সিবিআই, ইডি-র ধাক্কায় তৃণমূল পিছু হঠছে
২৬ আগস্ট ২০২২সিবিআই, ইডির জালে একের পর এক নেতা জড়িয়ে পড়ায় তৃণমূল এখন কিছুটা পিছু হঠেছে। বৃহস্পতিবার দল ও সরকারের তরফে এমন একাধিক সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, যা দেখে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তৃণমূল চাপের মুখে এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে।
প্রথম সিদ্ধান্ত, অনুব্রত মন্ডলের কাছ থেকে পূর্ব বর্ধমানের আউষগ্রাম, কেতুগ্রাম ও মঙ্গলকোট বিধানসভা দেখভালের দায়িত্ব নিয়ে নেয়া। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্যামাক স্ট্রিটের অফিসে পূর্ব বর্ধমানের জেলা নেতাদের নিয়ে বৈঠক হয়েছিল। সেখানেই এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দেয়া হয়। জেলা নেতৃত্বকে বলে দেয়া হয়েছে, তারাই তিন বিধানসভার দেখভাল করবেন।
এমনকি, বীরভূমে তারাপীঠে কৌশিকী অমাবস্যায় প্রতি বছর অনুব্রতের ছবি দিয়ে পোস্টার, ব্যানার লাগানো হতো। এবার পোস্টার, ব্যানারে কেবল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি আছে। অনুব্রতের নেই। এভাবে নিজের জেলাতেও আপাতত অনুব্রতের ছবি ছেঁটে ফেলা হয়েছে, যা কিছুদিন আগে পর্যন্ত অভাবনীয় ছিল।
এর পাশাপাশি সিবিআই প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সাবেক সভাপতি ও তৃণমূল বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে লুক আউট নোটিস জারি করেছে। মানিক যাতে রাজ্য ছেড়ে বিদেশে চলে না যান, সেজন্যই এই নোটিস। এরপরই মানিকের সরকারি নিরাপত্তা প্রত্যাহার করা হয়েছে। এতদিন পর্যন্ত পুলিশ তাকে নিরাপত্তা দিত। তারা আর নিরাপত্তা দেবে না বলে জানিয়েছে। মানিক অবশ্য বলেছেন, তিনি তদন্তে সহযোগিতা করছেন। যখনই ডাকা হচ্ছে তিনি হাজিরা দিচ্ছেন।
প্রবীণ সাংবাদিক আশিস গুপ্ত ডিডাব্লিউকে বলেছেন, কিছুদিন আগেও তৃণমূল নেত্রী অভিযোগ করতেন, সিবিআই, ইডি-কে দিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার বিরোধী দলের নেতাদের সমস্যায় ফেলছে। এটা রাজনৈতিক শত্রুতা ছাড়া কিছু নয়। কিন্তু এখন সিবিআই, ইডি তৃণমূলের দলের নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার পর দেখা যাচ্ছে দল কতটা চাপে পড়েছে। এই সব সিদ্ধান্ত সেই চাপেরই ফল।
সিবিআই তল্লাশি
এসএসসির সাবেক চেয়ারম্যান এবং বর্তমানে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুবীরেশ ভট্টাচার্যের কলকাতার বাড়িতে আট ঘণ্টা ধরে তল্লাশি চালালো সিবিআই। বৃহস্পতিবার বিকাল পাঁচটায় সিবিআই কর্মকর্তারা সুবীরেশের বাঁশদ্রোণীর ফ্ল্যাটে ঢোকেন। তারা সেখান থেকে বের হন রাত একটায়। এক সিবিআই অফিসার ওই রাতেই সাংবাদিকদের বলেন, 'বহুত কুছ মিলা', অর্থাৎ, অনেক কিছু পাওয়া গেছে। তবে কী পাওয়া গেছে, সেবিষয়ে তারা কিছুই বলেননি।
২০১৪ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত সুবীরেশ এসএসসির চেয়ারম্যান ছিলেন। সেসময় নিয়ম ভেঙে পরীক্ষায় কম নম্বর পাওয়া চাকুরীপ্রার্থীদের শিক্ষকতার চাকরি দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। হাইকোর্টে সাবেক বিচারপতি বাগ যে রিপোর্ট দিয়েছেন, তাতে ৩৮১টি ভুয়া নিয়োগের উল্লেখ আছে বলে টিভি৯ বাংলা জানাচ্ছে। সুবীরেশ অবশ্য দাবি করেছেন, তিনি যতদিন চেয়ারম্যান ছিলেন, ততদিন কোনো অবৈধ কাজ হয়নি।
নিয়োগে দুর্নীতির আরো অভিযোগ
পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে নিয়োগের ক্ষেত্রে দুর্নীতির অভিযোগ সামনে আসছে। এর আগে দমকল বিভাগে এক হাজার ৫০০ পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল। কলকাতা হাইকোর্ট ওই পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে স্থগিতাদেশ দেয়।
প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ, টেট পরীক্ষার ক্ষেত্রে দুর্নীতি নিয়ে তদন্ত ও মামলা চলছে, সরকারি কলেজে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রেও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। ২০২৮ সালে এই দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তখন পার্থ চট্টোপাধ্যায় উচ্চশিক্ষার দায়িত্বে ছিলেন।
এছাড়া পুলিশের কনস্টেবল ও হোমগার্ড নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। নার্সি নিয়োগের ক্ষেত্রেও একই ধরনের অভিযোগ উঠেছে। পুরসভার বিভিন্ন পদে নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগও একইরকমভাবে উঠেছে। কিছুদিন আগেই পাঁশকুড়া পুরসভায় নিয়োগে দুর্নীতি নিয়ে লিফলেট পর্যন্ত বিলি করা হয়েছে। অভিযোগ, রাজ্য সরকারের প্রায় ৫০টির মতো বিভাগ নিয়োগ-দুর্নীতির শিকার।
জিএইচ/এসজি (পিটিআই, টিভি৯, নিউজ১৮)