স্পেনে এখনো মুসলিম আমলের সেচ প্রণালী
৩ জানুয়ারি ২০২৪যেখানেই তাঁকে প্রয়োজন, পাকো পেরেস সেখানেই হাজির হন৷ যদিও বয়স ৮৫ বছর পেরিয়ে গেছে৷ গ্রামের প্রাচীন সেচ ব্যবস্থা সম্পর্কে অন্য কারো এত ভালো ধারণা নেই৷ তিনি বলেন, ‘‘খালের মধ্যে পানি বইতে দেখা আমাকে সব সময়ে সবচেয়ে আনন্দ দিয়ে এসেছে৷ এভাবে আমরা খেতে চাষ করেছি৷ এই খালের উপর আমরা নির্ভর করে আসছি৷''
স্পেনের দক্ষিণ প্রান্তে আলপুখারা পর্বতে অষ্টম শতাব্দীতে মুর মুসলিমরা শাখাপ্রশাখাযুক্ত সেচ ব্যবস্থা চালু করেছিল৷ আজও সেই খাল ব্যবহার করা হচ্ছে৷ পাকো ও তাঁর ছেলে আন্তোনিও তাঁদের ক্যাপসিকামের খেতে এভাবে পানি দিচ্ছেন৷ মুরদের ঐতিহ্যের সুফল এখনো ভোগ করছেন তাঁরা৷ আন্তোনিও মনে করেন, ‘‘এই প্রণালীর মাধ্যমে তারা আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উত্তরাধিকার রেখে গেছে৷ রোমানরাও খাল কেটেছে বটে, কিন্তু আরবরা সেগুলিকে নিখুঁত করে তুলেছিল৷''
তবে অনেক পরিখা কয়েক শতাব্দী ধরে ব্যবহার করা হয় নি৷ তাই খোসে মারিয়া মার্তিন সিবান্তসের সঙ্গে তারা সেগুলি পুনরুদ্ধারের কাজ করছেন৷ প্রত্নতাত্ত্বিক হিসেবে তাঁর কাছে সেই প্রণালীর গুরুত্ব চাষবাসের তুলনায় অনেক বেশি৷ খোসে মনে করেন, ‘‘এখানকার মতো প্রাচীন খালগুলি পরিবেশের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ সেগুলি প্রাণ সঞ্চার করে৷ পানির একটা অংশ মাটির নীচে চলে যায় এবং সেখানে আবার দৃশ্যমান হয়ে ওঠে৷ এভাবে এই প্রণালী আরও বড় জীববৈচিত্র্য সৃষ্টির কাজে অবদান রাখছে৷''
শাখাপ্রশাখার কারণে খালের পানি বেশি দ্রুত বয়ে যেতে পারে না৷ পানির পরিমাণ ধীরে ধীরে কমে চলায় তাতে সুবিধাই হচ্ছে৷ জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে পাকোর মনে আর কোনো সংশয় নেই৷ পাকো পেরেস বলেন, ‘‘আমার গ্রামে বহু বছর ধরে তুষারপাত ঘটে নি৷ আগে আমাদের বাড়ির সমতল ছাদ থেকে বরফ সরিয়ে রাস্তার উপর ফেলতে হতো৷ তখন ১৫-২০ দিন বা এক মাস গ্রাম বরফে ঢাকা থাকতো৷ এখন আর সেটা হয় না৷''
জলাধারগুলিও পানির প্রকট অভাবের সাক্ষ্য বহন করে৷ অথচ স্পেনে আম ও আভোকাডোর মতো আরো বেশি করে গ্রীষ্মমন্ডলীয় ফলমুল চাষ হচ্ছে, যে কাজে অনেক পানির প্রয়োজন৷ চাষবাসের কাজে আরো বেশি করে স্বয়ংক্রিয় প্রণালী ব্যবহার করা হচ্ছে, যার মাধ্যমে প্রত্যেকটি গাছের গোড়ায় পানির বিন্দু দেওয়া হয়৷
কৃষি প্রযুক্তিবিদ হিসেবে এদুয়ার্দো মালদোনাদোর মতে, প্রাচীন খালগুলির আর কোনো প্রয়োজন নেই, কারণ সরবরাহের সময় পানি চুঁইয়ে পড়ে বাষ্পীভূত হয়ে যায়৷ এদুয়ার্দোর মতে, ‘‘ড্রিপ সেচই হলো ভবিষ্যতের পথ৷ এই প্রণালী অনেক বেশি কার্যকর এবং সব ধরনের প্লান্টেশনে কাজে লাগানো সম্ভব৷ এর মাধ্যমে আমরা ৪০ থেকে ৬০ শতাংশ পানি সাশ্রয় করতে পারি৷''
অন্যদিকে প্রত্নতাত্ত্বিকদের কাছে আজকের যুগে মুল আমলের পরিখাগুলির প্রাসঙ্গিকতা বরং আরো বেড়ে গেছে৷ সে কারণে তাঁরা আলপুখারার গ্রামগুলির বয়স্ক মানুষদের কাছে সে বিষয়ে আরো জানার চেষ্টা করছেন৷ খোসে মারিয়া মার্তিন সিবান্তস বলেন, ‘‘এই জ্ঞান সময়ের সঙ্গে সঙ্গে হারিয়ে যাচ্ছে৷ আমরা যদি বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে কার্যকারিতা বিচার করি, বিশেষ করে ইকোলজিকাল ব্যবহারের কথা ভাবি, তখন বুঝতে পারবো যে বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে এই প্রণালীগুলি অনেক বেশি কার্যকর৷''
তবে ঐতিহ্যবাহী চাষিদের মধ্যে পুরানো এই খাল ব্যবহারের প্রবণতা কমে চলেছে৷ সে কারণে হাজার বছরের পুরানো মুর আমলের সেচ ব্যবস্থা চালু রাখা কঠিন হয়ে পড়ছে৷
নর্মান স্ট্রিগেল/এসবি