জার্মানিতে বর্জ্য পানি পুনর্ব্যবহারের অভিনব উদ্যোগ
১০ অক্টোবর ২০২৪জার্মানির এক দৈনন্দিন বিষয় নিয়ে আপত্তির কারণ থাকতে পারে কি? একেবারে নির্মল পানি কাপড় কাচা ও টয়লেটে ফ্লাশের জন্য ব্যবহার করা হয়৷ এয়ারভিন নোল্ডে নামের বার্লিনের এক ইঞ্জিনিয়ারের মতে, এটা একটা অপ্রয়োজনীয় অপচয়৷
জার্মানিতে পানি ব্যবহার আরো কার্যকর করে তোলার সম্ভাবনা দেখে এয়ারভিন বাসভবনগুলিতে বর্জ্য পানি পরিশোধনের এক প্রণালী তৈরি করেছেন৷ এ ক্ষেত্রে ছাত্রছাত্রীদের এক ডর্মিটারিতে সেটা করা হয়েছে৷ তিনি জানান, ‘‘এ ক্ষেত্রে আমরা শুধু গ্রে ওয়াটার, অর্থাৎ শাওয়ার ও বেসিনের পানি রিসাইকেল করি৷ এই ভবনে সেটাই যথেষ্ট৷''
প্রথম ধাপে শাওয়ার ও বেসিনগুলি থেকে পানি আলাদা করে সংগ্রহ করা হয় এবং কয়েকটি ট্যাংকে বিভিন্ন পর্যায়ে সেই পানি পরিশোধন করা হয়৷ সেই প্রক্রিয়ায় কোনো রকম রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়না৷ তার বদলে ছোট ফোম কিউব কাজে লাগানো হয়, যার মধ্যে থাকা অণুজীব অযাচিত ব্যাকটিরিয়া গ্রাস করে নেয়৷ সবার শেষে অতি বেগুনি আলোর মাধ্যমে বাকি প্যাথোজেন ধ্বংস করা হয়৷
২০২৩ সালের জানুয়ারি মাস থেকে বার্লিনের এই ডর্মিটারিতে নোল্ডের পানি-রিসাইক্লিং প্রণালী চালু আছে৷ ডর্মিটারির বেশিরভাগ ছাত্র-ছাত্রী এমনকি সেই রিসাইক্লিং প্রণালী সম্পর্কে সচেতনই নন৷ যেমন ইউক্রেন থেকে আসা মারিয়া৷ এই হাইটেক প্রণালী সত্ত্বেও তাঁকে মাসে ৪০০ ইউরো ভাড়া দিতে হয় তাকে, যা বার্লিনের বেশিরভাগ ছাত্রাবাসের তুলনায় অনেক কম৷
দীর্ঘমেয়াদী ভিত্তিতে পানির রিসাইক্লিং অবশ্যই অর্থ সাশ্রয় করে৷ বিশেষ করে নতুন ভবনে সেই সুফল বেশ স্পষ্ট৷ এয়ারভিন নোল্ডের মতো মানুষ নিজের উদ্ভাবনে প্রতিনিয়ত উন্নতি ঘটিয়ে চলেছেন৷ ২৫ বছর আগেই তিনি বর্জ্য পানি পুনর্ব্যবহারের উদ্যোগ শুরু করেছিলেন৷ এখন তিনি উত্তাপ ধরে রেখে আবার সেটা কাজে লাগাচ্ছেন৷ অর্থাৎ বেসিন ও শাওয়ারের গরম পানির থার্মাল এনার্জি কাজে লাগিয়ে রিসাইকেল করা পানিও উত্তপ্ত করা সম্ভব হচ্ছে৷ এয়ারভিন নোল্ডে বলেন, ‘‘এই রিসাইক্লিং ইউনিট আমাদের ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ পানীয় জল এবং বর্জ্য পানি সাশ্রয় করতে সাহায্যে করে৷ হাইজিন বা পরিচ্ছনতার ক্ষেত্রে একেবারেই কোনো ঝুঁকি নেই৷ কোনো অসুবিধাও নেই৷ আমরা প্রমাণ করতে পেরেছি, যে এভাবে শুধু পানি নয়, বিদ্যুতও সাশ্রয় হয়৷ এবং গোটা প্রণালী প্রচলিত ব্যবস্থার তুলনায় অনেক বেশি পরিবেশবান্ধব৷''
পৌর আবাসন সংঘ এই দুটি ডর্মিটারি তৈরি করেছে৷ বার্লিন-ব্রান্ডেনবুর্গ অঞ্চলে সেখানেই এই প্রথম বর্জ্য পানি রিসাইক্লিং করা হচ্ছে৷ তবে সেই লক্ষ্যে বাড়তি অর্থও বিনিয়োগ করতে হয়েছে৷ বর্গ মিটার প্রতি ২০ ইউরো বাড়তি ব্যয় হয়েছে৷ কিন্তু সেই বিনিয়োগ অবশ্যই সার্থক৷ ভবিষ্যতে আরো এমন নির্মাণ প্রকল্পের পরিকল্পনা রয়েছে৷ বার্লিনোভো সংস্থার আন্দ্রে হাসমান বলেন, ‘‘সেটা অবশ্যই প্রত্যাশা অনুযায়ী কাজ করে৷ ১২ বছরেই খরচ উঠে আসে৷ সিস্টেমে ফিরিয়ে দেওয়ার কারণে পানীয় জল ও জ্বালানির সাশ্রয় হয়৷ মোটকথা এটা একটা ভালো সার্বিক ব্যবস্থা এবং বাসভবনের জন্য দারুণ পথ৷''
যে সব দেশে পানির অভাব ও বিদ্যুৎ সরবরাহে সমস্যা রয়েছে, সেখানেও এই প্রণালী কাজে লাগানো যেতে পারে৷ এর জন্য খুব কম জ্বালানির প্রয়োজন হয়৷ পানির ঘন মিটার প্রতি মাত্র দেড় কিলোওয়াট আওয়ার৷ কোনো বাইসাইকেল ল্যাম্প আলোকিত করতে ২৪ ঘণ্টায় যতটা শক্তি লাগে, এ ক্ষেত্রেও ততটাই ব্যবহার করা হয়৷
এয়ারভিন নোল্ডে বলেনস ‘‘যেখানে কার্যকর বর্জ্য পানি পরিশোধন প্রণালী নেই, সেখানে বিকেন্দ্রীভূত পানি রিসাইক্লিং অবশ্যই কার্যকর করা উচিত৷ বিদ্যুৎ সরবরাহ নির্ভরযোগ্য না হলে ছাদের উপর সৌর প্যানেলের প্রয়োজন৷ একটা ছোট ব্যাটারি থাকলে এই প্রণালী রাতেও কাজ করে৷ ঘন মিটার প্রতি দেড় কিলোওয়াট আওয়ার বেশি নয়, অপেক্ষাকৃত সহজেই কাজে লাগানো যায়৷''
ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে এয়ারভিন তাঁর রিসাইকেল করা পানির মান নিয়ে গর্বিত৷ মাইক্রোবায়োলজিকাল পরীক্ষা চালিয়ে দেখা গেছে, সেই পানির মান প্রায় পানীয় জলের মানের কাছাকাছি৷ ফলে সেটি পার্ক ও বাগানে ব্যবহারের উপযুক্ত৷ শুধু টয়লেটের ফ্লাশের জন্য এর ব্যবহারের অর্থই হয় না৷
ইয়ুলিয়া মিল্কে/এসবি