হাওরের মানুষের দুর্দশার কাহিনি
দেশের হাওর অঞ্চলে কৃষকদের করুণ দশা৷ বন্যার পানিতে ধান তলিয়ে যাওয়ায় আত্মহত্যা করেছেন কৃষক৷ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন নিঃস্ব কৃষক পরিবারের একজন৷ ক্ষয়ক্ষতি কয়েক হাজার কোটি টাকার৷
পাহাড়ি ঢল আর বন্যা
এপ্রিলের শুরুতে টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ ও নেত্রকোণার হাওরের বোরো ধানের ক্ষেত তলিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কয়েক লাখ পরিবার৷
পানিতে বিষক্রিয়া
ধান নষ্ট হওয়ার পর বিষক্রিয়ায় মারা গেছে হাওরের মাছ, সেখানে চরানো হাঁস৷
হাওরে ডুবছে স্বপ্ন
এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে ডিঙ্গাপোতা হাওরের পাশের একটি গ্রামে একজন কৃষক গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন৷ জমিতে অনেক ধান হয়েছিল তাঁর, গোয়ালে ছিল ৩০টি গরু৷ ধান সব পানির নিচে, পরিবারের মানুষের কথা ভেবে বেঁচে থাকাটা অর্থহীন মনে হয়েছে তাঁর কাছে৷ (ছবিতে নিঃস্ব এক কৃষক)
তারা বানু’র মৃত্যু
হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলায় বন্যার পানিতে শত শত হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে গেছে৷ নিঃস্ব হয়েছে সব কৃষক৷ তাঁর পরিবারেও বিপর্যয় নেমে আসায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন তারা বানু৷ তাঁর মতো অবস্থা হাজারো কৃষকের৷ এখানে মোট জমি রয়েছে ২০ হাজার ৭০ হেক্টর৷ এর মধ্যে ১৯ হাজার ৫০০ হেক্টর জমি ক্ষতিগ্রস্ত৷ ৮৭ টি বাঁধ হুমকির মুখে৷ ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ ৬ হাজার কোটি টাকা বলে ধারণা করা হচ্ছে৷
৪৩ হাজার কৃষক পরিবার নিঃস্ব
হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোণাসহ উত্তর পূর্বাঞ্চলের জেলাগুলোতে হঠাৎ বন্যা নতুন কোনো ঘটনা নয়৷ কিন্তু এবার তার রূপ যেন আরও ভয়াবহ৷ এতে নিঃস্ব হয়ে গেছে অন্তত ৪৩ হাজার কৃষক পরিবার৷
ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি
ধান নষ্ট হয়েছে অন্তত ১ লাখ ৩ হাজার ২৮৪ মেট্রিক টন৷ সরকারি হিসেবে প্রতি মণ ধান ৯২০ টাকা করে ধরলে টাকার অঙ্কে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেক৷
১০ কোটি টাকার জরুরি ত্রাণ
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, বিরামহীন অতিবৃষ্টি হওয়ায় হাওর রক্ষাবাঁধ ভেঙে যাওয়া ও জলাবদ্ধতার কারণে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বাড়ছে৷ ২৭শে এপ্রিল সরকার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, বন্যা দুর্গত মানুষের জন্য ১০ কোটি টাকার ত্রাণ জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজন৷
হাওরের এত ক্ষয়-ক্ষতি জীবনে দেখিনি: রাষ্ট্রপতি
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, ‘‘আমার জীবনে হাওরের এত ক্ষয়ক্ষতি দেখিনি৷ আমি কৃষকের সন্তান, আমার বাপ একজন কৃষক ছিলেন৷’’ ১৭ এপ্রিল সুনামগঞ্জের ক্ষতিগ্রস্ত হাওর এলাকা পরিদর্শন করেন রাষ্ট্রপতি৷
তিন লাখ কৃষক পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত
সুনামগঞ্জে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল, অতিবৃষ্টি ও বাঁধ ভেঙে যাওয়ার কারণে ১৪২টি হাওরের বোরো ধান তলিয়ে গেছে৷ এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জেলার প্রায় তিন লাখ কৃষক পরিবার৷ জেলায় এবার ২ লাখ ২৩ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছিল, যার ৯০ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷
এক হাজার ১৮০ মেট্রিক টন মাছের মৃত্যু
নেত্রকোণায় আবাদ হওয়া এক লাখ ৮৪ হাজার ৩২০ হেক্টর জমির মধ্যে ৬৯ হাজার ৭১০ হেক্টর জমির বোরো ধান পানিতে তলিয়ে গেছে, মরে গেছে এক হাজার ১৮০ মেট্রিক টন মাছ৷