মৎস থেরাপি
৭ জুন ২০১৩বাথিনি মৃগশিরা নামে গৌড় পরিবারের ১৬০ বছরের প্রাচীন চিকিৎসা হাঁপানি রোগে অব্যর্থ, এমনটাই দাবি ঐ পরিবারের৷ চিকিৎসার নাম বাথিনি মৎস থেরাপি৷ এতে দুই থেকে আড়াই ইঞ্চি মাপের ছোট্ট একটা মৌরালা বা সার্ডিন জাতীয় মাছ ঔষধি গুণযুক্ত বিশেষ গাছগাছড়া দিয়ে বানানো হলদেটে রঙের পেস্ট বা লেই দিয়ে মুড়ে রোগীকে গিলিয়ে মুখ বন্ধ করে দেয়া হয়৷ মাছের উপরিভাগ যেহেতু পিচ্ছিল থাকে তাই গিলতে অসুবিধা হয়না৷ গেলানোর কাজটা করেন পরিবারের কিছু লোক এবং কিছু ভলেন্টিয়ার৷
কীভাবে এই থেরাপি কাজ করে? ঐ পরিবারের মতে, বিশেষ ভেষজ ওষুধ মাখানো ঐ জ্যান্ত মাছ গলা দিয়ে নামার সময় পাখনা এবং পুচ্ছ নাড়াতে থাকে, তাতে গলার ভেতরের জমা শ্লেষ পরিষ্কার হয়ে যায়৷ হাঁপানির উপশম হয়৷ ওষুধ প্রয়োগের তিন ঘন্টা আগে এবং তিন ঘন্টা পর পর্যন্ত পেট একেবারে খালি রাখতে হয়৷ জল পর্যন্ত খাওয়া চলবে না৷ তারপর ৪৫ দিন নির্দিষ্ট আহার গ্রহণ করতে হবে৷ এই ভেষজ ওষুধের ফর্মুলা ঐ পরিবারের কয়েকজন সদস্য ছাড়া বাইরের আর কেউ আজ পর্যন্ত জানে না বা জানানো হয় না – পাছে বাণিজ্যিকভাবে অন্য কেউ এই থেরাপি শুরু করে গৌড় পরিবারের নামে৷
পরিবারের মতে, ঐ ভেষজ ওষুধের ফর্মুলা গোপন রাখা হয়৷ জনৈক সাধু পরিবারের বৃদ্ধ প্রপিতামহকে এর ফর্মুলা দিয়ে বলেছিলেন, অন্য কাউকে যেন তা জানানো না হয়৷ পরিবারের বাইরে অন্য কেউ জানলে ওষুধের গুণাগুণ নষ্ট হয়ে যাবে৷ চিকিৎসায় কাজ হবে না৷ ভেষজ ফর্মুলা গৌড় পরিবারের এক প্রজন্ম থেকে বাহিত হয়ে চলেছে পরের প্রজন্মে৷ এই মৎস থেরাপি দেয়া হয় বিনা পয়সায়৷ শুধু অন্ধ্রপ্রদেশের হায়দ্রাবাদ শহর ছাড়া অন্য কোথাও এই চিকিৎসা দেয়া বারণ৷ দেবার নির্দিষ্ট দিন ধার্য করা হয় জ্যোতিষ শাস্ত্র মতে৷ সেটা পড়ে বর্ষা আসার ঠিক আগে, জুন মাস নাগাদ৷ গৌড় পরিবারের দাবি, কোন হাঁপানি রোগী যদি মৎস থেরাপির নিয়মবিধি ঠিকমতো পালন করেন, তাহলে তাঁর হাঁপানি ১০০ শতাংশ নিরাময়ের গ্যারান্টি দেয়া হয়৷
ভেষজ ওষুধের ফর্মুলা গোপন রাখার রহস্য নিয়ে কয়েকটি যুক্তিবাদী সংগঠন, বিজ্ঞানী এবং মেডিক্যাল কাউন্সিল আদালতে যায়৷ তাদের অভিযোগ, ভেষজ ওষুধের নামে যা দেয়া হয়, তার মধ্যে থাকতে পারে স্টেরয়েড, ভারি ধাতু কণা এবং পারদজাতীয় উপাদান৷ কাজেই তা পরীক্ষা করে দেখা দরকার৷ আদালতের নির্দেশে ভেষজ উপাদান পরীক্ষা করা হয় এবং তাতে ক্ষতিকারক কিছু পাওয়া যায়নি৷ অন্ধ্রপ্রদেশ হাইকোর্ট রায় দেন, ঐ ভেষজে ক্ষতিকারক উপাদান যেমন পাওয়া যায়নি, তেমনি ঔষধিগুণও পাওয়া যায়নি৷ লক্ষ লক্ষ মানুষ তাঁদের বিশ্বাসবশত যখন এই চিকিৎসা নিচ্ছেন, তখন তাঁদের সেই বিশ্বাসে আদালত হস্তক্ষেপ করতে পারে না৷
দেশবিদেশের লাখ লাখ লোক প্রতিবছর এই থেরাপি নিতে আসেন, তাতে কারোর খারাপ কিছু হয়েছে এমন খবর নেই৷ চিকিৎসক মহলের একাংশের মতে, কোন চিকিৎসা পদ্ধতিই ১০০ শতাংশ কার্যকর হয়না৷ মৎস থেরাপিতে অনেকে ভালো যে হয়েছেন, সেটাও মিথ্যা নয়৷