আশির দশকে শ্রীলঙ্কার শিশুর খামার!
২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭শ্রীলঙ্কা সরকার এই তথ্য স্বীকার করেছে৷ স্বাস্থ্যমন্ত্রী রজিতা সেনারত্নে ডাচ ডকুমেন্টারি সিরিজ জেমব্লাতে এই বিষয়ে মন্তব্য করেছেন৷ এই পর্বটি প্রচার হয়েছে ২০ সেপ্টেম্বর৷ সেনারত্নে জানিয়েছেন, দেশটির সরকার এই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে এবং স্বজনদের মিলন ঘটাতে একটি ডিএনএ ডাটাবেইজ তৈরির কথাও ভাবছে৷
‘‘পরিবারগুলোর মানবাধিকার ক্ষুণ্ণ হয়েছে এই ঘটনায়৷ সরকার এই বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে দেখছে'', ডাচ দৈনিক আলগেমিন ডাগব্লাডকে জানিয়েছেন সেনারত্নে৷
জেমব্লায় প্রচারিত তথ্য অনুযায়ী, এই ঘটনা আশির দশকে এতটাই মারাত্মক আকার ধারণ করেছিল যে, তথাকথিত ‘শিশু খামারে' ইচ্ছেকৃতভাবে পাচারের উদ্দেশ্যে নারীদের গর্ভধারণ করানো হতো৷ এমনকি বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে শিশুদের চুরিও করা হতো৷ একজন মা জেমব্লাকে বলেছেন, জন্মের সময়ই শিশুটি মারা গেছে বলে তাঁকে জানানো হয়েছিল৷ কিন্তু তাঁর এক আত্মীয় কিছুক্ষণ পর এক ডাক্তারকে শিশুটিকে নিয়ে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে যেতে দেখেন৷
অপরাধী চক্র মায়ের অভিনয় করার জন্য কিছু নারীকে ভাড়া করতো৷ ফলে বিদেশ থেকে আসা দম্পতিরা মনে করতেন সত্যিকার মায়ের কাছ থেকেই শিশু দত্তক নিচ্ছেন তাঁরা৷ এসব বিদেশি দম্পতিদের বেশিরভাগই নেদারল্যান্ডস থেকে আসা, কিন্তু যুক্তরাজ্য, সুইডেন এমনকি জার্মানি থেকেও অনেকেই শ্রীলঙ্কা থেকে শিশু দত্তক নিয়েছেন৷ এমন কিছু ভুয়া মা জানিয়েছেন, তাদের এই কাজের জন্য হাসপাতালের কর্মচারীরা টাকা দিতেন৷
জেমব্লার দাবি, শ্রীলঙ্কা থেকে শিশু দত্তক নেয়ার সময় যে অর্থ লেনদেন হতো তারও ভুয়া হিসেব দেয়া হয়েছে অনেক ক্ষেত্রে৷
এ যেন ‘কারাগার'
আশির দশকে এমন অপরাধ ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ে৷ অবশেষে ১৯৮৭ সালে এমন এক কারাগারের মতো পরিবেশে স্থাপিত ‘শিশু খামারে' পুলিশের অভিযানে উদ্ধার হয় ২২ জন নারী ও ২০ শিশু৷ এরপরই ভাটা পড়ে শিশু পাচার ব্যবসায়৷
নিরাপত্তা ও বিচার বিষয়ক ডাচ মন্ত্রী ক্লাস ডিকহফ জানিয়েছেন, ডিএনএ ডাটাবেইজ এবং সংশ্লিষ্ট নানা বিষয়ে শ্রীলঙ্কা সরকারের সাথে কথা বলবেন তিনি৷ ডিকহফ আরও জানান, এই মুহূর্তে ‘‘কীভাবে দত্তক নেয়ার কাজ তদারকি হতো, কার কী ভূমিকা ছিল, এবং কোন সংস্থা ও ব্যক্তি এর দায়িত্বে ছিল, এ সবের তদন্ত চলছে৷''
এলিজাবেথ শুমাখার/এডিকে