এক অংকের সুদহার কি বাস্তবায়ন সম্ভব?
২৫ ডিসেম্বর ২০১৯বাংলাদেশে উৎপাদন খাতের জন্য ব্যাংক ঋণের সুদহার এক অঙ্কের ঘরে নামিয়ে আনতে হবে৷ পয়লা জানুয়ারি থেকেই তা কার্যকর করতে হবে ব্যাংকগুলোকে৷ মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে বাংলাদেশে ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম৷
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম গণমাধ্যমটিকে বলেন, ‘‘ব্যাংকঋণের সুদের হার এক অঙ্কে নামিয়ে আনার কৌশল ঠিক করতে গত ১ ডিসেম্বর ডেপুটি গভর্নর এস এম মনিরুজ্জামানকে আহ্বায়ক করে সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল৷ সেই কমিটির সুপারিশের আলোকেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বোর্ড সভায় শিল্প খাতে ৯ শতাংশ সুদহার নির্ধারণের সিদ্ধান্ত হয়েছে৷''
ব্যাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য ঘেটে দেখা যায়, বর্তমানে বেশিরভাগ বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক বৃহৎ ও মাঝারি শিল্পে নয়ভাগের বেশি সুদে ঋণ বিতরণ করছে৷ যা এমনকি সর্বোচ্চ সাড়ে ১৭ ভাগ পর্যন্তও রয়েছে৷ ক্ষুদ্র শিল্পে সর্বোচ্চ ২০ ভাগ হারেও ঋণ বিতরণ করছে কোনো কোনো ব্যাংক৷ গবেষণা সংস্থা বিআইডিএসের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, গড়ে ব্যাংকগুলো এখন নয় থেকে ১১ ভাগ সুদে আমানত নিচ্ছে আর ঋণ বিতরণ করছে ১৩ থেকে ১৫ ভাগ হারে৷
সুদের এই উচ্চহার বিনিয়োগকে বাধাগ্রস্ত করছে বলে দাবি করে আসছেন ব্যবসায়ীরা৷ বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যেও সাম্প্রতিক সময়ে বেসরকারি খাতের ঋণ নেয়ার প্রবণতা কমার তথ্য পাওয়া যায়৷ অক্টোবরে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি নেমে এসেছে দশ ভাগে, আর জুলাই থেকে অক্টোবর এই সময়ে ঋণ প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র এক দশমিক পাঁচ-পাঁচ ভাগ৷
এমন অবস্থায় ব্যাংক ঋণের সুদহার এক অঙ্কে নামিয়ে আনার দাবি জানিয়ে আসছিল ব্যবসায়ীরা৷ এজন্য ব্যাংক মালিকদের সাথে কয়েক দফা বৈঠকও করেছে সরকার৷ তাদের দেয়া হয়েছে বিভিন্ন সুবিধা ও আর্থিক ছাড়৷ গত বছর ব্যাংক কোম্পানি আইনে বেশ কিছু পরিবর্তনও আনা হয়েছে৷
পরে ব্যাংক মালিকরা সর্বোচ্চ ৬ শতাংশ সুদে আমানত ও সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ সুদে ঋণ বিতরণের ঘোষণা দিলেও তা কার্যকর হয়নি৷
এবার কি বাস্তবায়ন হবে?
বাংলাদেশ ব্যাংক সুদের হার বেধে দিতে পারে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অর্থনীতিবিদরা৷ এই নির্দেশনা কতটা কার্যকর হবে তা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর এর৷ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরকে তিনি বলেন, ‘‘চাপিয়ে দিয়ে সুদের হার কমবে বলে আমার মনে হয় না৷ সরকারি ব্যাংকগুলো কমালেও বেসরকারি ব্যাংকগুলো কমাতে পারবে বলে মনে হয় না৷''
ব্র্যাক ব্যাংকের এই চেয়ারম্যানের মতে, ‘‘বেসরকারি ব্যাংকগুলোর পরিচালন ব্যয় অনেক বেশি৷ এখন ব্যাংকগুলোকে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির জন্যই অনেক অর্থ ব্যয় করতে হয়৷ এরপর কম সুদে ঋণ নিলে তার আয় অনেক কমে যাবে যাবে৷''
একই কথা বলছেন ব্যাংকররাও৷ বেসরকারি ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ৯ শতাংশ সুদ হারে ঋণ দিলে প্রতিটি ব্যাংকের আয় ১৫০ কোটি টাকার মতো কমে যাবে৷ যার ফলে ব্যাংকগুলোর মুনাফায় নেতিবাচক প্রভাব পড়বে৷ এতে রাজস্ব আদায় ও শেয়ারবাজারেও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে৷
তবে সরকারের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই৷ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে সংগঠনটির সভাপতি, শেখ ফজলে ফাহিম বলেন, ‘‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে এই দাবিটি করে আসছিলাম৷ সরকার বেশ কয়েকবার উদ্যোগও নিয়েছে৷ কিন্তু ব্যাংকগুলো মানেনি৷ এবার একটি কাঠামোর মধ্যে এনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ৯ শতাংশ নির্ধারণ করে দিয়েছে৷ আশা করছি ব্যাংকগুলো এটা বাস্তবায়ন করবে৷ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কড়া নজরদারি থাকবে৷''
তবে সুদহার এভাবে বেধে দেয়ারই বিপক্ষে আহসান এইচ মনসুর৷ তিনি বলেন, ‘‘মুক্তবাজার অর্থনীতিতে সবকিছুই যেখানে বাজারের উপর; সেখানে সুদের হারও বাজারের উপর ছেড়ে দেওয়া উচিৎ৷''
এফএস/কেএম (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)