হয় মেয়ে, না হয় বাড়ি ভাড়া!
২৫ আগস্ট ২০১৬ব্যাচেলরদের জীবনে অনেক সুখের পাশাপাশি অনেক দুঃখকষ্টও আছে৷ বিষয়টিকে বরেণ্য সাহিত্যিকরাও খুব গুরুত্ব দিয়েছেন৷ বাংলা সাহিত্যেও ব্যাচেলর, অর্থাৎ অবিবাহিতদের নিয়ে খুব উল্লেখযোগ্য কিছু কাজ আছে৷ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'চিরকুমার-সভা' তো কালোত্তীর্ণ এক রচনা৷
তো গুলশান হামলার পর থেকে বাংলাদেশেও ব্যাচেলরদের নিয়ে অনেক লেখালেখি হচ্ছে৷ লেখায় ব্যাচেলরদের কষ্টের কথাগুলোই উঠে আসছে বেশি৷ কষ্টের বর্ণনা দিতে গিয়ে সম্প্রতি একজন লিখেছেন, ''ঢাকা শহরে ব্যাচেলর থাকা ছেলেদের জীবনটা রবিনসন ক্রুসোর জীবনের মতো৷ সকালে জানে না দুপুরের ভাত পাবে কিনা৷''
এমন কষ্ট অবশ্য ব্যাচেলরদের যুগ যুগ ধরে সহ্য করে আসতে হচ্ছে৷ তবে গুলশান হামলার পর থেকে বাংলাদেশে, বিশেষ করে শহরাঞ্চলের ব্যাচেলরদের জীবনে এসেছে নতুন সংকট৷ জঙ্গি তৎপরতায় জড়িত থাকতে পারে - এই সন্দেহে বাড়িওয়ালারা এখন আর ব্যাচেলরদের বাড়ি ভাড়া দিতে চাচ্ছেন না৷
নিয়মিত এবং সময় মতো ভাড়া পাওয়ার বিষয়ে সংশয় কিংবা 'পারিবারিক' কারণে বাড়িওয়ালাদের মধ্যে ব্যাচেলরদের ভাড়াটে হিসেবে মেনে নেয়ায় অনীহা আগেও ছিল৷ তবে বিষয়টি এখন এমন পর্যায়ে গিয়েছে যে স্বয়ং পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলমও ফেসবুকে বাড়িওয়ালাদের উদ্দেশ্যে লিখেছেন, ''এই ঢাকা শহরে মাথা গোঁজার ঠাঁই খুঁজতে আমাকেও অনেক হয়রানি সহ্য করতে হয়েছে৷ বাড়িওয়ালাদের উদ্দেশে অনুরোধ, ঢালাওভাবে ব্যাচেলরদের বাড়ি ভাড়া দেওয়া বন্ধ করবেন না৷ জঙ্গি সন্দেহে যদি এটা করেন, তাহলে মনে রাখবেন বিবাহিত মানুষও জঙ্গির খাতায় নাম লিখিয়েছে, সম্ভবত শিশুসহ! কেউ আপনাদের হয়রানি করবে না, যদি আপনারা সব তথ্য সংগ্রহ করে নিকটস্থ থানায় দিয়ে থাকেন৷ এই তথ্য সংগ্রহ সর্বক্ষেত্রেই প্রযোজ্য৷'' পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর এই ফেসবুক স্ট্যাটাস রীতিমতো বড় খবরের মর্যাদাই পেয়েছে সংবাদমাধ্যমে৷
এছাড়া বাড়িওয়ালাদের আশ্বস্ত করতে পুলিশের পক্ষ থেকে ডিএমপি কমিশনারও বলেছেন, অবিবাহিতদের বাড়িভাড়া দেয়ার ব্যাপারে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই৷ পর্যাপ্ত তথ্য সংগ্রহ করে ব্যাচেলরসহ যে কাউকে বাসা ভাড়া দেওয়া যাবে৷
আবাসনের দাবিতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যে আন্দোলন করছেন সেখানেও বাড়িওয়ালাদের ব্যাচেলর ভাড়াটে বর্জনের প্রবণতার বিষয়টি খুব সঙ্গত কারণেই উল্লেখ করা হচ্ছে৷
ব্যাচেলর অথবা ব্যাচেলরদের প্রতি সহানুভূতিশীল অনেকেই সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে বাড়িওয়ালাদের প্রতি নিয়মিত ক্ষোভ প্রকাশ করছেন৷ একজন প্রচণ্ড ক্ষোভ থেকেই মজা করে লিখেছেন, ''বাড়িওয়ালারা বাসা ব্যাচেলরদের কাছে ভাড়া না দিলেও নিজের মেয়ের বিয়ের সময় ঠিকই ব্যাচেলর পাত্রই খোঁজে৷'' অনেকে আবার বাড়িওয়ালাদের কাছে রাখছেন নতুন ধরনের দাবি৷ তাঁরা বলছেন, ''হয় মেয়ে বিয়ে দিন, নইলে বাড়ি ভাড়া দিন!''
বলা বাহুল্য, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে এমন দাবির কথাও অবশ্য মজা করেই লেখা হচ্ছে৷
সংকলন: আশীষ চক্রবর্ত্তী
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ