1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে বারবার বিচ্যুত হয়েছি’

সমীর কুমার দে ঢাকা
৩০ ডিসেম্বর ২০২১

বিদায় নিচ্ছে আরও একটি বছর৷ তবে এই বছরটি ছিল একেবারেই ভিন্ন৷ স্বাধীনতার ৫০ বছর পর এসে চলছে নানা হিসাব মেলানোর কাজ৷ এই দীর্ঘ সময়ে বাংলাদেশের অর্জন, ব্যর্থতা নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ৷

https://p.dw.com/p/44yB6
ছবি: Mahmud Hossain Opu/AP Photo/picture alliance

প্রাপ্তি অনেক, কিন্তু অপ্রাপ্তি কী? কোথায় কোথায় এখনও উন্নতি দরকার? সেসব নিয়েই ডয়চে ভেলের সঙ্গে কথা বলেছেন অধ্যাপক ড. রওনক জাহান৷

ডয়চে ভেলে : স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করছে দেশ৷ এই ৫০ বছরে বাংলাদেশের বড় অর্জন কী?

অধ্যাপক ড. রওনক জাহান : প্রথমত, আমরা সামাজিক ও অর্থনৈতিক খাতে অনেক অর্জন করেছি৷ আমরা যখন স্বাধীন হয়েছিলাম, তখন আমাদের দুঃশ্চিন্তা ছিল আমাদের তো কোন প্রাকৃতিক সম্পদ নেই, তাহলে এত কোটি মানুষকে আমরা কিভাবে খাওয়াবো? তখন তো আমাদের তলাবিহীন ঝুড়ি বলা হয়েছিল৷ আমরা কিন্তু ধাপে ধাপে উন্নতি করেছি৷ অর্থনৈতিক সূচক যদি আমরা দেখি, আমাদের যে পরিমাণ মানুষ গরীব ছিল, তার চেয়ে আমরা অনেকটাই কমাতে পেরেছি, জিডিপিও অনেক বাড়াতে পেরেছি৷ স্বাস্থ্য, শিক্ষাখাতেও আমাদের উন্নতি হয়েছে৷ তখন আমাদের গড় আয়ু ছিল ৫০ বছরের কম, এখন সেটা ৭০ বছরের বেশি৷ আমাদের জন্য আনন্দের খবর হচ্ছে, স্বাধীনতার সময় আমরা অর্থনৈতিক ও সমাজিক সব সূচকেই পাকিস্তানের চেয়ে পিছনে ছিলাম৷ এখন প্রায় সব সূচকেই আমরা তাদের ছাড়িয়ে গেছি৷ সব মিলিয়ে আমি বলব, ৫০ বছর উদযাপনে আমাদের অনেক কিছুই আছে৷

এই ৫০ বছরে সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা কী?

সব থেকে বড় ব্যর্থতা যেটা বলব, সুশাসনে আমরা কখনোই আগাতে পারছি না৷ এর সঙ্গে আমি বলব, স্বাধীনতার শুরুতেই আমরা গণতান্ত্রিক দেশ শুরু করেছিলাম৷ সেই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা থেকে আমরা বারবার বাইরে পড়ে যাচ্ছি৷ অর্থনৈতিক ও সমাজিক ক্ষেত্রে যেমন আমরা ক্রমান্বয়ে উন্নতি করেছি, কিন্তু সুশাসন ও গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার ক্ষেত্রে আমরা বারে বারে পথ থেকে বিচ্যুত হয়েছি এবং আমরা পিছিয়ে পড়ছি৷ এই দু'টো ক্ষেত্রে আমাদের বিপরীত যাত্রা৷ 

‘আমি চাইব, মানবিক ও সহনশীল একটি সমাজ প্রতিষ্ঠিত হোক’

দেশের উন্নয়নের সঙ্গে জনগণের ভাগ্যের উন্নয়ন কতটা হয়েছে?

উন্নয়নের সুফল অনেক সময় জনগোষ্ঠীর সবার জন্য সমান হয় না৷ আমরা যে সমস্ত পরিসংখ্যান বলছি, যেমন মাথাপিছু আয়, এটা কিন্তু গড় হিসাব৷ এর সঙ্গে যদি আমরা দেখি ধনী ও দরিদ্রের পার্থক্য, সেটা কিন্তু ক্রমশ বেড়ে যাচ্ছে৷ সবারই ভাগ্যের পরিবর্তন হয়েছে, কিন্তু যারা অনেক ধনী তারা আরও বেশি ধনী হয়েছে৷ বাংলাদেশ তো একটা ছোট দেশ৷ আমাদের যে উন্নয়ন হচ্ছে, সেটার জন্য যারা শ্রমিক বা অভিবাসী তারা খুব কষ্ট করে আয় করছেন৷ তারা অনেক শোষণ বঞ্চনার শিকার হচ্ছেন৷ আমরা যে দারিদ্র্যসীমার নিচ থেকে বেরিয়ে আসছি, সেখানে এই গার্মেন্টস শ্রমিক বা বিদেশ থেকে যারা টাকা পাঠাচ্ছেন তাদের একটা বড় অবদান রয়েছে৷ আমরা যদি দেখি, গার্মেন্টস সেক্টরে আমাদের পরে শুরু করে ভিয়েতনাম এগিয়ে গেছে৷ কম্বোডিয়াও এগিয়ে যাচ্ছে৷ ওদের শ্রমিকেরা কিন্তু আমাদের শ্রমিকদের থেকে বেশি বেতন পাচ্ছে৷ বিদেশে যারা বড়লোক তারা তো আর টাকা পাঠাচ্ছে না৷ কিন্তু যারা টাকা পাঠাচ্ছে তারা গরিব, কিন্তু তারা দেশে ও বিদেশে নানা হয়রানির শিকার হন৷

৫০ বছরে রাজনীতির গতিপথ কি বদলেছে?

স্বাধীনতার উত্তরকালে রাজনীতিতে একটা মূল্যবোধ ছিল, চেতনা ছিল যে আমরা একটা গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক দেশ হবো৷ তখন যারা রাজনীতি করতেন তারা অনেক সংগ্রাম করে এসেছেন৷ ৫০ বছর পর এসে আমরা দেখছি, অধিকার বা মূল্যবোধের জন্য যে রাজনীতি সেটা না করে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য রাজনীতি করা হচ্ছে এবং ক্ষমতায় গিয়ে তারা টাকা পয়সা বানাচ্ছেন৷ আগে গ্রামের কিংবা শহরের সাধারণ মধ্যবিত্তেরা রাজনীতি করতেন এখন খুব বড়লোক, ব্যবসায়ি বা অবসরপ্রাপ্ত আমলা বা সামরিক কর্মকর্তারা যাদের অনেক টাকা পয়সা আছে তারা রাজনীতি করছেন৷ এখনকার রাজনীতির সঙ্গে টাকা পয়সা অনেকটা জড়িয়ে গেছে৷

নির্বাচনই কি গণতন্ত্র উন্নয়নের একমাত্র পরিমাপক?

নির্বাচন একটা পরিমাপক৷ নির্বাচন ছাড়া কিভাবে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতার বদল সম্ভব? এর বাইরেও বাকস্বাধীনতা গণতন্ত্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ৷ আইনের শাসন এবং আইনের প্রয়োগ সবার জন্য সমান হওয়া উচিৎ৷ পাশাপাশি গণমাধ্যমের স্বাধীনতাসহ যেসব সূচক দিয়ে গণতন্ত্রকে মাপা হয় তারা কোনোটাতেই আমরা ক্রমাগত উন্নতি করতে পারছি না৷ একটু উন্নতি কখনও হলেও পরক্ষণেই আবার পড়ে যাচ্ছে৷

নির্বাচন সুষ্ঠু হলেই কি মানুষের বাক-স্বাধীনতা বেড়ে যায়?

নির্বাচনটা কেন রাখা হয়েছে? ক্ষমতার বদল যেন শাস্তিপূর্ণ উপায়ে হয় এবং সবাই মেনে নেয়৷ সেটার জন্য তো আর কোন উপায় নেই৷ এই কারণে গণতান্ত্রিক দেশে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোটের ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ ভোটে যারা জিতবে তারা দেশ শাসন করবে৷ যে কোন গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মধ্যে বাক স্বাধীনতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷ গণতান্ত্রিক দেশগুলোর সংবিধানে বাক স্বাধীনতার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে৷ বাংলাদেশের সংবিধানেও এটা আছে৷

বৈশ্বিক বিবেচনায় বাংলাদেশে বাকস্বাধীনতা কি খুব বেশি নিচের দিকে?

বৈশ্বিক বিবেচনায় আমাদের থেকে উপরেও অনেক দেশ আছে, নিচেও অনেক দেশ আছে৷ আমরা এখন দেখছি, পৃথিবীর অনেক জায়গায় বাকস্বাধীনতা অনেক সংকটে পড়েছে৷ শুধু যে সরকারের চাপে সংকটে পড়েছে তা নয়, সামাজিক মাধ্যমেও অনেক সময় ভুয়া তথ্য দেওয়া হচ্ছে৷ সরকারের বাইরেও অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তি হুমকি ধামকি দেন৷ ফলে এখন বাক স্বাধীনতা অনেক রকম থ্রেটের মধ্যে পড়েছে৷ উপরে কে, নিচে কে সেটা না দেখে আমাদের আকাঙ্খা একটু উঁচু মাত্রায় রাখতে হবে৷ আমাদের অর্থনীতি উন্নত দেশের মতো হবে, এটা তো একটা আকাঙ্খার অংশ৷ তেমনি আমাদের দেশের মানুষের আকাঙ্খা থাকবে, আমরা স্বাধীনভাবে, মুক্তভাবে কথা বলতে পারব৷

উন্নয়ন আর গণতন্ত্র কি একসঙ্গে এগুতে পারে?

অবশ্যই পারে৷ এটা নিয়ে ৫০ এর দশক থেকে নানা ধরনের কথাবার্তা হয়েছে৷ এটা কখনোই প্রমাণ করা যায়নি যে, উন্নয়নের জন্য গণতন্ত্র একটা বাধা৷ অবশ্যই অনেক অগণতান্ত্রিক দেশেও উন্নয়ন হয়েছে, আবার অনেক গণতান্ত্রিক দেশেও উন্নয়ন হয়েছে৷ কিন্তু মানুষ উন্নয়নও চায়, গণতন্ত্রও চায়৷ একটার জন্য আরেকটা হবে না, তা নয়৷ এদের মধ্যে কোন সম্পর্ক নেই৷ বৈজ্ঞানিক কোন গবেষণায়ও সেটা পাওয়া যায়নি৷

সামনের দিনে বাংলাদেশকে আপনি কিভাবে দেখতে চান?

আমাদের সামাজিক-অর্থনৈতিক উন্নয়ন হোক৷ আমি আমার দেশকে অবশ্যই গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে দেখতে চাইব৷ বিশেষ করে আমি চাইব, মানবিক ও সহনশীল একটি সমাজ প্রতিষ্ঠিত হোক৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান