1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা নেই, যাত্রী-হেলপার ধাক্কাধাক্কি

সমীর কুমার দে ঢাকা
১ সেপ্টেম্বর ২০২০

বেসরকারি ওয়ান ব্যাংকের কর্মকর্তা এস এম মেহেদী হাসান যাত্রাবাড়িতে থাকেন৷ তার অফিস কারওয়ান বাজারে৷ অন্যান্য দিনের মতো মঙ্গলবারও তিনি গণপরিবহন ব্যবহার করে অফিসে যাতায়াত করেছেন৷

https://p.dw.com/p/3hrYV
ছবি: DW/R. Murtuza

পথের অভিজ্ঞতা জানতে চাইলে ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘ভাড়া আগের জায়গায় ফিরেছে সত্যি৷ কিন্তু বাসে দাঁড়িয়েও যাত্রী নেওয়া হয়েছে৷ ঠেলাঠেলি করে অফিসে এসেছি৷ স্বাস্থ্যবিধির কোনো বালাই ছিলো না৷ পথের মধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালত বা পুলিশ কেউই খোঁজ নেয়নি৷’’

ইমরুল হাসান থাকেন আগারগাঁওয়ে৷ অফিস উত্তরায়৷ একটি বায়িং হাউজের এই কর্মকর্তা ডয়চে ভেলেকে বলছিলেন, আগে ভাড়া ছিলো ৩০ টাকা৷ ৬০ শতাংশ বৃদ্ধির পর ভাড়া নিতো ৫০ টাকা৷ মঙ্গলবার অফিসে যাওয়ার সময় তাকে ৪০ টাকা দিতে হয়েছে৷ এ নিয়ে বাসের মধ্যে যাত্রীদের সঙ্গে হেলপারের তর্কাতর্কি, এমনকি ধাক্কাধাক্কিও হয়েছে৷ ইমরুলের প্রশ্ন- দাঁড়িয়ে লোক নিলে ভাড়া বেশি হবে কেন?

ভাড়া আগের জায়গায় ফিরেছে সত্যি, কিন্তু...: ব্যাংক কর্মকর্তা

পুরানো ভাড়ায় ফেরার প্রথম দিন মঙ্গলবার রাজধানীজুড়েই ছিলো এমন চিত্র৷ যাত্রীদের সবচেয়ে বড় শঙ্কার জায়গা, স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না৷ নতুন করে তারা কি ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যাচ্ছেন কি-না? বাসচালক-হেলপার কেউ স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা করছেন না৷ মেহেদী হাসানের কথায়, নতুন পরিস্থিতিতে ঝুঁকে বেড়েই গেল৷

অবশ্য যাত্রীদের এই অভিযোগ মানতে রাজি নন বিআরটিএ'র চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘আমি সকাল থেকেই মাঠে ছিলাম৷ অনেক বাস থামিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলেছি, কেউ আমার কাছে অভিযোগ করেনি৷ এমনকি কোনো পরিবহনেই দাঁড়িয়ে যাত্রী নেওয়ার দৃশ্যও আমার চোখে পড়েনি৷ ঢাকা শহরে আটটি মোবাইল কোর্ট সকাল থেকে কাজ করেছে৷’’ যাত্রীদের অভিযোগের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বিআরটিএ চেয়ারম্যান বলেন, ‘‘কেউ যদি এমন অভিযোগ করে থাকে সেটা ঠিক না৷ আর যদি কারো সঙ্গে ঘটে থাকে তাহলে তিনি লিখিত অভিযোগ করতে পারেন৷ আমরা ব্যবস্থা নেবো৷’’

বিআরটিএ চেয়ারম্যান অস্বীকার করলেও পরিবহন মালিক সমিতির নেতা খন্দকার এনায়েত উল্লাহ যাত্রীদের অভিযোগের বিষয়ে খানিকটা স্বীকার করেছেন৷ ডয়চে ভেলের সঙ্গে আলাপকালে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব বলেন, ‘‘কিছু জায়গায় আমরাও অভিযোগ পেয়েছি৷ আগামী দুই চারদিনের মধ্যে এটা ঠিক হয়ে যাবে৷ তবে অধিকাংশ পরিবহনেই ভাড়ার নির্দেশনা মানা হয়েছে৷ সবার সঙ্গে আমরা আলোচনা করছি, আশা করি সমস্যা থাকবে না৷’’ স্বাস্থ্যবিধির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘আমরা যতটা সম্ভব চেষ্টা করছি৷’’

কোনো পরিবহনেই দাঁড়িয়ে যাত্রী নেওয়ার দৃশ্য আমার চোখে পড়েনি: বিআরটিএ চেয়ারম্যান

করোনা ভাইরাসের কারণে গত ২৬ মার্চ থেকে সারাদেশে গণপরিবহন বন্ধ হয়ে যায়৷ পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলে ১ জুন থেকে সীমিত পরিসরে গণপরিবহন চলার অনুমতি দেয় সরকার৷ এতদিন অর্ধেক সিটে যাত্রী পরিবহন করেছে গণপরিবহনগুলো৷ যাত্রীদের এই সময়ে গুনতে হয়েছে কাগজে-কলমে ৬০ শতাংশ বেশি ভাড়া৷ যাদিও বাস্তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আগের তুলনায় দ্বিগুণ ভাড়া নিয়েছে পরিবহন মালিক-শ্রমিকেরা৷

পরিবহন যাত্রীদের নিয়ে কাজ করে যাত্রী কল্যাণ সমিতি৷ সংগঠনের মহাসচিব খন্দকার মোজ্জামেল হক চৌধুরী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমাদের হটলাইনে ফোন করে অনেক যাত্রী অভিযোগ করেছেন, তাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়া হচ্ছে৷ আমরাও মাঠে থেকে দেখেছি, স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না, নেওয়া হচ্ছে অতিরিক্ত ভাড়া৷ এগুলো দেখভালের জন্য বিআরটিএ'র পর্যাপ্ত ব্যবস্থা ছিলো না৷ ফলে রিবহন শ্রমিকদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েন যাত্রীরা৷ অনেকেই ঝামেলা এড়াতে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে গন্তব্যে গিয়েছেন৷’’

সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের মঙ্গরবার সাংবাদিকদের বলেছেন, কেউ যদি অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করেন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷

মিরপুরের কাজীপাড়া থেকে ফার্মগেইটে অফিস করেন শহীদুল ইসলাম৷ আগে ১০ টাকা দিয়ে আসা-যাওয়া করলেও ৬০ শতাংশ বৃদ্ধির ফলে তাকে ১৮ টাকা দিয়ে আসা যাওয়া করতে হতো৷ মঙ্গলবার দাঁড়িয়ে যাত্রী নেবে না এই শর্তে শেকড় পরিবহনের সুপারভাইজার ১৫ টাকা করে ভাড়া আদায় করেছে৷ শহীদুল বলছিলেন, স্বাস্থ্যবিধির কথা চিন্তা করে বাসের সবাই অতিরিক্ত পাঁচ টাকা দিতে রাজি হয়েছে৷ তারপরও তো নিরাপদে অফিসে পৌঁছা গেছে তাতেই শান্তি৷ অবশ্য তার মতে, এভাবে তো প্রতিদিন চলতে পারে না৷