1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের আধুনিক শিক্ষা দিতে বাঁশের স্কুল

২৮ সেপ্টেম্বর ২০০৯

স্বপ্ন ছিল বলিউডের নায়ক হবার৷ কিন্তু মুম্বাইয়ের পথে পথে ঘুরে অবশেষে আবার ফিরে এলেন নেপালে৷ তার মাতৃভূমিতে৷ হিমালয় কন্যা নেপালে এসেই উত্তম সানজেল লেগে গেলেন কাজে৷

https://p.dw.com/p/JqVk
ফাইল ফটোছবি: India/Sandip Biswas

দেশ গঠনের কাজ, পথশিশুদের মধ্যে শিক্ষার আলো পৌঁছে দেবার কাজ৷ আর তাই প্রতিটি সুযোগ সুবিধাবঞ্চিত শিশু আধুনিক শিক্ষার সুযোগ পাক - এমন প্রত্যাশা থেকেই ঊনিশ বছর আগে যাত্রা শুরু হয়েছিল বাঁশের তৈরি একটি স্কুলের৷ পরে ২০০১ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে এর নাম হয় ‘সমতা'৷ বর্তমানে পুরো নেপাল জুড়েই রয়েছে সমতার শাখা, যেখানে প্রতিদিন ১৮ হাজার শিশু পরিচিত হয় আধুনিক শিক্ষার সঙ্গে৷

বিশ্বের অন্যতম দরিদ্র দেশ নেপালে হাজারো শিশুর জন্য ‘সমতা' নামের এই স্কুলটি খুলে দিয়েছে শিক্ষার দ্বার৷ সরকারি আর বেসরকারি শিক্ষার বিশাল ব্যবধানের গন্ডি পেরিয়ে স্কুলটি বাচ্চাদের জন্য অল্প পয়সায় এমন এক শিক্ষা পদ্ধতি দিচ্ছে যেখানে থাকছে আধুনিক সব শিক্ষণ৷ স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা ৩৫ বছরের উত্তম সানজেল কিন্তু কোনভাবেই একজন শিক্ষক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে চাননি৷ হতে চেয়েছিলেন বলিউডের রূপালি পর্দার এক নায়ক৷ সাত বছর চেষ্টাও করেছিলেন৷ কিন্তু হলো না৷ পরে ব্যর্থ হয়ে ফেরত আসেন কাঠমান্ডুতে৷ ছবির পর্দায় নায়ক না হতে পারলেও মানুষের হৃদয়ে সত্যি সত্যিই এখন একজন নায়ক হিসেবে পরিচিত উত্তম সানজেল৷

বলিউড ব্যর্থতার পর তিনি নেপালে ফিরে এসে রাস্তার বাচ্চাদের পড়াতে শুরু করেন৷ এটা ছিল ১৯৯০ সালের কথা৷ আর আনুষ্ঠানিকভাবে উত্তমের বহু জনপ্রিয় এই বাঁশের স্কুল যাত্রা শুরু করে ২০০১ সালে৷ যেখানে মাসিক পড়ার খরচ মাত্র ১০০ নেপালি রুপিতে৷

উত্তম বলছেন, তার ধারণা ছিল অল্প কিছু বাচ্চা হয়তো আসবে তার স্কুলে পড়তে৷ কিন্তু সে ধারণা পাল্টে যেতে দেরি হলনা৷ শত শত শিশু তার স্কুলে পড়ার জন্য আসতে শুরু করলো ৷

উত্তম বললেন, দেশ গড়ার জন্য শিক্ষিত মানুষ প্রয়োজন৷ আর নেপালে এখনকার সরকারি শিক্ষা ব্যাবস্থায় সব শ্রেণীর মানুষের জন্য সুযোগ পাওয়া সহজ নয়৷

নেপালে বর্তমানে সরকারি স্কুলে পড়ার খরচ কম৷ কিন্তু সরকারি স্কুলগুলোর সঙ্গে বেসরকারি স্কুলের পাঠ্যক্রমের আকাশ পাতাল পার্থক্য রয়েছে৷ উত্তম একটি আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থাকে বলেছেন, একটি সরকারি স্কুল থেকে পাশ করা ছেলে তার স্কুল জীবন শেষ করার পরও ইংরেজিতে একটি মেইল করতে পারে না৷ যা বেসরকারি স্কুলের একটি দ্বিতীয় শ্রেণীর বাচ্চার জন্যই খুব সহজ ব্যাপার৷

মাত্রাতিরিক্ত খরচের কারণে দরিদ্র দেশ নেপালের সকল অধিবাসীর পক্ষে বেসরকারি স্কুলগুলোতে তাদের বাচ্চাদের পড়ানো সম্ভব নয় বলে জানান উত্তম৷ ফলে নেপালে শিক্ষাব্যবস্থা দুই শ্রেণীর মানুষ তৈরি করছে ৷ যা দেশটির উন্নয়নের পথে একটি বড় বাধা বলেও মনে করেন এই উদ্যোগী তরুণ৷

উত্তম সানজেল তার প্রথম স্কুল গড়ে তোলেন কাটমান্ডুর প্রত্যন্ত এলাকায়৷ তখনছাত্র সংখ্যা ছিল ১০০৷

কিন্তু এখন ঐ স্কুল কম খরচেআধুনিক শিক্ষা দিয়েছে এমন মানুষের সংখ্যা ৩৫ হাজার৷ উত্তম তার এই মহৎ কাজের জন্য পেয়েছেন রাষ্ট্রীয় পুরস্কার৷ তিনি বার্তা সংস্থাকে বলেন, অনেক কঠিন সময় গেছে তার জীবনে৷ যখন তিনি নানা প্রতিবন্ধকাতার শিকার হয়েছেন স্কুল পরিচালনা করতে গিয়ে৷ কিন্তু তিনি পিছপা হননি৷ কারণ তিনি জানতেন, নিষ্ঠার সঙ্গে কোন কাজ করলে সেখানে সাফল্য আসবেই৷

প্রতিবেদক: ঝুমুর বারী

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক