কানই শরীরের ভারসাম্য রক্ষা করে
১২ এপ্রিল ২০১৩
মাথা ঘোরাটা মোটেই স্বস্তিকর নয়,আর একটু বেশি সময় ধরে মাথা ঘুরতে থাকলে তো কথাই নেই৷ দেহের ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য প্রতিটি ইন্দ্রিয় প্রভাব বিস্তার করে থাকে৷ এসব ইন্দ্রিয় পরস্পরবিরোধী তথ্য মগজে পাঠালেই মাথা ঘুরে যায়৷
রোলার কোস্টারে উঠে কেউ কেউ হয়তো খুব মজা পান, কিন্তু অনেকের তো তা দেখলেই মাথায় চক্কর দিয়ে ওঠে৷ বিশেষ করে বয়স্করা এই ধরণের কাজে তেমন উৎসাহ পান না৷ কেননা ২০ বছর বয়স থেকেই শরীরের ভারসাম্যের অনুভূতিটা ধীরে ধীরে কমে যেতে থাকে৷
বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মধ্যে বোঝাপড়া ঠিক থাকলে তবেই দেহের ভারসাম্য বজায় থাকে৷ তবে এ ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা পালন করে কান, চোখ এবং বিভিন্ন গ্রন্থি ও পেশির সেন্সর৷ জার্মান বিজ্ঞানী অধ্যাপক মার্টিন ভেস্টহোফেন বলেন, এসব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ যখনই মস্তিষ্কে পরস্পর বিরোধী তথ্য পাঠায়, তখনই মাথা ঘুরে যায়৷ তাঁর মতে, ‘‘তিনটি ইন্দ্রিয়ের মধ্যে কোনো একটি অতিরিক্ত চাপে পড়লে, কিংবা উত্তেজিত হয়ে পড়লে এটা ঘটতে পারে৷ যেমন অনেকের মতো আপনারও হয়তো চলন্ত ট্রেনে বসে চোখে ভুল দেখার অভিজ্ঞতা হয়েছে৷ জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে মনে হয়েছে, কিছু যেন নড়ছে৷ এক মুহূর্তে আপনার মনে হয়তো খটকা জেগেছে – নিজের ট্রেনটি চলছে নাকি পাশের ট্রেনটি? তবে পাশের ট্রেনটি যখন আপনার ট্রেনের পাশ দিয়ে ছুটে বেরিয়ে যায়, তখন একেবারে শেষের বগিটি দেখে কেটে যায় সেই ভুল৷ সেই সময়ই আপনি বুঝতে পারেন আসলে কোন ট্রেনটি চলছে৷''
বিশেষজ্ঞরা বিভিন্ন ধরণের মাথা ঘোরার কথা বলেন৷ যেমন একদিকে রয়েছে পাক খাওয়া ঘোরা অন্যদিকে রয়েছে দোল খাওয়ার মত ঘোরা৷ যে অবস্থায় মনে হয় যেন সবকিছু টলতে থাকে৷ আরেকটি হলো উচ্চতায় মাথা ঘোরা৷ যেমন লিফটে করে উপরে ওঠার সময় মাথা ঘোরা৷ মানুষ এক জায়গায় অনেকক্ষণ ধরে ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎ থেমে গেলে মাথায় চক্কর দিয়ে উঠতে পারে৷ তখন কানের ভিতরে ভারসাম্য বোধটা ওলোটপালোট হয়ে যায়৷
অন্তঃকর্ণের পেছনের অংশ ‘ভেসটিবিউল' মাথার মধ্যে ভারসাম্য বোধকে নিয়ন্ত্রণ করে৷ ধনুকের মতো দেখতে তিনটি অংশ আছে, যাতে তরল ভরা৷ তার মধ্যে আছে ছোট্ট চুল বা রোমের মতো কোষ৷ নড়াচড়া করলেই সেই তরল হেলে পড়ে ও রোমগুলিকেও টলিয়ে দেয়৷ ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎ করে থেমে গেলে, সেই তরল পদার্থ চলকে ওঠে এবং তখন মাথা ঘুরে ওঠে৷
অনেকে এই মাথাঘোরার অবস্থাটা সহ্য করতে পারেন, অনেকে আবার আতঙ্কিত হয়ে যান৷ উঁচুতে উঠে মাথা ঘুরলে পেছনে একটু হেলান দিন এবং দূরের কোনো বিন্দুতে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকুন৷ এরপর দেখুন, পায়ের নীচে শক্ত মাটি পাওয়া যায় কিনা৷
এসবি/জেডএইচ