অ্যাস্টেরয়েড মাইনিং লাভজনক হতে পারে?
২৬ জানুয়ারি ২০২১তবে তাদের সেই উদ্যোগ অন্যদের পথ দেখিয়েছে৷ সেই সঙ্গে প্রযুক্তির উন্নতির কারণে কয়েক বছরের মধ্যেই স্পেস মাইনিং সম্ভব হতে পারে বলে আশা করছেন বিজ্ঞানীরা৷
২০১২ সালে গুগল প্রতিষ্ঠাতা লেরি পেজ ‘প্ল্যানেটারি রিসোর্সেস'-এ বিনিয়োগ করেন৷ পরের বছর নতুন এক কোম্পানি এই প্রতিযোগিতায় নাম লেখায়৷ আর ২০১৭ সালে নাসা জানায়, তারা ‘সাইকি' অ্যাস্টেরয়েডে যাবে৷
নাসার সাইকি মিশনের প্রধান এলকিন্স ট্যান্টন বলেন, ‘‘গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয় মনে রাখা দরকার, সাইকি একেবারেই একটা সায়েন্স মিশন৷’’
প্রকল্পটা যদিও অ্যাস্টেরয়েড মাইনিংয়ের জন্য নয়, তবে এটা টেকসই ভবিষ্যতের একটা ভিত্তি গড়ে দেবে৷
অদ্ভুত শোনালেও অ্যাস্টেরয়েড মাইনিং শুধু অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক নয়, এটি পৃথিবীতে মাইনিংয়ের চেয়েও টেকসই হতে পারে৷
গবেষক আন্দ্রেয়াস হাইন বলেন, ‘‘এটা দারুণ এক বিষয়৷ এবং আরো দারুণ হলো, অতীতে এটা নিয়ে ভাবা হয়নি৷’’
গবেষক আন্দ্রেয়াস হাইন হিসাব করে দেখেছেন, অ্যাস্টেরয়েড থেকে এক কেজি প্লাটিনাম নিয়ে আসতে রকেটকে বায়ুমন্ডলে দেড়শ কেজি কার্বন ডাই অক্সাইড ছাড়তে হবে৷ আর পৃথিবীতে মাইনিংয়ে লাগবে ৪০ হাজার কেজি৷ মানে অ্যাস্টেরয়েড মাইনিং কয়েকশ গুন কম দূষণ হবে৷ তিনি বলেন, ‘‘কারণ অ্যাস্টেরয়েড মাইনিংয়ে প্লাটিনাম ছাড়া খনন করার মতো আর অন্য কোনো উপকরণ প্রায় নেই বললেই চলে, যেগুলো ঐ গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের কারণ৷’’
মাইনিংয়ের কাজটা মহাকাশে আউটসোর্সিং করা গেলে পৃথিবীতে দূষণ কম হবে৷ কিন্তু একটা অর্থনৈতিক সমস্যা আছে৷
নাসার সাইকি মিশনের প্রধান এলকিন্স ট্যান্টন বলেন, ‘‘সাস্টেনেবিলিটির প্রশ্নে এটা একটা বিশাল জয়৷ কিন্তু অর্থনীতির প্রশ্নে, এটি এখনো লাভজনক নয়৷’’
আর আন্দ্রেয়াস হাইন বলছেন, ‘‘সমস্যা হলো, আপনি যদি পৃথিবীতে যত প্লাটিনাম আছে তার চেয়ে পাঁচগুন বেশি প্লাটিনাম খনন করেন তাহলে দাম পড়ে যাবে৷ ফলে আপনাকে সেগুলো কম দামে বিক্রি করতে হবে এবং এতে লাভ কমে যাবে৷ এসব ভেবে বিনিয়োগকারীরা আকর্ষণ হারিয়ে ফেলেন৷’’
কার্বন কর আর নতুন প্রযুক্তি এই সমীকরণে পরিবর্তন আনতে পারে৷ তারপরও স্পেস মাইনিং লাভজনক হতে আরো কয়েক বছর সময় লাগবে৷ অবশ্য কয়েকজন বিনিয়োগকারী এতদিন অপেক্ষা করতে চান না৷
প্ল্যানেটারি রিসোর্সেস-এর ক্রিস লেউইকি বলেন, ‘‘বিশ্ব এমন কোনো ব্যবসায়িক মডেল সমর্থন করে না যেটাতে একশ মিলিয়ন ডলারের বেশি বিনিয়োগ লাগে এবং সেখান থেকে লাভ আসতে দশ বছরের বেশি সময় লাগে৷''
লেউইকির কোম্পানি অ্যাস্টরয়েড মাইনিংয়ের জন্য পর্যাপ্ত তহবিল তুলতে ব্যর্থ হয়েছে৷
আঠার শতকের ক্যালিফোর্নিয়া গোল্ড রাশের মতো স্পেসে খনন করতে আগ্রহীরা এখনো পৃথিবীর বাইরের সম্পদ আহরণের স্বপ্ন পূরণ করতে পারছেন না৷ লেউইকি বলেন, ‘‘অ্যাস্টেরয়েড মাইনিংয়ের চূড়ান্ত স্বপ্ন আমরা পূরণ করতে পারিনি৷ তবে আমি মনে করি, সেখানে যাওয়ার পথ প্রশস্ত করে আমরা অনেকভাবেই সফল হয়েছি৷’’
আঠার শতকে ক্যালিফোর্নিয়ায় সোনার সন্ধান পাওয়া গেলেও পরিমাণে তা অনেক ছিল না৷ কিন্তু সোনা পাওয়া যাওয়ার খবরে অন্য রাজ্য থেকে সেখানে যাওয়া বাসিন্দারা সোনা খোঁজার চেষ্টায় যে অবকাঠামো গড়ে তুলেছিলেন তা ক্যালিফোর্নিয়ার উন্নয়নে ভূমিকা রেখেছিল৷ আজকের স্পেস মাইনাররা প্রায় সেরকমই করছেন৷ লেউইকি বলেন, ‘‘২০০৯ সালে আমাদের কোম্পানি প্রতিষ্ঠার সময়ে পৃথিবী স্পেস মাইনিংয়ের যতটা কাছে ছিল এখন তার চেয়েও অনেক কাছে আছে৷ এখন আপনি স্পেস মাইনিংয়ে একটা ডিগ্রি পেতে পারেন!’’
নাসার সাইকি মিশনের প্রধান এলকিন্স ট্যান্টন বলেন, ‘‘ব্যবসার আশা এখনো শেষ হয়ে যায়নি৷ এখনও আমরা সেখানে পৌঁছতে পারি, একটা উপায় বের করতে পারি৷ আমার মনে হয়, যে-কোনাভাবেই হোক না কেন, এটা মানুষের এমন এক অপরিহার্য ভবিষ্যৎ, যার থেকে আমরা দূরে থাকতে পারবনা৷ ইতিহাসে তাকালে আমরা দেখতে পাই, মানুষ আসলে এক্সপ্লোরার৷’’
নতুন নতুন উদ্ভাবন স্পেস মাইনিংকে আর্থিকভাবে লাভজনক করতে পারে৷ মাত্র কয়েকদশক আগেও আপনি এখন যে ডিভাইসে ভিডিওটি দেখছেন সেটি অসম্ভব মনে হয়েছিল৷ বর্তমানে আমরা স্যাটেলাইট দিয়ে বিশ্বের সব জায়গায় ইন্টারনেট নিয়ে যেতে পেরেছি৷ ক্রিস লেউকি বলেন, ‘‘১০,১৫ বা ২০ বছরে অনেক কিছু হতে পারে৷’’
হয়ত কোনো একদিন মোমবাতি দিয়ে ঘর আলোকিত করার মতো মাইনিংটাও পৃথিবী থেকে উধাও হয়ে যাবে৷
ক্রিস্টিয়ান কাউরলা/জেডএইচ