1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

হিন্দুত্ববাদের দাপটে মুসলিমদের নিরাপত্তার অভাব

অনিল চট্টোপাধ্যায় নতুন দিল্লি
১৫ আগস্ট ২০১৭

স্বাধীনতার ৭০ বছরে ভারতে আবারো যেন প্রকট হয়ে উঠছে হিন্দু-মুসলিম ভেদাভেদের আবহ৷ হিন্দুত্ববাদী সংখ্যাগুরু দলতন্ত্রের দাপটে মোদী সরকার এখানকার অবৈধ বাংলাদেশি ও মিয়ানমারের মুসলিম রোহিঙ্গাদের স্বভূমিতে ফেরত পাঠাতে উদ্যোগী৷

https://p.dw.com/p/2iFUK
Sethusamudram Projekt. Proteste Indien
ছবি: AP

প্রাক্তন উপরাষ্ট্রপতি হামিদ আনসারি সেদিকে ইঙ্গিত করেই নিজের বিদায়ী ভাষণে বলেছেন, অসহিষ্ণুতা, গণপিটুনিতে হত্যা, গোমাংসে নিষেধাজ্ঞা, লাভ জেহাদ, যুক্তিবাদীদের খুনের মতো ঘটনা ভারতীয় মূল্যবোধের পরিপন্থি৷ শুধু তাই নয়, স্বঘোষিত আইনরক্ষকদের দাপটে  মুসলিমদের মধ্যে নিরাপত্তার অভাব দেখা দিয়েছে ভারতে৷ তাঁদের ভারতীয়ত্ব ও জাতীয়তাবাদ নিয়েও প্রশ্ন তোলা হচ্ছে৷

তবে শুধু তিনিই নন৷ ধর্মের নামে যারা বিদ্বেষ ও রক্তপাতের রাজনীতি করে তাদের একহাত নিয়ে তৃণমূল সাংসদ নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর পৌত্র সুগত বসু সংসদে দেওয়া বক্তব্যে ক্ষমতাসীন দল ও সরকারকে গান্ধীজির বার্তা স্মরণ করিয়ে দেন৷ স্মরণ করিয়ে দেন ১৯৪৭ সালের নভেম্বরের কথা, যখন গান্ধীজি বলেছিলেন কোনো মুসলিম যেন ভারতে নিরাপত্তার অভাববোধ না করেন৷ একটি সম্প্রদায় বা ভাষা যেন অন্য সম্প্রদায় বা ভাষার ওপর জোর খাটাবার চেষ্টা না করে৷

অথচ প্রধানমন্ত্রী মোদী বিজেপি নেতা ভেঙ্কাইয়া নাইডুর উপরাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচিত হবার পর যে বক্তব্য রাখেন, তাতে শোনা গেছে ঠিক এর উলটো সুর৷ অন্তত পর্যবেক্ষক মহলের অভিমত এমনটাই৷ সেই বক্তব্যে মোদী বলেছিলেন, আগামী পাঁচ বছর দেশের রূপান্তর পর্ব শুরু হবে৷ বলা বাহুল্য, দেশের তিনটি শীর্ষপদই এখন বিজেপির দখলে৷ তাই স্বাভাবিকভাবেই উদ্বেগ আরও বেড়েছে৷ এটা কি হিন্দুরাষ্ট্র গঠনের প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিত? কারণ ইতিমধ্যেই আঙুল উঠেছে একাংশের দেশাত্মবোধের দিকেও৷

বিজেপি-শাসিত রাজ্যের মাদ্রাসাগুলিতে ১৫ই আগস্ট স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের এবং জাতীয় সংগীত গাইবার ভিডিও তুলে রাখা বাধ্যতামূলক করার নির্দেশ জারি করা হয়েছে৷ এই নিয়ে মাদ্রাসাগুলোতে দেখা দিয়েছে তীব্র অসন্তোষ৷ তাদের প্রশ্ন, ভারতীয় মুসলিমদের দেশাত্মবোধের পরীক্ষা নেবার জন্যই কি এই নির্দেশ? তা না হলে সংস্কৃত স্কুল, সরকারি স্কুল বা অন্যান্য সম্প্রদায়ের পরিচালিত স্কুলগুলি বাদ দিয়ে বেছে বেছে শুধু ১২ হাজার মাদ্রাসাগুলোর জন্যই এই নির্দেশ কেন? সর্ব ভারতীয় উলেমা ফোরামের কনভেনার সুহেবুর রেহমান বলেছেন, বিজেপি সরকার শুধু ভারতীয় মুসলিমদের কাছেই দেশাত্মবোধের প্রমাণ চেয়েছে৷ অবশ্য জাতীয় সংগীত গাইবার বিষয়ে এই উলেমাদের আপত্তি রয়েছে৷ জাতীয় সংগীতে নাকি এমন কিছু কিছু কথা আছে, যা ইসলামবিরোধী৷ ‘ভারত মাতা কি জয়' বলতেও তাঁদের আপত্তি৷ তবে এর বদলে কবি ইকবালের ‘সারে যাঁহা সে আচ্ছা' গানটি গাইতে তাঁদের আপত্তি নেই৷ বিতর্ক এই নিয়েই৷

অন্যদিকে, অবৈধভাবে ভারতে বসবাসকারী বাংলাদেশি এবং মিয়ানমারের মুসলিম রোহিঙ্গাদের চিহ্নিত করে স্বদেশে ফেরত পাঠাতে তৎপর হয়ে উঠেছে মোদী সরকার৷ আনুমানিক হিসেবে প্রায় দেড় কোটি বাংলাদেশি এবং প্রায় ৪০ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে রয়েছে৷ এক সমীক্ষায় বলা হয়, বহু দিন ধরে বাংলাদেশিরা গোপনে সীমান্ত পেরিয়ে এপারে এসে ধীরে ধীরে ভোটার কার্ড, রেশন কার্ড জোগাড় করে নিয়েছে মূলত স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের পৃষ্ঠপোষকতায়৷ কারণ ভোট ব্যাংক বলে একটা কথা আছে৷ এক্ষেত্রে তাঁদের ফেরত পাঠানো আদৌ সম্ভব কিনা – ডয়চে ভেলের এই প্রশ্নের উত্তরে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ সংস্থার দক্ষিণ এশীয়া বিভাগের প্রধান মীনাক্ষী গাঙ্গুলি বলেন, বাংলাদেশ সরকার যদি তাঁদের নাগরিক হিসেবে মেনে নিতে সম্মত হয়, তাহলে সেটা একটা প্রক্রিয়া হতে পারে৷

মীনাক্ষী গাঙ্গুলি

তিনি বলেন, ‘‘আজকাল যেটা দেখা যায়,  সীমান্ত পার হতে গিয়ে অনেক বাংলাদেশি ধরা পড়েন এবং নথিপত্র না থাকায় তাঁদেরছ'মাস থেকে দু'বছরের জেল হয়৷ জেল থেকে বের হবার পর ঢাকা স্বভাবতই তাঁদের নিজের নাগরিক বলে মানতে চায়নি, চায় না৷ সেক্ষেত্রে তাঁরা না ঘরকা, না ঘাটকা অবস্থায় থাকেন৷ তাছাড়া কোনোভাবে তাঁরা যদি ভারতীয় ভোটার কার্ড বা রেশন কার্ড জোগাড় করে নিতে পারেন, তাহলে কী করে প্রমাণ হবে যে তাঁরা বাংলাদেশি?''

এ জন্য হয়ত ভারতের অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়াই দায়ী৷ গলদ আছে সিস্টেমেও৷ তাই সেটা দূর করতে হবে৷ ওদিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে যে গত তিন বছরে ১৮০০ জন বাংলাদেশি নাগরিককে নাকি ফেরত পাঠাতে পেরেছে মোদী সরকার৷

রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো নিয়ে মীনাক্ষী গাঙ্গুলি ডয়েচে ভেলেকে জানান, রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে কীভাবে নির্যাতিত হচ্ছেন সেটা ভারত জানে৷ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কনভেনশনের সদস্য হিসেবে মিয়ানমার সরকারকে  রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ফেরত নিতে বলতেপারে দিল্লি৷ না নিলে সেটা হবে মানবাধিকার লঙ্ঘন৷ কারণ এঁরা সকলেই তাঁদের নিজ ভিটেমাটি থেকে উৎখাত হয়ে ভারতে এসেছে৷

ভারতের ৭০তম স্বাধীনতা বার্ষিকীতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী চতুর্থবার দিল্লির লালকেল্লার প্রাকার থেকে প্রথাগত ভাষণে বলেছেন, কাশ্মীর সমস্যার সমাধান গুলি দিয়ে বা গালি দিয়ে হবে না৷ হবে সম্প্রীতি দিয়ে৷ এ জন্য গড়তে হবে নব ভারত৷ কিন্তু নব ভারতের সংকল্প বলতে তিনি কী বোঝাতে চেয়েছেন? সংখ্যাগুরু দলতন্ত্রের চাপে বিরোধীদের কণ্ঠরোধ? এই নিয়ে আজ নানা মুনির নানা মত৷

বন্ধু, প্রতিবেদনটি সম্পর্কে কিছু বলার থাকলে লিখুন নীচের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান