৫৭ ধারার নতুন কোপ, ছাগলের মৃত্যুতে হাজতবাস
২ আগস্ট ২০১৭২৯ জুলাই ডুমুরিয়ায় এফসিডিআই প্রকল্পের আওতায় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর কিছু পরিবারের মধ্যে হাঁস, মুরগি ও ছাগল বিতরণ করে৷ ঐ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ৷ রাতেই বিতরণ করা একটি ছাগল মারা যায়৷ এরপর স্থানীয় দৈনিক প্রবাহের ডুমুরিয়া প্রতিনিধি আব্দুল লতিফ মোড়ল ‘প্রতিমন্ত্রীর সকালে বিতরণ করা ছাগলের রাতে মৃত্যু’ শিরোনামে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন৷
প্রতিমন্ত্রী বা তার দলের কেউ এতে ক্ষোভ প্রকাশ না করলেও ক্ষুব্ধ হন আরেক সাংবাদিক৷ স্পন্দন পত্রিকার ডুমুরিয়া প্রতিনিধি সুব্রত ফৌজদার তথ্য প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় মামলা করেন ৩১ জুলাই৷ মঙ্গলবার এই মামলায় লতিফ মোড়লকে কারাগারে পাঠানো হয়৷ তবে বুধবার তিনি জামিন পান৷
মামলার বাদি সুব্রত ফৌজদার ডয়চে ভেলের কাছে অভিযোগ করেন, ‘‘ছাগল মরে গেছে এটা কোনো বিষয় নয়৷ বিষয় হলো ফেসবুক স্ট্যাটাসে মন্ত্রীর ছবি দিয়েছে৷ পরে ব্রেকিং নিউজও দেয়৷ সেখানে মৃত ছাগল, ছাগলের মালিকের ছবি দেয়া যেত৷ তা না করে মন্ত্রীর ছবি দিয়ে তাকে হেয় করা হয়েছে৷ যা আমাকে ক্ষুব্ধ করেছে৷ কারণ মন্ত্রী এলাকার উন্নয়নে অনেক কাজ করছেন৷ তা তাদের চোখে পড়ে না৷ তারা সব কিছুইতেই নেগেটিভ দেখে৷’’
তবে সাংবাদিক হয়ে সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা করায় পরে তার খারাপ লেগেছে বলেও জানান সুব্রত৷
তাঁর দাবি, ‘‘আমার সাথে ওই সাংবাদিকের ব্যক্তিগত কেনো শত্রুতা নাই৷ মন্ত্রীর অপমান হয়েছে বলেই মামলা করেছি৷ মামলার আগে মন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে৷ তিনি বলেছেন, তোমরা যা ভালো মনে কর কর৷ তিনি আমাকে সরাসরি মামলা করতে বলেননি৷’’
তবে এই ফেসবুক স্ট্যাটাস বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে জানালেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ৷ তাঁর সাথে কথা বলেই মামলা হয়েছে, এমন তথ্যও ‘মিথ্যা’ বলে উড়িয়ে দিচ্ছেন তিনি৷
ডয়চে ভেলেকে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমি ডুমুরিয়ায় ছাগল ও হাঁস-মুরগি বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলাম৷ পুরো সময় ছিলাম না, টোকেন হিসেবে একটি ছাগল বিতরণও করেছি৷ তবে যে ছাগলটি বিতরণ করেছি সেই ছাগলটি মরে নাই৷ অন্য একটি ছাগল মরেছে৷’’
ফেসবুক স্ট্যাটাসের কারণে তাঁর মানহানি হয়েছে কিনা, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘আমি স্ট্যাটাসটি দেখিনি৷ খবরটিও দেখিনি৷ তাই আমার মানহানি হয়েছে কি হয় নাই তা বলতে পারবনা৷ যে ক্ষুব্ধ হয়ে মামলা করেছে তাকে জিজ্ঞেস করেন৷’’
‘বাদি আপনার সঙ্গে কথা বলার পর মামলা করেছেন’ – এর জবাবে তিনি বলেন, ‘‘আমার সাথে কথা বলে তিনি মামলা করেননি৷ আমার সাথে এ নিয়ে তার কোনো কথা হওয়ার প্রশ্নই ওঠে না৷’’
এদিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বুধবার সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘এটি ৫৭ ধারার অপপ্রয়োগ৷ তুচ্ছ কিছু ঘটলো আর সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার করা হলো – এটি ৫৭ ধারার অপপ্রয়োগ৷ এ ধারা বাতিলের চেয়ে এর অপপ্রয়োগ বন্ধ করা দরকার৷’’ এ জন্য তথ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ করা উচিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি৷
তিনি বলেন, ‘‘সাইবার ক্রাইম নিয়ন্ত্রণের জন্য ৫৭ ধারা করা হয়েছিল৷ কিন্তু তুচ্ছ কারণে এর অপপ্রয়োগ করা হচ্ছে কিনা সেটি খতিয়ে দেখতে হবে৷ খুলনায় যে ঘটনা ঘটেছে তা দুঃখজনক৷’’
এদিকে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমসহ গণমাধ্যমেও তীব্র সমালোচনার মুখে পড়তে হচ্ছে এই মামলাকে৷ সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠনও এর প্রতিবাদে বিবৃতি দিয়েছে৷
সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী গত ছয় মাসে তথ্য-প্রযুক্তি আইনে মামলা হয়েছে ৩৯১টি৷ এ সব মামলায় আসামি করা হয়েছে ৭৮৫ জনকে, গ্রেপ্তার হয়েছেন ৩১৩ জন৷ এ সব মামলায় অধিকাংশই ৫৭ ধারায়৷ শুধু সাংবাদিকদের বিরুদ্ধেই ৫৭ ধারায় ছয় মাসে মামলা হয়েছে ১৯টি৷
প্রিয় পাঠক, আপনি কিছু বলতে চাইলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে...