বর্জ্য পানি থেকে বোঝা যায় করোনা সংক্রমণের হার
২২ জুলাই ২০২২জার্মানির পশ্চিমের শহর সারব্রুকেন থেকে বর্জ্য পানি সারল্যান্ডের সবচেয়ে বড় শোধনাগারে আসে৷ শুকনা দিনে ২৫ হাজার কিউবিক মিটার বর্জ্য পানি পাওয়া যায়৷ এই পানি দিয়ে এক লাখ ৩০ হাজারের বেশি বাথটাব পূর্ণ করা যাবে৷ বৃষ্টির দিনে বর্জ্য পানির পরিমান তিনগুণ বেড়ে যায়৷
টিনা ফ্যলারটুন বর্জ্য পানি পরীক্ষা করেন৷ গত কিছুদিন ধরে তিনি নর্দমার পানির মধ্যে করোনা ভাইরাসের পরিমান বিশ্লেষণ করছেন৷ তিনি মনে করেন, এভাবে কোভিড টেস্টের চেয়েও নিখুঁতভাবে করোনা সংক্রমণের হার বাড়ছে কিনা যাচাই করা সম্ভব৷
সারল্যান্ড ওয়েস্ট অ্যান্ড ওয়েস্টম্যানেজমেন্ট গ্রুপের এই ইঞ্জিনিয়ার বলেন, ‘‘বর্জ্য পানি পরীক্ষার সুবিধা হচ্ছে, এভাবে করোনা সংক্রমণের সব ঘটনা বোঝা যায়, কেননা সবারই টয়লেটে যেতে হয়৷ এবং সেখানে আমরা যা ত্যাগ করি, তার সবই বর্জ্য পানি শোধনাগারে পৌঁছায়৷ এখানকার ক্যাচমেন্ট এলাকায় মলমূত্রমিশ্রিত পানি পরীক্ষা করে তাতে করোনা ভাইরাসের হার বোঝা যায়৷ এভাবে আমরা এমন মানুষের তথ্যও জানতে পারি, যারা হয়ত করোনা পরীক্ষা করাননি বা সংক্রমণের শিকার হওয়ার বিষয়টি টেরও পাননি৷’’
শোধনাগারের বর্জ্য পানিতে ক্ষতিকর উপাদান আছে কিনা তা এমনিতেই পরীক্ষা করা হয়৷ নাইট্রেটকনসেনট্রেশন এবং পিএইচ ভ্যালু যাচাই করা হয়৷ একটি অটোস্যাম্পলার প্রতি দুঘণ্টা পরপর বর্জ্য পানির নমুনা সংরক্ষণ করে৷
ডার্মস্টাড বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যুসানা লাক্নার দুই বছর আগে আবিষ্কার করেন যে, একটি অঞ্চলে করোনা ভাইরাস কতটা ছড়িয়েছে এবং কত দ্রুত ছড়াচ্ছে তা সেখানকার বর্জ্য পানি পরীক্ষা করে জানা সম্ভব৷
তিনি এবং তার দল তখন করোনা ভাইরাসের বিষয়ে আগাম সতর্কতা জারির একটি উপায় খুঁজছিলেন৷ বর্জ্য পানি সেই উপায়৷ তার এই উপায়ে একটি এলাকায় ভাইরাসের কত ধরনের সংস্করণ ছড়াচ্ছে সেটাও বোঝা সম্ভব৷
প্রফেসর স্যুসানা লাক্নার বলেন, ‘‘শোধনাগারের ক্যাচমেন্ট এলাকায় সংক্রমণের হার এই তথ্য দিয়ে বোঝা সম্ভব৷ আর এভাবে আরো কোভিড টেস্ট করা দরকার কিনা কিংবা কোভিডসংক্রান্ত বিধিনিষেধ শিথিল করা উচিত কিনা তা-ও নির্ধারণ করা যায়৷’’
নেদারল্যান্ডস, স্পেন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশ দ্রুত এই পদ্ধতিটি গ্রহণ করেছে৷ এটা লাখ লাখ মানুষের কোভিড টেস্টের তুলনায় বেশ সস্তা এক উপায়৷
বর্তমানে ২০টি জার্মান পৌরসভা করোনা ভাইরাস পরীক্ষার পাইলট প্রকল্পে অংশ নিচ্ছে৷ আরো অনেকে এতে যোগ দেয়ার আবেদন করেছে৷
এবং স্যারব্রুকেনের টিনা ফ্যলারটুন ইতোমধ্যে সাফল্য দেখতে পাচ্ছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘করোনা ভাইরাসে আক্রান্তরা লক্ষণ টের পাওয়ার কয়েকদিন আগে থেকেই তাদের মলের সাথে ভাইরাস বের হতে শুরু করে৷ ফলে বর্জ্য পানি পরীক্ষা করে এই ধারা আগে থেকেই শনাক্ত করা সম্ভব৷ তখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পাঁচ থেকে ১০দিন বাড়তি সময় পাওয়া যায়৷’’
করোনা মহামারি শেষ হওয়ার পরও এই পন্থা কাজে লাগবে বলে মনে করেন টিনা ফ্যলারটুন৷ তিনি বলেন, ‘‘অন্যান্য প্যাথোজিন শনাক্তেও এই পন্থা ব্যবহার করা যাবে৷ যেমন ইনফ্লুয়েঞ্জা এবং পোলিও পর্যবেক্ষণেও এই পন্থা কার্যকর হবে৷ এগুলো এখনো শেষ হয়ে যায়নি৷ আর এসবের জন্য পন্থাটি বাস্তবে কীভাবে কাজে লাগবে, সেটা এখান থেকে শেখা যায়৷’’
প্রতিবেদন: ড্যান হির্শফেল্ড/এআই