর্থ: যে তিনি গ্রিসের ঋণদাতাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনায় কড়া পন্থা নেবেন৷ অবশ্য সিপ্রাস যেমন একদিকে গ্রিসের বেইলআউট চুক্তিগুলি নিয়ে পুনরায় আলাপ-আলোচনা করতে চান, তেমন তিনি এই আশ্বাসও দিয়েছেন যে, তিনি ইউরো এলাকার ঋণদাতাদের বিরুদ্ধে কোনো একতরফা পদক্ষেপ নেবেন না৷
অপরদিকে সিরিজা দলের আর্থিক পরিকল্পনা সংক্রান্ত কর্মকর্তা গিয়র্গোস স্টাথাকিস নির্বাচনের পরের দিনই স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, নতুন সরকার ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক, ইউরোপীয় কমিশন এবং আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের ‘‘ট্রোইকা'' বা ত্রয়ীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করার কোনো পরিকল্পনা রাখেন না – বরং নতুন গ্রিক সরকার অপরাপর সরকারের সঙ্গে সরাসরি কথাবার্তা বলার পথ খুঁজবেন৷ বিশ্লেষকদের মতে গ্রিস অথবা তার পাওনাদারদের কেউই গ্রিস দেউলিয়া হোক অথবা ইউরো এলাকা পরিত্যাগ করতে বাধ্য হোক, এই অশুভ ফলশ্রুতি কামনা করে না৷ কাজেই শেষমেষ কোনো না কোনো আপোশ হবেই, যদিও সিপ্রাস সরকার অন্তত কিছুদিন ধরে গ্রিসের পাওনাদারদের সঙ্গে এই ‘‘বিপজ্জনক খেলা'' চালাবেন৷
গ্রিসের নির্বাচনে সিরিজার তথা সিপ্রাস-এর জয় যে দেশে সবচেয়ে বেশি উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে, সেটা সম্ভবত জার্মানি৷জার্মানির রাজনীতিকদের মধ্যে সাধারণভাবে রক্ষণশীলরা চিন্তিত, সামাজিক গণতন্ত্রীদের মতো মধ্যমপন্থিরা নতুন সরকারকে সুযোগ দেওয়ার সপক্ষে, অপরদিকে বামদল আন্তরিকভাবে উৎফুল্ল৷ গ্রিসদের যে চূড়ান্ত ব্যয়সংকোচ পরিকল্পনার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে, তা যে কিছুটা শিথিল করা প্রয়োজন, এ উপলব্ধি শুধু ‘ভার্ডি'-র মতো জার্মানির বৃহত্তম শ্রমিক সংগঠনেরই নয়, এখন ফ্রাংকফুর্টার আলগেমাইনে সাইটুং-এর মতো রক্ষণশীল পত্রিকারও হচ্ছে৷
অপরদিকে সিপ্রাস যে আবার ঋণের একাংশ মকুবের দাবি তুলছেন, জার্মানির পক্ষে তা আপাতত আলোচ্য বিষয় পর্যন্ত নয়৷
এসি/ডিজি (এপি, এএফপি)