৭০০ খাসিয়ার বাস্তু হারানোর শঙ্কা
সিলেটের মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলের নাহার পুঞ্জিবাসী খাসিয়াদের উচ্ছেদের নোটিশ জারি করেছে জেলা প্রশাসন৷ এরপর থেকে সেখানকার মানুষ উচ্ছেদ আতংকে আছেন৷ তাঁদের আতংকে বসবাসের কিছু ছবি তুলে এনেছেন খোকন সিং৷
আতঙ্কে ৭০০ মানুষ
উচ্ছেদ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার ভারতীয় সীমান্তবর্তী আদিবাসী গ্রাম নাহার-১ পান পুঞ্জির ৭০০ মানুষকে অন্যত্র চলে যেতে বলা হয়েছে৷ বাড়িঘর ছেড়ে যাওয়ার নোটিশ পাওয়া মানুষদের মধ্যে নারী, শিশু ও বৃদ্ধই বেশি৷
জমি খালি করার নির্দেশ
১২ জুনের মধ্যে নাহার পুঞ্জির ২৫০ একর জমির মধ্যে ১৫০ একর জমি খালি করার নির্দেশ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ৷ চলতি বছর ৩০মে মৌলভীবাজার জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) নাহার পুঞ্জির খাসিয়াদের বসতভিটা ও ভোগদখলীয় জায়গাকে খাসজমি হিসেবে চিহ্নিত করে উচ্ছেদ নোটিশ জারি করে৷ নোটিশে বলা হয়, খাসিয়ারা অবৈধভাবে ঐ জমি দখল করে রেখেছে৷
নাহার পুঞ্জিবাসীর দাবি
গ্রাম-প্রধান দিবারমিন পোতাম বলেছেন, নাহার পুঞ্জির মানুষ সবসময়ই খাজনা পরিশোধ করে আসছেন৷ চা বাগানের মালিকদের এ ঘটনার জন্য দায়ী করেছেন তিনি৷
প্রিয়জনের পাশে
দেশের বিভিন্ন স্থানে থাকা স্বজনরা এ নোটিশের কথা শুনে নাহার পুঞ্জিতে ছুটে এসেছেন৷ তারা বলছেন, তাদের পূর্ব পুরুষ এই মাটিতে শুয়ে আছেন৷ তাই এখানেই তারা জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত থাকতে চান৷
পান জুম করে জীবন ধারণ
শ্রীমঙ্গল উপজেলা সদর থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার অদূরে ভারতীয় সীমান্তবর্তী নাহার-১ খাসিয়া পান পুঞ্জি৷ এখানেই ঐ ৭০০ খাসিয়া পান চাষি পরিবারের বাস৷ তাদের প্রধান জীবিকা পান জুম৷ কয়েক প্রজম্ম ধরে নাহার পুঞ্জিতে খাসিয়ারা পান জুম করে জীবন ধারণ করছেন৷
‘এ দেশ আমাদেরও...’
খাসিয়ারা বলছেন, ‘‘বাংলাদেশ কেবল বাঙালিদের নয়, আমাদেরও মাতৃভূমি৷ তাই এখানে থাকার অধিকার আমাদেরও আছে৷’’
বাগান কর্তৃপক্ষের বক্তব্য
নাহার চা বাগান কর্তৃপক্ষ বলছে, চা বাগানের সম্প্রসারণ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে খাসিয়াদের আওতায় থাকা জমিগুলোতে পানের বদলে চা চাষ করে খাসিয়াদের চা বাগানে শ্রমিক হিসেবে পুনর্বাসন করার প্রচেষ্টা চলছে৷
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের প্রতি আবেদন
আদিবাসী ফেরাম, বাংলাদেশ পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনসহ বিভিন্ন সংগঠন নাহার পুঞ্জি রক্ষার বিষয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের প্রতি আবেদন জানিয়েছে৷
আদিবাসী ফোরামের আহ্বান
বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম জেলা প্রশাসন কর্তৃক নাহার পুঞ্জিকে জারি করা এই উচ্ছেদ নোটিশকে ‘অমানবিক’ বলে আখ্যায়িত করেছে৷ পাশাপাশি কর্তৃপক্ষের প্রতি অবিলম্বে এই নোটিশ প্রত্যাহার করার আহ্বানও জানিয়েছে তাঁরা৷